২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে সভাপতি ও ডা. শাহাদাত হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের পর সবার নজরে আসেন তখন ড্যাবের রাজনীতিতে পুরোদমে সক্রিয় থাকা ডা. শাহাদাত হোসেন। এখন সেই কমিটির সভাপতি দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য। পরে দুই দফায় দল পুনর্গঠনকালে কমিটির একবার সভাপতি ও আরেকবার আহ্বায়কও হন তিনি। সব মিলিয়ে এভাবে প্রায় নগর বিএনপির ১৬ বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার প্রথম কমিটির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়ে গেলেও ডা.
আলাপচারিতায় ডা. শাহাদাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দীর্ঘ ১৬ বছর আমি চট্টগ্রাম নগরীতে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি। এটা করতে গিয়ে আমাকে অর্ধশতাধিক মামলার আসামি হতে হতে হয়েছে। জেল খাটতে হয়েছে। দমন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। অনেক সময় ঘরে থাকতে পারিনি। পেশাগত কাজ করতে পারিনি। পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। তবুও হাল ছাড়িনি। এখন আমি নগর বিএনপির দায়িত্বে নেই। দলের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদেও নেই। আমাকে যারা চেনেন-জানেন, ভালোবাসেন তাদের হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমার মধ্যেও যে, মনোবেদনা নেই, কষ্ট নেই-এটাও বলা যাবে না। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, দলের জন্য আমার অবদানের বিষয়টি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের হাকমান্ড জানেন। তাই আমাকে মূল্যায়নের বিষয়টি তাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নগর বিএনপির নেতৃত্বে নেই। তবে যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের আমি সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি এবং সহযোগিতা করে যাচ্ছি। কোন কর্মসূচিতে তারা যখন আমাকে ডাকেন, আমি তখন সেই কর্মসূচিতে অংশ নিই। ফলে দলীয় কর্মকাণ্ডে আমার অংশগ্রহণ–নেই এটা বলা যাবে না।’
আদালতের রায়ে মেয়র হওয়ার পর ব্যস্ততার কারণে দলের নেতাকর্মিদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে কি না জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘মেয়রের দায়িত্বভার নেওয়ার পর আমি নগরীকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছি। গ্রিন ও ক্লিন সিটির পাশাপাশি একটি নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে চাই। এজন্য আমি নিজকে জনগণের সেবক মনে করে দিন-রাত সমানে খাটছি। এরমধ্যেও দলের নেতাকর্মিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। প্রতিদিনই কথাবার্তা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতেও অংশ নিচ্ছি।’
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘৭০ লাখ মানুষের নগরীর মেয়রের দায়িত্বটা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এখানে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে মশক নিধন, ময়লা-আবর্জনা অপসারণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে। সব কাজ সফলতার সঙ্গে করে আমি দলেরও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চাই।’
নগর বিএনপির দায়িত্ব থেকে সরে আসার পর অনুসারী নেতাকর্মিরা অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে বলে তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলে কে কার অনুসারী কিংবা সমর্থক- সেটি বড় কথা নয়। সেই নেতাকর্মি দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন কি না কিংবা দলের জন্য ত্যাগ রয়েছে কি না সেটাই বড় কথা। দল পুনগর্ঠনে এসব বিষয় বিবেচনা করে নেতৃত্বভার দেওয়া দরকার। এটা না হলে শেষ পর্যন্ত দলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভূঁইফোঁড় ও সুবিধাবাদীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমি আশা করব, নগর বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত ও তদারকির দায়িত্বে থাকা নেতারা বিষয়টি দেখবেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের দুঃসময়ে যারা মাঠে ছিলেন তারা তো আছেনই। আবার অনেকেই সেইসময় মাঠে ছিলেন না। কিন্তু এখন অনুকূল পরিবেশে মাঠে নেমেছেন। এই ধরনের নেতাকর্মিদের মধ্যে আমরা কাকে গুরুত্ব দেব? সেটাই বড় কথা। নানা কারণে অনেককে দলের পদ দিতে হলেও নিশ্চয় সবার আগে ত্যাগী নেতাকর্মিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এটা হলে নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না, দলও উপকৃত হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ নগর ব এনপ র ন ত কর ম দ র অন স র কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থা, প্রস্তুতি না নেওয়া আত্মঘাতী
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এমন বিশ্বে আমরা বাস করি, প্রতিনিয়ত যুদ্ধের হুমকি আমাদের ঘিরে থাকে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হই হই অবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে। সকালের খবরে দেখলাম, হয়তো গুজব, যে আজকেই শুরু হয়ে যাবে যুদ্ধ। প্রস্তুতি না নেওয়াটা আত্মঘাতী। আধাআধি প্রস্তুতির কোনো জায়গা নাই।’
গতকাল বুধবার রাজধানীর বীরউত্তম এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অনুশীলন পর্যবেক্ষণ অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। খবর বিবিসি বাংলা ও বাসসের।
নিজেকে ‘যুদ্ধবিরোধী মানুষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যুদ্ধ হোক– এটা আমরা কামনা করি না।’ যুদ্ধের প্রস্তুতি অনেক সময় যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়– এ রকম ধারণার বিষয়ে ঘোরতর আপত্তির কথা জানান ড. ইউনূস।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রতি যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্ব আগামী দিনের নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মূল ভিত্তি উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিমানবাহিনীর সব সদস্যের প্রতি যুগোপযোগী ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন এবং পেশাগত ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি অব্যাহত মনোযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা একটা নিরাপদ, উন্নত ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার, রাডার সংযোজনের জন্য বিমানবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবে সরকার।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা নিয়মিতভাবে বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জ্ঞান-দক্ষতাকে যুগোপযোগী করতে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।’
তিনি দেশের বিমানবন্দরগুলোর সুষ্ঠু পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
মহড়া কেবল একটি সাময়িক অনুশীলনই নয় উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কার্যকর আকাশ প্রতিরক্ষার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে বিমানঘাঁটিতে এসে পৌঁছলে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। অনুষ্ঠানস্থলে বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বিতরণ প্রধান উপদেষ্টার
গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘর বিতরণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে এসব ঘর বিতরণ করেন।
ওই বন্যায় অনেক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম। অসংখ্য বাড়িঘর সম্পূর্ণরূপে ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্মাণের সামর্থ্য নেই, এ রকম তিনশ পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফেনীতে ১১০টি, নোয়াখালীতে ৯০টি, কুমিল্লায় ৭০টি ও চট্টগ্রামে ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুটি কক্ষ, কমন স্পেস, শৌচাগার, রান্নাঘরসহ বারান্দা রয়েছে। ৪৯২ বর্গফুট আয়তনের ঘরে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৯৪ টাকা এবং ৫০০ বর্গফুটের ঘরে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেনাবাহিনী ঘরগুলো নির্মাণ করেছে।
অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান বক্তব্য দেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত ও বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় এমন অপারেটরদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যাতে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
বৈঠকে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘দেশের নৌবন্দরগুলোর বর্তমান হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বছরে ১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন ইউনিট, যা সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মপন্থার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ইউনিটে উন্নীত করা সম্ভব।’