ইডেন গার্ডেনে কোনো ম্যাচেই হার্শা ভোগলে ও সাইমন ডুলকে যেন ধারাভাষ্য দিতে না দেওয়া হয়, এ অনুরোধ জানিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে আজ বেশ কড়া ভাষায় চিঠি পাঠিয়েছে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি)। রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাটির সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম রেভস্পোর্টজ।

আরও পড়ুননতুন চুক্তিতে কত বেতন পাবেন কোহলি-রোহিতরা৪ ঘণ্টা আগে

ইডেনের কিউরেটর সুজন মুখার্জির সঙ্গে ভোগলে ও ডুলের বাদানুবাদের পর এ চিঠি পাঠিয়েছে সিএবি। সংস্থাটি মনে করে, সুজন মুখার্জি বিসিসিআইয়ের নিয়ম মেনে কোনো ভুল করেননি, যেখানে বলা হয়েছে, পিচের আচরণ কেমন হবে, সে বিষয়ে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই কিছু বলতে পারবে না। নির্দেশিকা মেনেই সুজন মুখার্জি ইডেনের পিচ তৈরি করেছেন বলে মনে করে সিএবি। নিউজিল্যান্ডের সাবেক পেসার ও ধারাভাষ্যকার ডুল এর আগে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বলেছিলেন, মুখার্জি যদি নিজের জায়গায় অনড় থাকেন, তাহলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) উচিত হবে কলকাতা শহর থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া। মানে কলকাতাকে আর হোম ভেন্যু না রাখাই উচিত হবে কেকেআরের, এমনটাই বলেছিলেন ডুল।

রেভস্পোর্টজ জানিয়েছে, বিসিসিআই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সিএবির পাঠানো চিঠির উত্তর দেয়নি। আইপিএলে আজ ইডেন গার্ডেনে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় গুজরাট টাইটানসের মুখোমুখি হবে কলকাতা নাইট রাইডার্স। রেভস্পোর্টজ জানিয়েছে, আজকের ম্যাচে ধারাভাষ্য প্যানেলে ভোগলে ও ডুলকে দেখা যাবে না।

এবারের আইপিএলে ইডেন গার্ডেনে আরও ছয়টি ম্যাচ আছে। এর মধ্যে চারটি ম্যাচ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কলকাতার, অন্য দুটি ম্যাচ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ও ফাইনাল। ফাইনাল ২৫ মে। এই ছয় ম্যাচে ইডেনে হার্শা ও ডুলকে আর ধারাভাষ্য দিতে দেখা যাবে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ এ বিষয়ে সিএবির সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পায়নি।

আরও পড়ুনসন্ধ্যায় পাশে এসে বসলেন কোহলি, রাতে সামনে চলে গেলেন রোহিত৫ ঘণ্টা আগে

ইডেনের কিউরেটরের সঙ্গে কী ঘটেছিল ভোগলে ও ডুলের:

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে কলকাতায় প্রথম ম্যাচে কেকেআরের চাওয়া অনুযায়ী সুজন মুখার্জি স্পিনবান্ধব পিচ তৈরি না করায় তাঁর ওপর মনঃক্ষুণ্ন হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিটির ম্যানেজমেন্ট। এই ম্যাচে কেকেআরের স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী ৪ ওভারে ৪৩ রান দেন।
গুয়াহাটিতে রাজস্থান রয়্যালসকে হারিয়ে কেকেআর ঘুরে দাঁড়ানোর পর এই ফ্র্যাঞ্চাইজির ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’–কে পাত্তা না দেওয়ার জন্য ইডেনের কিউরেটর সুজনের সমালোচনা করেন হার্শা।

বিসিসিআইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, আইপিএলের নিয়মিত মৌসুমের ম্যাচগুলোর মাঠ ও পিচ প্রস্তুতের দায়িত্ব আয়োজক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কিউরেটরের। সেটা হবে বিসিসিআই কর্তৃক নিয়োগ পাওয়া ভেন্যুর কিউরেটরের অধীনে। ম্যাচের পিচ ও অনুশীলনের পিচ কেমন হবে, এ বিষয়ে শুধু তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।ইডেনের কিউরেটর সুজন মুখার্জি

ক্রিকবাজের শোতে ভারতের এই জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার বলেছিলেন, ‘রাজস্থান রয়্যালস ঘরের মাঠে খেললে তাদের বোলারদের সঙ্গে মানানসই হয়, এমন পিচ পাওয়া উচিত। কেকেআরেরও তা–ই পাওয়া উচিত। কেকেআর কিউরেটর কী বলেছেন, সেটা জেনেছি। আমি কেকেআরের ক্যাম্পে থাকলে তিনি যা বলেছেন, সে জন্য প্রচণ্ড অখুশি হতাম। কারণ, আমি ১২০ রানের পিচ চাচ্ছি না। আমার চাওয়া হলো, এমন পিচ দেওয়া হোক, যেখানে আমার বোলাররা ম্যাচ জেতাতে পারে। সেখানে এটা বলা হয়েছে, “দুঃখিত, আমরা এমন পিচ বানাই না.

..।” না, আমরা ১২০ রান কিংবা ২৪০ রানের পিচ চাচ্ছি না। কিন্তু আমার মনে হয়, আইপিএলের মতো টুর্নামেন্টে ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়াটা পুরোপুরি বৈধ। এতে টুর্নামেন্ট আরও এগিয়ে যাবে। কারণ, তখন প্রতিপক্ষের মাঠে জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’

হার্শার প্যানেলে থাকা ডুল বলেন, ‘ঘরের দল যেটা চায়, সেটা তিনি (সুজন মুখার্জি) না শুনলে...আমি বোঝাচ্ছি, তারা স্টেডিয়াম ফি দিচ্ছে, আইপিএলে যা হচ্ছে সেটারও খেসারত দিতে হচ্ছে, কিন্তু ঘরের দল যেটা চায়, তিনি যদি তা পাত্তা না দেন, তাহলে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হোক। ম্যাচ নিয়ে মন্তব্য করা তাঁর কাজ নয়। সে জন্য তাঁকে পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না।’

সুজন মুখার্জি গত মাসে রেভস্পোর্টজে এই সমালোচনার উত্তর দেন। বিসিসিআইয়ের নির্দেশিকা সামনে এনে তিনি বলেন, পিচ প্রস্তুত করা নিয়ে দল ও খেলোয়াড়দের কিছু বলার সুযোগ নেই। সুজন বলেন, ‘বিসিসিআইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, আইপিএলের নিয়মিত মৌসুমের ম্যাচগুলোর মাঠ ও পিচ প্রস্তুতের দায়িত্ব আয়োজক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কিউরেটরের। সেটা হবে বিসিসিআই কর্তৃক নিয়োগ পাওয়া ভেন্যুর কিউরেটরের অধীনে। ম্যাচের পিচ ও অনুশীলনের পিচ কেমন হবে, এ বিষয়ে শুধু তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। ভারতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচে এটাই হয়। আরও বলা হয়েছে যে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলো এবং খেলোয়াড়দের পিচ প্রস্তুত করা নিয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই। পরামর্শ দেওয়ার জন্য বিসিসিআইয়ের প্রধান কিউরেটর আছেন, কোনো সমস্যা হলে তিনি হস্তক্ষেপ করবেন।’

২০১৫ সালের অক্টোবরে ইডেনে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়ার পর মাঠটির প্রধান কিউরেটরের পদ থেকে প্রবীর মুখার্জির পদত্যাগের পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন সুজন মুখার্জি। প্রবীরও হার্শা ও ডুলের মন্তব্যের সমালোচনা করেন, ‘হার্শা ভোগলে ও সুজন মুখার্জি কী বললেন, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। দর্শক এবং আমার অ্যাসোসিয়েশন পিচ নিয়ে কী বলল, সেটা আমার বিবেচনার বিষয়। ভালো ও স্পোর্টিং উইকেট তৈরির জন্য আমি বিসিসিআইয়ের কাছে দায়বদ্ধ।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব স স আইয় র ন স জন ম খ র জ ফ র য ঞ চ ইজ প চ প রস ত ত ব স স আই ক ক আর র অন য য় কলক ত

এছাড়াও পড়ুন:

প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য

প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।

ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী

২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।

আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছে

প্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।

তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ