দেশের পাঁচজন চলচ্চিত্র প্রযোজক ৬ এপ্রিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। তাদের দাবি, ভুল বুঝিয়ে চলচ্চিত্রের মালিকানা স্বত্ব লিখে নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সেগুলো সম্প্রচার করে তারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। কিন্তু প্রযোজকরা হিস্যা পাচ্ছেন না। সম্প্রতি বাংলাদেশের জনপ্রিয় টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারত নিজেদের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের তালিকাভুক্ত করে। কিন্তু বাংলাদেশ এ পণ্যের স্বীকৃতির আবেদনই করেনি। ভারত তালিকাভুক্ত করার পর টনক নড়ে। 

জিআই পণ্য প্রিমিয়াম হিসেবে প্রমাণ হলে পণ্যের মূল্যমান ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। এভাবে মেধাস্বত্ব সম্পর্কে সচেতন না থাকায় ব্যক্তিগত ও জাতীয়ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। মেধাস্বত্ব ধরে না রাখায় ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি সবকিছুই নিজেদের পণ্যের মালিকানা অন্যরা নিয়ে নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ ২৬ এপ্রিল পালিত হচ্ছে বিশ্ব মেধাস্বত্ব (আইপি) দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও একযোগে পালিত হচ্ছে দিবসটি। মেধাস্বত্ব দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য– ‘আইপি অ্যান্ড মিউজিক: ফিল দ্য বিট অব আইপি’।

প্যাটেন্ট, ট্রেডমার্ক কিংবা কপিরাইট বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) সাধারণ পরিষদে মেধাস্বত্ব দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য ২৬ এপ্রিল তারিখটি বেছে নেওয়া হয়। কারণ, ১৯৭০ সালের এই দিনে ডব্লিউআইপিওর প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
মেধাস্বত্ব জায়গা-জমির মতোই সম্পত্তি বা সম্পদ। তাই এর নিবন্ধন প্রয়োজন। এতে ওই ব্যক্তি এবং উত্তরাধিকারী এর সুফল ভোগ করবেন। আইন অনুসারে, উদ্ভাবক তাঁর জীবনকাল ও তাঁর মৃত্যুর পর ৬০ বছর পর্যন্ত এর মালিকানা ভোগ করতে পারবেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষে বাণীতে বলেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে মেধাসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার ও মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। সংগীত শিল্পের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির মধ্যে শক্তিশালী সংযোগ গড়ে তুলতে মেধাসম্পদ আইন ও নীতির যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন। এতে শিল্প ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।

সাধারণভাবে মেধাস্বত্বকে কপিরাইট, পেটেন্ট, ট্রেডমার্ক, ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) প্রভৃতি বিভিন্ন আঙ্গিকে ভাগ করা হয়। কপিরাইট কাজ করে শৈল্পিক বিষয়ের ক্ষেত্রে। পেটেন্ট নির্ধারণ করে দেয় মালিকানাস্বত্ব। ট্রেডমার্ক হলো এমন এক নিদর্শন, যা পণ্য বা সেবাকে অন্য পণ্য বা সেবা থেকে পৃথক করে। ভৌগোলিক (জিআই) হলো ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সুরক্ষার অন্যতম হাতিয়ার।

বর্তমানে বাংলাদেশের জিআই পণ্যের মধ্যে আছে জামদানি, ইলিশ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল ইত্যাদি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ বস জ আই স ব ক ত

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ