নির্মাণের ২ বছরেই বসবাসের অনুপযোগী শেখ রাসেল হল
Published: 23rd, April 2025 GMT
টাংগাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) শেখ রাসেল হল প্রতিষ্ঠার দুই বছরেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে বসবাস করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে তারা হলটিতে থাকতে শুরু করেন। হলের বিদ্যুৎ সংযোগ, সুইচ, লাইট খুবই নিম্নমানের, প্রায়ই পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। দীর্ঘদিন যাবৎ ইন্টারনেট সমস্যায় ভুগছেন তারা। এছাড়া হলে যে খাবার পরিবেশন করা হয় তার মানও ভালো নয়। কোনো রকমে খেয়ে দিন পার করছেন তারা। এ নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানালেও মেলেনি কোনো কার্যকর সমাধান।
শিক্ষার্থীরা আরো অভিযোগ করে বলেন, হলের ওয়াশরুম, বেসিন ও গোসলখানাগুলো দীর্ঘদিন ধরে অপরিচ্ছন্ন ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। নিয়মিত এসব পরিষ্কার না করায় অস্বাস্থ্যকর হয়ে গেছে। রুমগুলোর সামনের বারান্দায় মাসের পর মাস ময়লার স্তূপ জমে থাকলেও সেগুলো পরিষ্কারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
হলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ না করেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে বেতন নিচ্ছেন নিয়মিতভাবে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করার কথা থাকলেও তার আগেই চলে যান তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হলের বিভিন্ন দেয়ালে বড় বড় ফাটল ধরেছে, দেওয়ালে রঙ চটে গেছে, ফ্লোরের টাইলসগুলোতে দাগ ও ময়লা জমে কালো হয়ে গেছে। দুর্গন্ধে যাওয়া যাচ্ছে না কিছু কিছু যায়গায়। হলে নেই গ্যাস সংযোগ, লাকড়ির মাধ্যমে কোনোমতে চলছে খাবার রান্নার কাজ। হলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ দিন দিন আরও নাজুক হয়ে পড়ছে।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরাফাত তরফদার বলেন, “শেখ রাসেল হলের যাত্রার শুরুতেই আমরা হলে উঠি। ডাইনিং চালুর সময় হলে কোনো ওয়াইফাই সংযোগ ছিল না। তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ স্যার বলেছিলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে ওয়াইফাই ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। সেটা ছিল ২০২৩ সাল এখন ২০২৫ সাল চলছে। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা হয়নি।”
তিনি বলেন, “আমরা প্রাধ্যক্ষ স্যারকে একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। যাকে হল নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সে কাজটা ভালোভাবে করেনি। আমি যখন হলে উঠি, তখন থেকেই আমার রুমের সুইচ নষ্ট ছিল। এখন দেয়ালগুলো ফাটল ধরেছে, টাইলস ভেঙে পড়েছে, জানালার গ্লাস ভেঙে গেছে, বেসিন অকেজো হয়ে গেছে। আমাদের মনে হয়, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে শেখ রাসেল হল টিকবে না।”
আরেক শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ রাহাত বলেন, “আমরা শেখ রাসেল হলের ওয়াশরুমগুলো ব্যবহার করতে পারি না। কারণ সেগুলো অত্যন্ত নোংরা ও ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বারবার হলের প্রাধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি, কিন্তু তিনি সবসময় লোকবল সংকটের কথা বলে দায় এড়াচ্ছেন। ইন্টারনেট সংযোগের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা।”
তিনি বলেন, “হলের বিভিন্ন রুমে দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে, অনেক জায়গায় বিদ্যুতের সুইচ নষ্ট, বাথরুমের টাইলস ভাঙা এবং বেসিনগুলোও অকেজো অবস্থায় রয়েছে। এতসব সমস্যার পরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না।”
নিচতলায় অবস্থানরত শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান বলেন, “শেখ রাসেল হলের বাথরুমগুলো সময়মতো পরিষ্কার করা হচ্ছে কিনা, তা হলের তত্ত্বাবধায়ক দেখভাল করে না। প্রাধ্যক্ষ স্যারকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রকার পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখি না।”
হলের মনিটরিং টিমের সদস্য রাকিবুল ইসলাম রাব্বি বলেন, “আমাদের হলের সুইপারদের ডেইলি বেসিসে টাকা দেয় ৩৫০ টাকা করে। এমনও হয়েছে, ক্যাম্পাসের বাইরে অন্য জায়গায় ডেইলি বেসিস টাকার থেকে বেশি পেলে ওইদিন আসে না। তখন আবার কাজের গ্যাপ পড়ে যাওয়ায় কাজের চাপ বাড়ে। ফলে চারজন মিলে পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না।”
তিনি বলেন, “আবার কয়েকজন সুইপার কাজের প্রতি অনিহা দেখিয়ে দিনের অর্ধেক কাজ করে চলে যায়। প্রাধ্যক্ষ স্যারের কাছে আমরা অভিযোগ দেওয়ার পর বলেছেন, এত কম টাকায় কাজ করতে কেও আগ্রহ প্রকাশ করে না।”
এসব অভিযোগের ব্যাপারে শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ ড.
তিনি বলেন, “এই হল নির্মাণ কাজে বেশকিছু সমস্যা পেয়েছি আমরা। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং কমিটি কাজও শুরু করেছে। হলের ইন্টারনেট সংযোগের ব্যাপারে ইতোমধ্যে আইসিটি সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আইসিটি সেল জানিয়েছে, সরকারি প্রজেক্ট এলে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হবে।”
তিনি আরো বলেন, “হলের ডাইনিং ও ক্লিনিং সমস্যার একটা বড় কারণ লোকবল কম। ক্লিনিংয়ে দায়িত্বরত কর্মীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলছে, আগামী ২ মাসের মধ্যে সবকিছু তারা ঠিকঠাক করবে। আশা করি, শিক্ষার্থীরা এবং হল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় শেখ রাসেল হলকে একটি উন্নত আবাসন ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।”
ঢাকা/আবিদ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ খ র স ল হল র পর ষ ক র ব যবস থ হল র ব সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি