তিন শর্তে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে চায় হামাস
Published: 18th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে হামাস। তারা বরং পাল্টা একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরায়েল যদি গাজায় না যুদ্ধ করে ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তি দেয়, তাহলে গাজায় বন্দী জিম্মিদের ফেরত দেবে তারা। হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তার নাম খলিল আল–হায়া। তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। টেলিভিশনের সম্প্রচার করা বক্তব্যে আল–হায়া বলেন, ইসরায়েল যে অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে, তার সঙ্গে একমত নয় হামাস। কারণ, গত মাসে গাজায় নতুন করে যে ভয়াবহ হামলা শুরু হয়েছে, এই চুক্তির মাধ্যমে তা থামানোর প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত করবে ইসরায়েল।
নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকার আংশিক চুক্তিকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন হামাসের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘ওই চুক্তির ভিত্তিই হলো (ফিলিস্তিনিদের) ধ্বংস ও অনাহারে রাখার মাধ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। এমনকি সব জিম্মির জীবনের বিনিময়ে হলেও তারা তা করতে চায়।’
ইসরায়েল সরকারের হিসাবে, গাজায় এখনো ৫৯ জন জিম্মি হামাসের হাতে বন্দী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৪ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। খলিল আল-হায়া বলেন, যুদ্ধ বন্ধ, ফিলিস্তিনি কারাবন্দীদের মুক্তি এবং গাজা পুনর্গঠন—এই তিন শর্ত বাস্তবায়নের বিনিময়ে হামাসের হাতে বন্দী থাকা বাকি সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে ‘বড় পরিসরে আলোচনার’ জন্য প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা।
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। পরে ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এই সময়ে মধ্যে ৩৮ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। উপত্যকাটিতে আবার যুদ্ধবিরতির জন্য মিসরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে সেই আলোচনায় এখন পর্যন্ত সামান্যই অগ্রগতি দেখা গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জেমস হেউইট। তিনি বলেছেন, ‘হামাসের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, তারা শান্তির প্রতি আগ্রহী নয়, বরং চিরস্থায়ী সহিংসতা চাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যে শর্তগুলো দিয়েছে, তাতে কোনো বদল আসেনি—জিম্মিদের মুক্তি দিন, না হয় নরকের মুখে পড়ুন।’
এদিকে যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আলোচনার মধ্যেও গাজায় চরম নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার গাজায় প্রায় ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে তারা। এদিন উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩২ জন। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ১৮ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৫১ হাজার ৬৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এটিএম বুথে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ, নিরাপত্তাকর্মী পলাতক
গাজীপুরের শ্রীপুরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে বেসরকারি একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে এক কিশোরীকে (১৪) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর থেকে ওই বুথের নিরাপত্তাকর্মী পলাতক।
আজ রোববার বিকেলে ওই কিশোরীর বাবা শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার মুলাইদ গ্রামের একটি কারখানার পাশের এটিএম বুথের ভেতর এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত মো. লিটন মিয়া শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামের আতাবুদ্দিন মুসার বাড়ির ভাড়াটিয়া। তাঁর গ্রামের বাড়ির ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দায়। সে মা–বাবার সঙ্গে শ্রীপুরের একটি গ্রামে ভাড়া বাড়িতে থাকে।
কিশোরীর বাবা প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, তিনি টাকা তোলার জন্য ওই এটিএম বুথে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। একপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মী মো. লিটনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁর মেয়ে একটি স্পিনিং কারখানায় স্বল্প বেতনের চাকরি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে লিটন অন্য কারখানায় ভালো বেতনের চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। আশ্বাস পেয়ে রোববার তিনি তাঁর মেয়েকে নিয়ে ওই বুথে যান।
ওই কিশোরীর বাবা আরও বলেন, বুথে যাওয়ার পর লিটন মিয়া তাঁর মেয়েকে বুথের ভেতরে থাকা ছোট্ট একটি কক্ষে নিয়ে বসান। অন্য একটি কারখানার এক কর্মকর্তা কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আসবেন বলে অপেক্ষা করিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে লিটন মিয়া ওই কিশোরীকে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন এবং তাঁর বাবাকে বাড়িতে চলে যেতে বলেন। কিশোরীর বাবা সেখান থেকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর খবর নিতে এসে দেখেন তাঁর মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বুথের ভেতর থেকে বের হচ্ছে। পরে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে গেলে ধর্ষণের বিষয়টি তার মাকে জানায়।
পলাতক থাকায় এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. লিটন মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহম্মদ আবদুল বারিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নিরাপত্তাকর্মী পলাতক আছেন। তাঁকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।’