চুরির অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আনাস আহমেদকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় তাকে হস্তান্তর করেন কুবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) আনাস ও তার সহপাঠী শামিম ভূঁইয়া কুমিল্লা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানে যান। সেখান থেকে রাব্বি এলাহী নামে এক ফটোগ্রাফারের একটি ক্যামেরা লেন্স চুরি হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে আনাস ও তার বন্ধুকে সন্দেহভাজন দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন রাব্বি। পরবর্তীতে ফটোগ্রাফার রাব্বি এলাহী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার লোকজন নিয়ে এসে শহীদ ধীরেন্দ্রদত্ত হলের সামনে আনাসকে মারধর করেন।

আনাসের দাবি, তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি ও অর্ধ-উলঙ্গ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয় এবং সেটি মুঠোফোনে ধারণ করে রাখে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী উভয়কে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসে। কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ি এবং প্রক্টরিয়াল বডির মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে। কিন্তু মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে উঠেন।

পরে কুমিল্লা জেলা পুলিশের এএসপি মোস্তাইন বিল্লাহ ফেরদৌস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করেন। শুক্রবার রাতেই রাব্বি এলাহীসহ তার দুই সহযোগীকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় চুরি হওয়া ক্যামেরা লেন্স উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় অভিযুক্ত আনাস চুরি করার বিষয়টি স্বীকার করলে তাকে কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় লেন্সটি মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী হান্নান রাহিম বলেন, “গতকাল (শুক্রবার) বহিরাগত কয়েকজন এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে মারধর করে মবের সৃষ্টি করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিস্থিতি শান্ত করতে উভয় পক্ষকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। বিষয়টি যখন সমাধানের পথে ছিল, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অভিযুক্ত আনাসের একটি অর্ধনগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে দেখা যায়, তাকে মারধর করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আমরা পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় অভিযুক্তদের নিরাপদে বের করে দেই। আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় হারিয়ে যাওয়া লেন্স উদ্ধার করে পুলিশ প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযুক্ত আনাসকেও পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।”

লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মু.

ওসমান গণি বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কখনোই একজন চোরের পক্ষে ছিলাম না, ভবিষ্যতেও থাকবো না। আজ তিনি (আনাস) স্বীকার করেছেন, তিনি এবং তার বন্ধু শামীম চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ তাকে আইনের হাতে তুলে দিয়েছি। এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগও রয়েছে। আমাদের দাবি, চুরির সঙ্গে জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, যারা ক্যাম্পাসে মাদকের সঙ্গে জড়িত, তাদের শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”

অভিযুক্ত শামিমকে পুলিশে হস্তান্তর না করার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নাঈম ভূঁইয়া বলেন, “আনাসের দেওয়া লোকেশন থেকে লেন্স পাওয়া গেছে। কিন্তু শামিমকে পাওয়া যায়নি। যার জন্য তাকে পুলিশে সপোর্দ করা সম্ভব হয়নি।”

অভিযুক্ত শামিমের মুঠোফোনে কল দিলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা চাই না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী চুরির মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকুক। যেহেতু অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। তাই আমরা আগামীকাল (রবিবার) শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করব। এরপর সোমবার (২৮ এপ্রিল) সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, “বাদী পক্ষ যদি কোনো ধরনের অভিযোগ করেন, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিব। কিন্তু এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযুক্ত এখনো থানা হেফাজতে রয়েছে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ