পাকিস্তান সরকার গত ১ এপ্রিল থেকে ৮৫ হাজারের বেশি আফগান নাগরিককে পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করেছে। পাকিস্তান সরকারের নেওয়া এই ‘একতরফ’ জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ।

রোববার (২০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য নিউজ আরব।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান আবাসিক অনুমতি বাতিল করেছে- এমন ৮ লাখেরও বেশি আফগানকে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বহিষ্কার করার জন্য কঠোর অভিযান শুরু করেছে। এর মধ্যে কেউ কেউ পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেছেন বা কয়েক দশক ধরে বসবাস করছেন।

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানে কেএফসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিহত ১

বিবিসির প্রতিবেদন
ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে

আফগান নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর মধ্যেই শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক দিনের সফরে কাবুলে যান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিসহ তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। 

বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধীরে ধীরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আফগানিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা করার পরিবর্তে, পাকিস্তানের একতরফা পদক্ষেপ সমস্যাটিকে তীব্রতর করছে এবং সমাধানের দিকে অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করা একটি বিবৃতি অনুসারে, তিনি পাকিস্তান সরকারকে ‘আফগান শরণার্থীদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন সহজতর করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে, এ প্রসঙ্গে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মুখপাত্র জিয়া আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি ‘পাকিস্তানে আফগান শরণার্থীদের পরিস্থিতি এবং জোরপূর্বক বহিষ্কারের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ এবং হতাশা প্রকাশ করেছেন।”

তিনি জানান, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার তালেবান কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, আফগানদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার করা হবে না’।

‘কোনো ছাড় দেওয়া হবে না’

ইসলামাবাদ জানিয়েছে, প্রায় ৮৫ হাজার আফগান নাগরিককে ইতিমধ্যে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

পাকিস্তানে বসবাসকারী আফগান শরণার্থীদের মধ্যে যাদের শরণার্থী সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি নেই, তাদেরকে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তান ত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছে দেশটির সরকার।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) পাকিস্তানের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাল্লাল চৌধুরী এক ঘোষণায় বলেছেন, “সময়সীমায় কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না এবং সময়সীমা বাড়ানো হবে না।”

তিনি অবৈধভাবে বসবাসরত আফগানদের সতর্ক করে বলেন, “আপনি যদি কোনো কাগজপত্র ছাড়া আসেন, তবে সেটি শুধু সন্দেহই বাড়ায়—আপনি মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত কি না, সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছেন কি না বা অন্য কোনো অপরাধ করছেন কি না।” 

নিউ আরবের প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ফিরে আসার পর পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হামলা বেড়ে যাওয়ায় দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্ক আরো খারাপ হয়েছে।

গত বছরটি পাকিস্তানে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ছিল। ইসলামাবাদ কাবুলকে দায়ী করে বলেছে, সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকেই হামলার পরিকল্পনা করছে। যদিও তালেবান সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

দ্বিতীয় ধাপের বহিষ্কার

শুক্রবার পাকিস্তানের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাল্লাল চৌধুরী জানিয়েছেন, তার সরকার এপ্রিলের শুরু থেকে প্রায় ৮৫ হাজার আফগান নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই অনিবন্ধিত।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, ফেরত যাওয়া এই আফগানদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু—যাদের এমন এক দেশে প্রবেশ করতে হচ্ছে, যেখানে মেয়েরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং বহু খাতে নারীদের কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) আফগান শরণার্থী মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এএফপিকে জানান, ১ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান সীমান্তের দুটি প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে প্রায় ৭১ হাজার আফগান প্রত্যাবর্তনকারীকে তালেবান কর্তৃপক্ষ নথিভুক্ত করেছে।

২০২৩ সালে প্রত্যাবর্তনের প্রথম পর্যায়ে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কয়েক লাখ অবৈধ আফগানকে পাকিস্তান ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।

মার্চ মাসে ঘোষিত দ্বিতীয় পর্যায়ে, পাকিস্তান সরকার ৮ লাখেরও বেশি আফগানের আবাসিক পারমিট বাতিল করে এবং এপ্রিলের মধ্যে তাদেরকে পাকিস্তান ছেড়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে।

আফগানদের বহিষ্কারের পদক্ষেপকে পাকিস্তানিরা ব্যাপকভাবে সমর্থন করে।

শুক্রবার রাওয়ালপিন্ডির এক বাসিন্দা আহমেদ ওয়ালিদ এএফপিকে বলেন, “তারা (আফগানরা) আমাদের দেশের প্রতি সম্পূর্ণ অসম্মানজনক। তারা আমাদের ওপর হামলায় মদদ দিচ্ছে, তারা আমাদের ব্যবহার করছে। যদি তারা পাকিস্তানকে সম্মান না করে তাহলে তাদের কেউ এদেশে থাকতে পারবে না।”

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আফগ ন স ত ন স ত ন র পরর ষ ট র পরর ষ ট রমন ত র প ক স ত ন সরক র আফগ ন স ত ন র শরণ র থ দ র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ