অভিবাসনবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে শত শত বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন এমনটা করা হয়েছে, তা অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই জানা নেই। এ অবস্থায় যেসব শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেতে চান, তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শ আছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ ৭৯ হাজার এফ-১ (F1 ভিসা হলো যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া স্টুডেন্ট ভিসা, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পূর্ণকালীন শিক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেয়) শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৭৯ লাখ (৪১%) আবেদনই বাতিল হয়েছিল। গত এক দশকে এ হার সর্বোচ্চ। একই সময়ে এ বছরের মার্চ (২০২৫) থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কমপক্ষে ১ হাজার ২৪ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা হঠাৎ বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি।

আরও পড়ুনফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম, আইইএলটিএসে ৭ স্কোরে বৃত্তির আবেদন১৭ এপ্রিল ২০২৫

কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি

USCIS–United States Citizenship and Immigration Services নামের একটি নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এটি মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (Department of Homeland Security, DHS) একটি সংস্থা। মার্কিন অভিবাসন ও নাগরিকত্ব বিভাগ অভিন্ন ‘ঝুঁকি মূল্যায়ন’প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী ভিসা আবেদনকারীর সামাজিক যোগাযোগ অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করার প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে ‘প্রতারণা ও নিরাপত্তা হুমকি’ শনাক্ত করে।

ক্যা‌ম্পাস প্রতিবাদে কঠোর পদক্ষেপ: প্রো-প্যালেস্টাইন (pro–Palestine) বা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবাধ্যতা প্রদর্শনের অভিযোগে জর্জ মেসন, জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২৫ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় আদেশের প্রভাব: একের পর এক নির্বাহী আদেশে ‘অ্যান্টি-সেমিটিজম’ বা ‘বিদেশবিরোধী’ বক্তব্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ফলে সামাজিক সেতুঘটনাও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচিত হচ্ছে।

আরও পড়ুনকানাডায় অভিবাসনে নতুন উদ্যোগ: বাড়তি সুযোগ ফ্রেঞ্চ ভাষা জানলেই১৬ এপ্রিল ২০২৫

১.

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেতে চাইলে আপনাকে যা করতে হবে

মনে রাখবেন, তাঁরা আপনার অনলাইন কার্যক্রম, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলও খতিয়ে দেখছে। তাই সতর্ক না হলে ছোট্ট একটি পোস্টও আপনার ভিসা বাতিলের কারণ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের চোখে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় উগ্রতা প্রকাশ না করা-

কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য বা ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য পোস্ট বা শেয়ার করাও বিপজ্জনক হতে পারে।

ইসরায়েলবিরোধী বা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্য পরিহার-

বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে ইসরায়েল–সম্পর্কিত কোনো বিরূপ মন্তব্য, পোস্ট বা শেয়ার ট্র্যাভেল ব্যান বা ভিসা বাতিলের কারণ হতে পারে।

২. ভুয়া তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকুন

ফেক লোকেশন, মিথ্যা পরিচয় বা বিদেশভ্রমণের ভুল তথ্য প্রদান সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপরীত ফলাফল বয়ে আনতে পারে। অভিবাসনবিরোধী বা সরকারের সমালোচনামূলক মিম, ভিডিও বা বক্তব্য শেয়ার থেকে বিরত থাকুন।

আরও পড়ুননিউজিল্যান্ডের ‘টঙ্গারেওয়া স্কলারশিপ’, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সুযোগ৪ ঘণ্টা আগে

৩. ডকুমেন্টেশন ও তথ্যের নির্ভুলতা নিশ্চিত করুন-

সব কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত ও হালনাগাদ রাখুন। যেমন I-20 ফর্ম, SEVIS ফি পরিশোধের রসিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিতকরণ প্রমাণপত্র ইত্যাদি।

ফেক বা অনুমোদনবিহীন বিশ্ববিদ্যালয় এড়িয়ে চলুন-

অতীতে কিছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভুয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন, যে কারণে এখন অনেক ইউনিভার্সিটি ও জাতীয়তাকেই সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।

যাত্রার সময় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত থাকুন-

ইমিগ্রেশন অফিসার যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন—আপনার কোর্স, ফান্ডিং, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি। উত্তর যেন সঠিক ও স্পষ্ট হয়।

৪. আচরণ ও যোগাযোগে নম্রতা বজায় রাখুন

ইমিগ্রেশন অফিসারের সঙ্গে ভদ্রতা ও ধৈর্য বজায় রাখুন। অনেক সময় তল্লাশি বা জিজ্ঞাসাবাদ হতাশাজনক হতে পারে, কিন্তু সেই সময় ধৈর্য হারালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

আত্মবিশ্বাস ধরে রাখুন-

স্নায়ুচাপ মুক্ত থেকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলা অত্যন্ত জরুরি। আপনি যদি নিজের কথায় বিভ্রান্ত হন বা অসংলগ্ন আচরণ করেন, তবে সেটি সন্দেহের জন্ম দিতে পারে।

৫. বিকল্প দেশ বা বিকল্প পরিকল্পনা কী হতে পারে-

বিকল্প দেশগুলোর কথাও চিন্তা করে রাখতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য উচ্চশিক্ষার জন্য ভাবনায় রাখা যেতে পারে।

শেষ কথা

মনে রাখতে হবে, গত কয়েক মাস আগেও যুক্তরাষ্ট্র যে নীতিতে চলত, এখন সেই নীতি সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে ফেলেছে। অতএব যা–ই করবেন না কেন, বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে করতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অভিবাসন ও আন্তর্জাতিক নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ আরও কঠিন হয়ে উঠছে। তবে সচেতনতা, সতর্কতা ও বিকল্প পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এই পরিস্থিতির মধ্যেও নিজেদের পথ খুঁজে নিতে পারে। হতাশ না হয়ে আগামীর জন্য প্রস্তুত থাকাটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত র জন ত ক র জন য প রস ত ব কল প

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ