আইপিএলে ঘুরছে ক্যামেরাওয়ালা রোবট কুকুর, কতটুকু জানেন চম্পককে
Published: 25th, April 2025 GMT
‘চম্পক’—এশিয়ান চিরহরিৎ ফুলের গাছ, যা হিন্দু ও বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র। এ নামের আরও সংশ্লিষ্টতা আছে। যেমন মধ্যযুগীয় বাঙালি কবি বিপ্রদাস পিপিলাইয়ের ‘মনসামঙ্গল কাব্যে’ এ নামে একটি নগরীর উল্লেখ আছে। তবে এসব কারণে আইপিএলে রোবট কুকুর ক্যামেরার এ নাম দেওয়া হয়নি।
গতকাল আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও রাজস্থান রয়্যালসের ম্যাচ শুরুর আগে চার পায়ের চম্পকের সঙ্গে ভারতীয় কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারকে মজা করতে দেখা যায়। এই রোবট কুকুরের সঙ্গে দৌড়েছেন গাভাস্কার। আইপিএলে এবারই প্রথম রোবট কুকুরকে দেখা যাচ্ছে। একটি অনলাইন পোলে ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এর নাম কী হতে পারে, তা জানতে চেয়েছিল আইপিএল কর্তৃপক্ষ। সেখানে ‘চম্পক’ নামটি টিকে যায়।
হিন্দি কমেডি শো ‘তারক মেহতা কা ওল্টা চশমা’য় জ্ঞানী দাদার চরিত্র চম্পকলাল গাদার সঙ্গে রোবট কুকুরটির নামের সাযুজ্য খুঁজে পেতে পারেন কেউ কেউ। অনেকে বলছেন, সিরিয়ালের ওই চরিত্র থেকেই অনলাইন পোলে রোবট কুকুরটির নাম রেখেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ও ওমনিক্যামকে সঙ্গে নিয়ে এই রোবট কুকুর ক্যামেরাটি বানিয়েছে বৈশ্বিক সম্প্রচার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডব্লিউটিভিশন। ১৩ এপ্রিল দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচে এই ক্যামেরাওয়ালা রোবট কুকুরকে প্রথমবারের মতো দেখা যায়।
ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, ক্রীড়াশীল পোষা প্রাণীর কথা মাথায় রেখে ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচারকে আরও আধুনিক ও আবেগপূর্ণ করে তুলতে এই রোবট কুকুর বানানো হয়েছে। হাত মেলানো, লাফ দেওয়া কিংবা ভালোবাসাসূচক চিহ্ন দেখিয়ে খেলোয়াড়, আম্পায়ার ও ভক্তদের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে এটি যোগাযোগ করতে পারে। উচ্চপ্রযুক্তিতে বানানো এই রোবট ক্যামেরা উঁচু–নিচু ভূমিতে ফুটেজের স্থিতি ঠিক রাখতে পারে। পাশাপাশি রয়েছে প্যান-টিল্ট মেকানিজম, আরএফ সিস্টেমের ভিডিও ও থ্রি–ডি প্রিন্টিং শেল। চলাচলের মধ্যেই নিজের কাজ করে যেতে পারে এই রোবট ক্যামেরা।
আইপিএলের দর্শকেরাও এ প্রযুক্তিকে লুফে নিয়েছেন। রোবট ক্যামেরাটির একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরালও হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব কটি প্লাটফর্ম মিলিয়ে ভিডিওটি ৫৮ লাখবার দেখার পাশাপাশি ৫ লাখ ৬০ হাজার লাইক ও ৭২ হাজার শেয়ারও হয়েছে। দর্শকেরা এ প্রযুক্তিকে ‘আকর্ষণীয়’ ও ‘ম্যাচের সেরা বিস্ময়’ও বলছেন। কেউ কেউ সব ম্যাচেই চম্পক নামের এই রোবট কুকুরকে দেখার দাবি তুলেছেন। এমন সাড়া পড়ার পরই অনলাইন পোলের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে রোবট কুকুরের নাম চেয়েছিল বিসিসিআই।
শিল্পবিশেষজ্ঞরা খেলাধুলার সম্প্রচারে এ প্রযুক্তিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হিসেবে দেখছেন। ডব্লুটিভিশন সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক দিব্যজোত আহলুওয়ালিয়া এ নিয়ে বলেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে অনুসারিত ক্রীড়া ইভেন্টগুলোর একটি আইপিএলে এটি (রোবট কুকুর) দেখতে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। স্মার্ট প্রযুক্তির সঙ্গে গ্রাহকের পছন্দের মিশ্রণ ঘটানোর লক্ষ্যে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সম্প্রচারে এটাই উদ্ভাবনী—খেলাকে আরও মানবিক, আরও মজার, আরও বেশি মানুষকে সংশ্লিষ্ট করা।’
শুধু গাভাস্কার নন, এর আগে হার্দিক পান্ডিয়া, রিস টপলি ও অক্ষর প্যাটেলদের চম্পকের সঙ্গে মজা করতে দেখা গেছে। মুম্বাই-দিল্লির সেই ম্যাচে ধারাভাষ্যকার ড্যানি মরিসন ম্যাচ সম্প্রচারে চম্পককে তাঁর সহকারী হিসেবে পরিচয়ও করিয়ে দেন দর্শকদের সামনে। চেন্নাই সুপার কিংস অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিও চম্পকের সঙ্গে মজা করেছেন। পোষা প্রাণীর প্রতি ধোনির ভালোবাসার বিষয়টি ভক্তরা আগেই জানেন।
এই ক্যামেরাওয়ালা রোবট কুকুরের শরীর বাদামি রঙের ফারের প্রিন্টে আবৃত। মুখের বিভিন্ন অংশে ক্যামেরা রয়েছে। গ্রো-প্রো অ্যাকশন ক্যামেরার মতো এই রোবট কুকুর বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলের ছবি তুলতে সক্ষম।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের রোবোটিক প্রতিষ্ঠান বোস্টন ডায়নামিকসের ডিজাইন করা কোয়াডরুপেডস (চতুষ্পদ) থেকে আইপিএলের রোবট কুকুরের ভাবনা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় সামরিক বাহিনী এমন চতুষ্পদ প্রাণীর আদলে তৈরি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তবে আইপিএলের ‘চম্পক’ সেসব প্রযুক্তির চেয়ে আকারে ছোট ও মজার।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।