রাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা আকরাম আলীকে হত্যার মূল হোতা মো. নান্টু ও তার সহযোগী খোকন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত শুক্রবার রাতে নওগাঁ সদর এলাকার রামরায়পুর আড়ারাপাড়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ পারভেজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। 

এর আগে শুক্রবার বিকেলে মো.

রুমেল নামে নান্টুর আরেক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ নিয়ে আকরাম আলী হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।

র‌্যাব অধিনায়ক জানান, গত বুধবার নগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় নান্টু ও তার সহযোগীরা মিলে এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিয়া আলফির বাবা আকরাম হোসেনকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে তিনি মারা যান। ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার বোয়ালিয়া থানায় নান্টু ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের পরিবার। মামলার পর থেকে র‌্যাবের একটি আভিযানিক দল আসামিদের গ্রেপ্তারে মাঠে অভিযান শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার রাতে নান্টু ও খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর থেকে নান্টু ও খোকন নওগাঁ পালিয়ে যায়। সেখানে রামরায়পুর আড়ারাপাড়া এলাকায় তারা একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে লুকিয়ে ছিল।

মাসুদ পারভেজ আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তারদের বোয়ালিয়া মডেল থানার মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে। 

নিহত আকরাম আলী (৫২) পেশায় বাসচালক ছিলেন। তিনি তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় থাকতেন। তাঁর মেয়ে রাকিয়া আলফি নগরীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী। নান্টু দীর্ঘদিন ধরে আলফিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। গত বুধবার বিকেলে আলফি কোচিং শেষে বাসায় ফেরার পথে নান্টু আবার তাকে উত্ত্যক্ত করে। বাসায় ফিরে আলফি বিষয়টি বাবাকে জানালে তিনি নান্টুর বাসায় অভিযোগ দেন। পরে রাতে নান্টু ও তার সহযোগীরা রড, লাঠি, লাকড়ি, ইট দিয়ে পিটিয়ে আলফির চাচা ইমান হাসানকে পিটিয়ে আহত করে। ভাইকে বাঁচাতে আকরাম আলী এগিয়ে এলে তাঁকেও মারধর এবং মাথার পেছনে ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইভট জ হত য র য ব র অভ য ন গ র প ত র কর সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ