আইফোনে ব্রাউজার ব্যবহারে যে সতর্কতা অ্যাপলের
Published: 26th, April 2025 GMT
বিশ্বজুড়ে আইফোন ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে অ্যাপল। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, গুগলের জনপ্রিয় ব্রাউজার ‘ক্রোম’ ব্যবহারে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ও আর্থিক গোপনীয়তা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে। যদিও ভিডিওতে সরাসরি গুগলের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবুও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, অ্যাপলের এই প্রচারণার মূল লক্ষ্যই ছিল ‘ক্রোম’।
‘ফ্লক’ শিরোনামের ভিডিওতে দেখা যায়, এক আইফোন ব্যবহারকারী চারপাশের অসংখ্য নজরদারি ক্যামেরার হাত থেকে পালাতে চেষ্টা করছেন। ক্যামেরাগুলো যেন প্রতিটি অনলাইন কার্যক্রমে তাঁকে অনুসরণ করছে। শেষ পর্যন্ত তিনি যখন অ্যাপলের নিজস্ব ব্রাউজার ‘সাফারি’ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেই নজরদারির প্রাচীর ধসে পড়ে। ভিডিওটির প্রতীকী উপস্থাপনায় গুগলের আগে ঘোষিত প্রকল্প ‘ফ্লক’ অর্থাৎ ‘ফেডারেটেড লার্নিং অব কোহর্টস’–এর প্রতিফলন দেখা গেছে। ওই পরিকল্পনার আওতায় গুগল কুকির বিকল্প প্রযুক্তি চালু করতে চেয়েছিল, যা ব্যবহারকারীর অনলাইন আচরণ বিশ্লেষণ করে লক্ষ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপন দেখাতে সহায়তা করত। অবশ্য তৃতীয় পক্ষের কুকি ব্যবস্থাপনার সেই বিকল্প পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে গুগল।
তৃতীয় পক্ষের কুকির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অনলাইন গতিবিধি যেমন কোন ওয়েবসাইটে যাচ্ছেন, কী খুঁজছেন কিংবা কী কিনছেন—এসব তথ্য সংগ্রহ করে গুগল একটি বিস্তারিত ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি করে। এরপর সেই তথ্য বিজ্ঞাপন সংস্থা, বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান এবং তথাকথিত ‘ডেটা ব্রোকার’-এর কাছে বিক্রি করা হয়। এটি গুগলের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস।
২০২৪ সালে বিজ্ঞাপন থেকে গুগলের আয় ছিল প্রায় ২ হাজার ৬৫০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে একটি অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তৃতীয় পক্ষের কুকি বাতিল করলে আয় প্রায় ১৯ শতাংশ কমতে পারে। এর ফলে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল গুগলের ‘প্রাইভেসি স্যান্ডবক্স’ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্টনি চাভেজ ঘোষণা দেন, তাঁরা আর কুকি ব্যবস্থায় নতুন কোনো পরিবর্তন আনছেন না।
তৃতীয় পক্ষের কুকির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর বয়স, অবস্থান, অভ্যাস, আগ্রহ, এমনকি কোনো ব্যাংকের ওয়েবসাইটে কবে, কখন এবং কতক্ষণ ছিলেন—এসব তথ্যও সংগ্রহ করা যায়। যদিও সরাসরি ব্যাংক পাসওয়ার্ড সংরক্ষিত থাকে না, তবে এই তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবহারকারীর আর্থিক প্রোফাইল গড়ে তোলা সম্ভব।
এই সব তথ্য বিজ্ঞাপন সংস্থা বা তথাকথিত ‘ডেটা ব্রোকার’-এর কাছে বিক্রি হলে সাইবার হামলার ঝুঁকিও বাড়ে। যদি কোনো বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কে সাইবার হামলা হয়, তবে এসব তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে, যার মধ্যে থাকতে পারে ব্যক্তিগত খোঁজখবর, সার্চ ইতিহাস কিংবা আর্থিক তথ্য।
এই প্রেক্ষাপটে অ্যাপল নিজেদের ব্রাউজার ‘সাফারি’-কে তুলনামূলক নিরাপদ বলে দাবি করছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, সাফারিতে ডিফল্টভাবে তৃতীয় পক্ষের ট্র্যাকিং কুকি বন্ধ থাকে। এর ফলে ব্যবহারকারীর তথ্য বেশি সুরক্ষিত থাকে। তবে শুধু সাফারি নয়, গোপনীয়তা রক্ষাকারী ব্রাউজার হিসেবে ফায়ারফক্স, ডাকডাকগো এবং অ্যাভাস্ট সিকিউর ব্রাউজার-এর কথাও উল্লেখযোগ্য। ফায়ারফক্সে রয়েছে ‘এনহান্সড ট্র্যাকিং প্রটেকশন’, ‘ডাকডাকগো’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কুকি সম্মতি ব্যবস্থাপনা করে এবং ইউটিউব ভিডিওর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত ‘ডাক প্লেয়ার’–সুবিধা দেয়। আর অ্যাভাস্ট সিকিউর ব্রাউজার-এ রয়েছে বিল্ট-ইন বিজ্ঞাপন ব্লকার, ফিশিং প্রতিরোধক এবং পাসওয়ার্ড ম্যানেজার।
সূত্র: ডেইলি মেইল
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।