নদী-খালের বুকে জেগে ওঠা এক মায়ার শহর খুলনা
Published: 25th, April 2025 GMT
‘ঘুরে এলাম খুলনা শহর রূপসা নদীর তীরে, রূপসা নদীর রূপের মায়া ডাকে ফিরে ফিরে, পুরোনো এই নগরী তো ইতিহাসে ভরা, যেমন তাহার গুণের বাহার রূপেতেও সে সেরা।’ খুলনা শহরকে নিয়ে এমন ছন্দে ছন্দে কবিতা লিখেছেন অবিরুদ্ধ মাহমুদ। কবিতার নাম দিয়েছেন ‘ঘুরে এলাম খুলনা’।
আসলেই খুলনা এক মায়ার শহর, সমৃদ্ধ শহর, কোলাহলমুক্ত নির্মল শ্বাস নেওয়ার শহর। যেখানে নদী গল্প বলে আর খাল গেয়ে ওঠে ইতিহাসের গান। বহুকাল আগে, যখন পদ্মা ও মেঘনার মিলিত স্রোতে দক্ষিণ বাংলার বুক চিরে বয়ে চলত রূপসা, ভৈরব আর আটরা খাল, তখন এই অঞ্চল ছিল নিবিড় বনভূমি ও জলাভূমির এক বিস্ময়কর মিশেল। ইতিহাস বলে, খুলনার গোড়াপত্তন হয়েছিল নদীপথকে ঘিরেই। স্থানীয় লোককথা, প্রত্নতত্ত্ব ও সাহিত্যিক দলিল মিলিয়ে খুলনার জন্মকথা যেন এক রূপকথারই প্রতিচ্ছবি।
‘খুলনা’ নামকরণটি নিয়েও অনেক কিংবদন্তি ও গল্প প্রচলিত আছে। অনেকের মতে, ‘খুলনা’ নামটি এসেছে ‘খুল্লতন নগর’ থেকে, যেখানে দেবতা শিবের পূজা–অর্চনা হতো। আবার কারও মতে, ‘খুল’ মানে জলপথ বা খাল, আর ‘না’ মানে নদীর প্রবাহ থামা। অর্থাৎ যেখানে খাল থেমে নদীতে মেশে, সেখান থেকেই নাম হয়েছে ‘খুলনা’।
খুলনার পুরাকীর্তি নামে একটি বই লিখেছেন মিজানুর রহমান। তিনি বর্তমানে ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, এক সওদাগরের দুই মেয়ে ছিল। এক মেয়ের নাম খুল্লনা ও আরেকজনের নাম ছিল অহনা। ধারণা করা হয়, ওই সওদাগর তাঁর মেয়ের নামানুসারে শহরের নাম রাখেন খুলনা। এ ছাড়া সপ্তদশ শতকে খুলনার ভৈরব নদ থেকে ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধার করা হয়। সেই জাহাজের গায়ে Culna শব্দটি লেখা ছিল। ব্রিটিশ আমলে যে মানচিত্র তৈরি করা হয়, সেখানেও খুলনাকে Culna লেখা হয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৫ শতকে সুফি সাধক খানজাহান আলী যখন দক্ষিণ বাংলায় আসেন, তখন তিনি সুন্দরবনের প্রান্তঘেঁষা এ অঞ্চলটিকে সভ্যতার আলোয় আলোকিত করেন। তাঁরই নেতৃত্বে খনন করা হয় নানা দিঘি, খাল ও রাস্তা। ‘ডাকাতদের জনপদ’ থেকে ‘আধ্যাত্মিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র’—এই রূপান্তরের শুরু সেখান থেকেই।
অনেক পুরোনো শহর খুলনা। শহরের মিউনিসিপ্যাল বোর্ড গঠিত হয় ১৮৮৪ সালে। খুলনা শহরের রয়েল মোড়ে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
জব্দ করা জাটকা এতিমখানায় বিতরণ, সেই মাছ লুট করলেন আড়তদারেরা
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জব্দ করা ৭০ কেজি জাটকা দুটি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছিল। তবে সেই মাছ লুট করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন আড়তদারের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে মৎস্য কার্যালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জাটকা রক্ষার অভিযানে আমিরাবাদ ও দশানী বাজার থেকে ৭০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস। পরে আমিরাবাদ এলাকায় জব্দ করা জাটকা উপজেলার হাজীপুর ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্থানীয় কিছু দুস্থ মানুষকেও কিছু জাটকা দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই জাটকা নিয়ে ওই দুই মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কমিটির লোকজন সন্ধ্যায় আমিরাবাদের বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছান। তখন আমিরাবাদ বাজারের মাছের আড়তদার আবুল প্রধান, আরিফ গাজী, সেরু প্রধানিয়া, দেলু বেপারীসহ আরও কয়েকজন তাঁদের পথরোধ করেন এবং জাটকাগুলো লুট করে নিয়ে যান।
হাজীপুর মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আল আমিন অভিযোগ করেন, মাছের ওই আড়তদারেরা তাঁদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে জাটকা লুট করে নিয়ে যান। বাধা দিয়েও কাজ হয়নি। বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে আবুল প্রধান, আরিফ গাজী ও সেরু প্রধানিয়ার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। তবে দেলু ব্যাপারী মুঠোফোনে বলেন, জাটকা লুট করা তাঁদের উচিত হয়নি। ওই জাটকা আজ (বৃহস্পতিবার) তাঁরা ফেরত দেবেন। এটি তাঁদের বড় ভুল হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। জাটকা উদ্ধারে ব্যবস্থাপনা নেওয়া হচ্ছে।
ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর জাটকা উদ্ধারে তিনি থানার ওসি ও মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টির তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতিমদের জাটকা লুট হওয়ার বিষয়টি খুব দুঃখজনক।