বিএনপির চেয়ে বেশি সংস্কার কোনো রাজনৈতিক দল করেছে, প্রশ্ন নজরুল ইসলাম খানের
Published: 17th, April 2025 GMT
বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে নয় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির আলোচনার শুরুতে তিনি এ কথা বলেন। পরে সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা সকাল ১১টায় দিকে জাতীয় সংসদের এলডি হলে শুরু হয়।
সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সংস্কার হতেই হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক বদলায়, বদলাবেই। আমরা কালকেও প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, বিএনপির চেয়ে বেশি সংস্কার বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল করেছে? রাজনৈতিকভাবে যদি বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা তো বিএনপি করেছে। বহু দলীয় গণতন্ত্র তো বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছে। কাজেই বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে না, বিএনপি সংস্কারেই দল।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘তারা যখন সংস্কারের দন্তস্য উচ্চারণ করেন নাই, তখন তো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ দিয়েছেন। আরও বহুজন যখন সংস্কারের কথা ভাবে নাই, তখন তো শহীদ জিয়া (সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান) ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন। আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনরত সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলেন। এর চেয়ে ভালো প্রস্তাব কারও থাকলে সেটা আমরা গ্রহণ করব। এই যে সংস্কার কমিশনের কাজ, এটাকে আমরা ওই দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়েছি।’
বিএনপির এ স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘যদি ঐকমত্য কমিশনের কোনো সনদ নেওয়া হয়, বিএনপির জন্য সনদ তো আছে, সংস্কারের সনদ। কাজেই আমরা এর পক্ষে। আমরা তো শুধু একটা কথা বলব, সবকিছুর মূলে জনগণ- জনগণের সম্মতিতে যেন সব হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যে প্রস্তাবগুলো এরমধ্যে করা হয়েছে, সদিচ্ছা নিয়েই সব প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা ভালো চাই, আরও ভালো চাই। কিন্তু খুব ভালো করার জন্য এতো সময় যেন না নেই, যাতে মানুষের পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা স্তিমিত হয়ে যায়।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সামনে আরেকবার আরেকটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগটা আমরা কাজে লাগাতে চাই। আমরা এই কমিশন ও সরকারকে সহযোগিতা করছি, সেই প্রত্যাশা নিয়েই। কারণ আর কত? আর কতবার আমরা লড়াই করব, বিজয়ী হব এবং আমাদের সেই লড়াইয়ের ফসলটি কেড়ে নেওয়া হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ নজর ল ইসল ম র জন ত ক ব এনপ র
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
সাফল্যের সঙ্গে সব সক্রিয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লাগাতার বৈঠকের মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি ও বাস্তবায়নের রূপরেখা নির্ধারণ করায় জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বাসস লিখেছে, বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি, যার মেয়াদ শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়া সম্ভব
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদ আমাদের ঐতিহাসিক অর্জন। এই সনদ আমাদের জাতির এক মূল্যবান দলিল, যা আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে কেবল সুগমই করবে না, জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সুসংহত করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, “জনগণ প্রত্যাশায় আছে জাতীয় জীবনে এমন কিছু পরিবর্তন দেখার জন্য, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাবে; এমন কিছু পরিবর্তন যা এদেশে আর কখনো কোনো স্বৈরাচারের আগমন ঘটতে দেবে না, এমন কিছু পরিবর্তন যা আমাদের জাতীয় জীবনে সামগ্রিক উন্নয়ন ঘটাবে, সবার নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করবে।”
“সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে, আমরা নিজেরাই এই সংস্কার প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করেছি, একমত হয়েছি। বাইরের কেউ আমাদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়নি,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
‘অতীতে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে যে সমস্ত রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমরা বিদেশিদের আসতে দেখেছি’ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বন্ধু রাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে যে, আমাদের নিজেদের সংকট নিজেদেরই সমাধান করতে হবে।”
“এই কারণেই সকল রাজনৈতিক দল এক কাতারে এসেছে, রাজনৈতিক বিতর্কে অংশ নিয়েছে এবং আমাদেরকে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে আমরা নিজেরাই বিশ্ববাসীর দরবারে আমাদের জাতীয় ঐক্যকে তুলে ধরেছি,” বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক দলের নেতারা যারা এই সনদ তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাদের সকলকে আমি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”
এই জুলাই সনদ সারা বিশ্বের জন্যই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবীর আর কোথাও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটা পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ঘটনা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও সংকটকালীন সময়ে দেশগঠনের পদক্ষেপ হিসেবে ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের কথা বিবেচনা করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ যারা মাসের পর মাস এই দীর্ঘ আলোচনার সঙ্গে থেকেছেন, ঐকমত্য কমিশনের সকল কার্যকলাপ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দিয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে, যে অভূতপূর্ব ঐক্য আমাদের মাঝে রয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে এই জাতীয় ঐক্য আমাদের ধরে রাখতেই হবে। কারণ ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী এ জাতিকে বিভক্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে। গত ১৫ মাস আমরা তাদের নানা ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করেছি। ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হলে, এই দেশকে বাঁচাতে হলে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নাই।”
‘দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে’ বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কোনো একক ব্যক্তি, একক সংগঠন, একক সংস্থা অথবা একক সরকার দিয়ে সম্ভব হবে না; এজন্য সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মধ্যে একতা থাকতে হবে, যত প্রতিকূলতাই আসুক না কেন ঐক্য ধরে রাখতে হবে।”
ঢাকা/রাসেল