চুরির অভিযোগে কুবি শিক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ
Published: 26th, April 2025 GMT
চুরির অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আনাস আহমেদকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় তাকে হস্তান্তর করেন কুবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) আনাস ও তার সহপাঠী শামিম ভূঁইয়া কুমিল্লা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানে যান। সেখান থেকে রাব্বি এলাহী নামে এক ফটোগ্রাফারের একটি ক্যামেরা লেন্স চুরি হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে আনাস ও তার বন্ধুকে সন্দেহভাজন দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন রাব্বি। পরবর্তীতে ফটোগ্রাফার রাব্বি এলাহী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার লোকজন নিয়ে এসে শহীদ ধীরেন্দ্রদত্ত হলের সামনে আনাসকে মারধর করেন।
আনাসের দাবি, তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি ও অর্ধ-উলঙ্গ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয় এবং সেটি মুঠোফোনে ধারণ করে রাখে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী উভয়কে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসে। কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি এবং প্রক্টরিয়াল বডির মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে। কিন্তু মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে উঠেন।
পরে কুমিল্লা জেলা পুলিশের এএসপি মোস্তাইন বিল্লাহ ফেরদৌস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করেন। শুক্রবার রাতেই রাব্বি এলাহীসহ তার দুই সহযোগীকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় চুরি হওয়া ক্যামেরা লেন্স উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় অভিযুক্ত আনাস চুরি করার বিষয়টি স্বীকার করলে তাকে কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় লেন্সটি মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী হান্নান রাহিম বলেন, “গতকাল (শুক্রবার) বহিরাগত কয়েকজন এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে মারধর করে মবের সৃষ্টি করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিস্থিতি শান্ত করতে উভয় পক্ষকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। বিষয়টি যখন সমাধানের পথে ছিল, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অভিযুক্ত আনাসের একটি অর্ধনগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দেখা যায়, তাকে মারধর করা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আমরা পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় অভিযুক্তদের নিরাপদে বের করে দেই। আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় হারিয়ে যাওয়া লেন্স উদ্ধার করে পুলিশ প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযুক্ত আনাসকেও পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।”
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মু.
তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, যারা ক্যাম্পাসে মাদকের সঙ্গে জড়িত, তাদের শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”
অভিযুক্ত শামিমকে পুলিশে হস্তান্তর না করার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নাঈম ভূঁইয়া বলেন, “আনাসের দেওয়া লোকেশন থেকে লেন্স পাওয়া গেছে। কিন্তু শামিমকে পাওয়া যায়নি। যার জন্য তাকে পুলিশে সপোর্দ করা সম্ভব হয়নি।”
অভিযুক্ত শামিমের মুঠোফোনে কল দিলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা চাই না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী চুরির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকুক। যেহেতু অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। তাই আমরা আগামীকাল (রবিবার) শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করব। এরপর সোমবার (২৮ এপ্রিল) সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, “বাদী পক্ষ যদি কোনো ধরনের অভিযোগ করেন, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিব। কিন্তু এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযুক্ত এখনো থানা হেফাজতে রয়েছে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।