যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি না করার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশকে সতর্ক করেছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, দেশগুলো যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন কোনো বাণিজ্য চুক্তি না করে, যাতে চীনের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

চীন হুঁশিয়ারি দিয়ে আরো বলেছে, কোনো দেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের স্বার্থবিরোধী চুক্তি সই করে, তাহলে সেই দেশের বিরুদ্ধে চীন শক্ত অবস্থান নেবে এবং পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সোমবার  (২১ এপ্রিল) বিবিসির এক প্রতিবেদনের বলা হয়, মার্কিন শুল্ক ছাড়ের বিনিময়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে চাপ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে- ব্লুমবার্গের এমন একটি প্রতিবেদন সামনে আসার পর চীন এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

আরো পড়ুন:

যুদ্ধের গোপন তথ্য পরিবারকে বলে ফের আলোচনায় মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ইয়েমেনে মার্কিন হামলায় নিহত ১২, আহত ৩০

ট্রাম্প প্রশাসন গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরে আসা জাপানি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাণিজ্যিক আলোচনা করেছে এবং এই সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়া আলোচনা শুরু করতে চলেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে চীনা পণ্য আমদানির উপর ব্যাপক কর আরোপ করেছেন, অন্যদিকে অন্যান্য দেশগুলোও তাদের পণ্যের উপর মার্কিন শুল্ক আরোপের শিকার হয়েছে।

নতুন আরোপিত মার্কিন কর থেকে রেহাই পেতে দেশগুলো যুুক্তরাষ্ট্রকে ‘তুষ্ট’ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। 

দেশগুলোকে সতর্ক করে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “তুষ্টি শান্তি আনতে পারে না এবং আপস কাউকে সম্মান দিতে পারে না।”

মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “চীনের স্বার্থের বিনিময়ে যে কোনো পক্ষের চুক্তিতে পৌঁছানোর দৃঢ় বিরোধিতা করে চীন। যদি এটি ঘটে, তাহলে চীন কখনই তা মেনে নেবে না এবং দৃঢ়ভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।”

গত সপ্তাহে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত চায়না ডেইলির একটি সম্পাদকীয়তে একই ধরনের মন্তব্য করা হয়েছিল, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘তুষ্ট’ করার চেষ্টা করার বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছিল।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, পারস্পরিক শুল্ক ঘোষণার পর থেকে ৭০টিরও বেশি দেশ আলোচনা শুরু করার জন্য যোগাযোগ করেছে।

জাপানের অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম অপারেটর মোনেক্স গ্রুপের জেসপার কোল বলেন, “যদি আপনি সংখ্যাগুলো ধরেন, তাহলে জাপানের লাভের প্রায় ২০% আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, প্রায় ১৫% আসে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন থেকে। তাই অবশ্যই, জাপান আমেরিকা এবং চীনের মধ্যে একটি বেছে নিতে চায় না।”

জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। দেশটির শীর্ষ শুল্ক বিশেষজ্ঞ রিওসেই আকাজাওয়া গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু বলেছেন, তার দেশ এই সপ্তাহের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করবে।

এদিকে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স চার দিনের সফরে আজ ভারতে পৌঁছেছন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে একমত হতে না পারলে ভারত ২৬ শতাংশ মার্কিন শুল্কের মুখোমুখি হবে।

ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঝড় তুলেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবি, আমদানি কর মার্কিন ভোক্তাদের আরো বেশি আমেরিকান তৈরি পণ্য কিনতে উৎসাহিত করবে, শুল্ক থেকে আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বড় বিনিয়োগের দিকে পরিচালিত করবে।

কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ফিরিয়ে আনা জটিল এবং কয়েক দশক সময় লাগতে পারে। আর এর মধ্যে দেশটির অর্থনীতি লড়াইয়ের মুখে পড়বে।

ট্রাম্প তার অনেক ঘোষণা থেকে পিছিয়েও এসেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন বাণিজ্য অংশীদারের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের কয়েক ঘণ্টা পরে, রাজনীতিবিদ এবং বাজারের ক্রমবর্ধমান বিরোধিতার মুখে চীন ছাড়া সব দেশের উপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন।

ট্রাম্প চীন থেকে পণ্য আমদানির উপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন। অন্যান্য দেশগুলো আগামী জুলাই পর্যন্ত ১০ শতাংশ মার্কিন শুল্কের মুখোমুখি হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসন গত সপ্তাহে বলেছিল, নতুন শুল্ক যখন বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে যুক্ত করা হবে, তখন কিছু চীনা পণ্যের উপর শুল্ক ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

চীন মার্কিন পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে পাল্টা জবাব দিয়েছে এবং ‘শেষ পর্যন্ত লড়াই’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র শ ল ক আর প র মন ত র র উপর

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের

ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে  বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ