সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা
Published: 21st, April 2025 GMT
সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে দ্রুত হাসপাতালের কার্যক্রম চালু, প্রয়োজনীয় ক্লিনিক্যাল ক্লাস নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ সোমবার সকালে কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। আগে শুধু ক্লাস বর্জন করলেও আজ থেকে তাঁরা অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ সকালে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। গতকাল রোববার সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে লাঠিপেটার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীরা গতকালের ঘটনায় যুক্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। পরে তাঁরা প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা দেন।
পিয়াস চন্দ্র দাস নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। ১৫ এপ্রিল থেকে আমাদের কর্মসূচি চল়ছে। শিক্ষা অধিদপ্তরে আমরা কথা বলেছি, কিন্তু সন্তোষজনক জবাব পাইনি। শুধু আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।’
আরেক শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল আমাদের কর্মসূচি চলাকালে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসেন। তখন আমরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পাঁচ মিনিট সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা সেই সময়টুকু আমাদের দেননি। বেধড়ক লাঠিপেটা করে সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। আমাদের অনেকে আহত হয়েছেন। সেনাসদস্যরা আমাদের ক্যাম্পাসের ভেতরেও চলে আসেন। এই আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।’
ওই দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গতকাল সকালে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ চেষ্টা করেও সড়ক থেকে তাঁদের সরাতে পারেনি। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে বেলা সাড়ে ১১টার সময় তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করার অভিযোগ উঠে। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
২০২১ সালে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২০২৩ সালে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়। ২০২৪ সালে ক্যাম্পাসে ৫০০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও এখনো হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়নি।
আরও পড়ুনচার ঘণ্টা পর সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করলেন সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা১৬ এপ্রিল ২০২৫সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার মদনপুর এলাকায় সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল অবস্থিত। বর্তমানে কলেজের ৫টি ব্যাচে ২৮০ জন শিক্ষার্থী আছেন। কলেজে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংকট রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ কল জ র আম দ র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ