ছাদ উড়ে যাওয়া সেই বাসের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত
Published: 20th, April 2025 GMT
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় একাধিক সংঘর্ষে ছাদ উড়ে যাওয়ার পরও কয়েক কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সেই যাত্রীবাহী বাসের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
গত শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রেজিস্ট্রেশন স্থগীত করে বাস মালিককে গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) একটি নোটিশ দিয়েছে বিআরটিএ। যেখানে রেজিস্ট্রেশন স্থায়ীভাবে বাতিল না করার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।
বিআরটিএ’র ঢাকা মেট্রো-২ সার্কেল (একুরিয়া) এর উপপরিচালক (প্রকৌশল) মো.
নোটিশে বলা হয়, দ্রুতগতির বাসটি এক্সপ্রেসওয়ের কামারখোলা রেল ফ্লাইওভারে একটি প্রাইভেট কারে ধাক্কা দেয়। পরে একটি কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায়। এতে বাসটির সামনের অংশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পেছনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে চালক আতঙ্কিত হয়ে বেপরোয়া গতিতে বাস চালাতে থাকে। এরপর বাসটি সমসপুর এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের রেলিংয়ে ধাক্কা দেয়, ফলে বাসটির পুরো ছাদ উড়ে যায়। এত বড় দুর্ঘটনার পরও চালক বাসটি চালাতে থাকে। এতে বাসে থাকা ৬০ জন যাত্রীর মধ্যে ৮ জন আহত হন।
বিআরটিএ মালিককে বাসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ঢাকার কার্যালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষে যাত্রীবাহী বাসের ছাদ উড়ে যাওয়া আলোচিত যাত্রীবাহী বাসটির গন্তব্য ছিল বরগুনার পাথরঘাটায়। ছাদ উড়ে যাওয়ার পর বেপরোয়া গতির বাসটি প্রায় ছয় কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সেই বাসটির চালকের নাম শহিদুল ইসলাম।
বরিশাল বাসমালিক গ্রুপের কার্যালয়ে খবর নিয়ে জানা গেছে, এই বাস কোম্পানির কোনো কাউন্টার সেখানে নেই। এই কোম্পানির পাঁচটি বাস ঢাকা থেকে বরিশাল, ঝালকাঠি হয়ে বরগুনার পাথরঘাটায় চলাচল করে।
দুর্ঘটনায় ছাদ উড়ে যাওয়ার পরেও বাসটি কেনো প্রায় ৬ কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে গেলেন চালক? এর মূল কারণ কী? এমন প্রশ্নে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম সম্পাদক মো. জগলুল ফারুক বলেন, “বাসটির ব্রেকের পাইপ ফেটে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন চালক। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাসটি ছয় কিলোমিটার চালিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি। আর এতে ৮ যাত্রী আহত হলেও বাকি যাত্রীরা সবাই অক্ষত অবস্থায় আছেন।”
তবে বেশ কয়েকজন বাস চালক এমন কথার যুক্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা-বরিশাল পথে চলাচলকারী চালকরা বলেন, ব্রেক ফেল হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত নিশ্চিত। কিন্তু এখানে তা হয়নি। মূলত চালক ভয়ের কারণে এতটা পথ বেপরোয়াভাবে চালিয়ে এসেছেন। কারণ, বাসটির পেছনে সেনাবাহিনীর গাড়ি ছিল এবং হাইওয়ে পুলিশ ছিল কাছাকাছি।
ঢাকার সায়েদাবাদে বাসটির টিকিট কাউন্টারে ওই দিন দায়িত্বে ছিলেন মো. সাইফুল। তিনি বলেন, “আমরা যাত্রীদের নাম ও মুঠোফোন নম্বর টিকিটে লিখে দেই। কোনো খাতায় তা লিবিবদ্ধ করি না।”
পাথরঘাটায় বাসটির টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান বলেন, “বাসটি ঢাকা থেকে ছেড়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটায় পাথরঘাটায় পৌঁছানোর কথা। কিন্তু পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তবে আমার কাছে ওই বাসে থাকা যাত্রীদের কোনো নাম, মুঠোফোন নম্বর নেই। আমরা এসব বিবরণী রাখি না।”
বিভিন্ন চেষ্টার পর গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) চালক শহিদুলকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়। কেন বাসটি এতটা পথ তিনি বেপরোয়াভাবে চালিয়ে নিয়ে গেলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওই অবস্থায় গাড়ি থামানোর কোনো পরিস্থিতি ছিল না। এরকম পরিস্থিতিতে অনেকটা হতভম্ব হয়ে পড়ি। ভেতরে আতঙ্ক কাজ করছিল। এর আগে আমি কখনো এমন অবস্থার মুখোমুখি হইনি। কীভাবে কী করেছি, বলতে পারব না।”
দুর্ঘটনা কীভাবে হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এক্সপ্রেসওয়েতে উল্টো পথ (রং সাইড) দিয়ে হঠাৎ একটি প্রাইভেটকার এসে পড়ে। সেটাকে সাইড দিতে গিয়ে কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে প্রায় ৬০ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে বাসটি ছাড়ে। ঘণ্টাখানেক পর বাসটি ঢাকা–মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে। বাসটি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের কামারখোলা সেতুতে উঠলে একটি কাভার্ড ভ্যানের পেছনে সজোরে ধাক্কা লাগে। সে সময়ই বাসের ছাদ সামনে থেকে ভেঙে পেছনে গিয়ে আটকে থাকে। চালক বাসটি না থামিয়ে আরও দ্রুতগতিতে চালাতে থাকেন। পরে বাসটি ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে সমষপুরে গেলে ছাদটি উড়ে পড়ে যায়। এসময় একটি প্রাইভেট কারকেও ধাক্কা দেয় বাসটি।
যাত্রীসহ ছাদবিহীন বাস চালিয়ে যেতে থাকেন চালক। সমষপুর অতিক্রম করে আরও একটি প্রাইভেট কারকে ধাক্কা দেয় বাসটি।
ঢাকা/রতন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প থরঘ ট য় ব আরট এ দ র ঘটন বর শ ল স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার তীব্র সমালোচনা
‘আমার সোনার বাংলা...’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। রাজ্যের এক সিনিয়র কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এই মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছেন রবীন্দ্রপ্রেমীরা। রবিবার আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা।
গত সোমবার আসামের শ্রীভূমি জেলার ইন্দিরা ভবনে কংগ্রেস সেবা দলের বৈঠকের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি গেয়েছিলেন বিধুভূষণ দাস নামে এক সিনিয়র কংগ্রেস কর্মী। এরপরই বিতর্ক ছড়ায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বিভিন্ন সময় গেয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র, মান্না দে, শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, নচিকেতাসহ আরো অনেক প্রথিতযশা শিল্পীরা। কিন্তু সেই গান নিয়েই এত বিতর্ক মেনে নিতে পারছেন না শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, শিক্ষার্থী থেকে বিদ্বজনেরা।
রাজ্যটির বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে সিনিয়র আশ্রমিকেরা বলছেন এ তো একেবারে ‘হাস্যকর’! রবি ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের প্রশ্ন ‘আমরাও কি তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহী?’
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের ‘বঙ্গভঙ্গ’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। এর প্রতিবাদে রাখিবন্ধন করে পথে নেমেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সময় ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এই গানটিকে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসাবে গ্রহণ করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “এক্কেবারে হাস্যকর ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের গান সবার জন্যই, সবাই গেয়ে থাকেন। আমরাও এখনো গেয়ে থাকি। এটা যদি দেশদ্রোহীতা হয়, তাহলে আমরা দেশদ্রোহী। একজন মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্ত বিশ্ব শর্মা) যদি এধরনের কথা বলেন, তাকে তাহলে ‘মুখ্য’ বলা যাবে না, অন্য কিছু বলতে হবে।”
বিশ্বভারতীর পাঠভবনের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও সিনিয়র আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, “ব্যাপারটা আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর ও লঘু মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববন্দিত, তাই তার গান সব জায়গায় গাওয়া যায়। কিন্তু, একথা স্বীকার করি ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং তারা গুরুদেবের এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছেন বলে আমরা সম্মান করি। এই গান কোথাও গাওয়া যাবে না এমন বিধিনিষেধ থাকা ভালো নয়। এটা অত্যন্ত ছোট মনের পরিচয়। তাই এই ধরনের ঘটনা দেখে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন আকাশের মত মন নিয়ে বিষয়গুলি দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সবাইকে নিয়ে রাজ্য চালাতে হয়, তাই তার অনেক উদার হওয়া উচিত।”
আরেক সিনিয়র আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, “জিনিসটা খুব হাস্যকর। রবীন্দ্র সঙ্গীত যে কোনো জায়গায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে গাওয়া যায়। তার সঙ্গে দেশদ্রোহীতার সম্পর্ক খুঁজতে যাওয়া অত্যন্ত হাস্যকর। ‘আমার সোনার বাংলা’ এত সুন্দর একটি গান, যা যে-কোন উপযুক্ত পরিস্থিতিতেই গাওয়া যায়। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর যদি এইটুকু জ্ঞান না থাকে বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা না থাকে সেটা আমাদের কাছে খুব দুঃখের।”
আশ্রমিক সুলগ্না মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার সোনার বাংলা গানটি একটা জাতীয় সঙ্গীতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এটা রবীন্দ্র সঙ্গীত। আর কি বলবো, কিছু বলারই নেই।”
আসামের ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে বিশ্বভারতীর বাম ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এসএফআই)। তাদের সদস্যরাও পথে নেমে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা। এসএফআই ইউনিটের সম্পাদক বান্ধুলি কারার বলেন, “আমরা একটা বড় সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রবীন্দ্রনাথের লেখা গান গাওয়ায় আসামে একজনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। এই গানটা শুধু একটা দেশের জাতীয় সংগীত নয়। এই গানটা মাটির গান, ভালোভাসার গান, মানবতার গান, একতার গান। এই গান গাওয়ায় যারা রাষ্ট্রদ্রোহী বলছেন, আসলে তারা মানবতাবিরোধী। রবীন্দ্রনাথের গান, তার লেখা, তার মুক্ত চিন্তা এগুলো বাঙালির চেতনার একটা অংশ। রবীন্দ্রনাথকে যদি অপমান করা হয় তার অর্থ বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতির অপমান করা। রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নন, তিনি আমাদের বাংলার গর্ব, ভারতের গর্ব। যারা বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।”
সুচরিতা/শাহেদ