নির্বাচন বিলম্বিত হলে বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে
Published: 26th, April 2025 GMT
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, রাজনৈতিক পরিমণ্ডল আগামীতে কীভাবে সামনে আসে, তা দেখার জন্য বিনিয়োগকারীদের অনেকেই অপেক্ষা করছেন। জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হলে বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (এফডিসি) একটি মিলনায়তনে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে বিনিয়োগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এমন মত দেন।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রতি ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, তারা স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেখতে চান। সম্মেলনে রাজনৈতিক দলগুলো বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা নীতির ধারাবাহিকতার কথা বলেছেন। এগুলো ইতিবাচক।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ খুব নিম্নমাত্রার। গত বছর দেশে নিট বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র ১৩০ কোটি ডলার। তবে এর উল্লেখযোগ্য অংশ আগের মুনাফা থেকে করা। নতুন বিনিয়োগ একেবারেই কম। সম্প্রতি বিনিয়োগ সম্মেলনে ২৫ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছে। প্রতিশ্রুতির চেয়ে এর বাস্তবায়ন বড় বিষয়। সহায়ক পরিবেশ পেলে যারা প্রতিশ্রুতি দেননি, তারাও আসবেন। বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, দুর্নীতি, বন্দরের সমস্যাসহ নানা বাধা দূর করতে হবে।
তিনি মনে করেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন দেশের কর, সেবা প্রদানসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তুলনামূলক বিচার করে সিদ্ধান্ত নেন। এমনও হতে পারে, বাংলাদেশ ভালো করছে; কিন্তু অন্য কেউ হয়তো এর চেয়ে ভালো করছে। এখানে প্রতিযোগিতা তীব্র। আরেকটি বিষয় হলো, বিদেশিরা স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মনোভাব পর্যবেক্ষণ করেন। স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা সন্তুষ্ট থাকলে বিদেশিরা আগ্রহ দেখাবেন।
বিনিয়োগ সম্মেলনের পরপরই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উৎপাদনের ক্ষেত্রে গ্যাসের খরচ উল্লেখযোগ্য বিষয়। তবে বিনিয়োগকারীরা সামষ্টিক খরচ বিবেচনায় নেন। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের জন্য শুধু খরচ কমানো নয়, পণ্য তৈরি করে তা সরবরাহ করার সময় বা লিড টাইম গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আগামী বছরের নভেম্বরে এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবে। ফলে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা থাকবে না। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ আগামী ১০ বছরে থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুরের মতো অবস্থায় যেতে পারবে কিনা– এমন প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিবছর ৭ থেকে ৮ শতাংশ ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থাকলে হয়তো থাইল্যান্ডের কাছাকাছি যাওয়া যাবে। সিঙ্গাপুরের মতো হওয়া আগামী ১০ বছরে সম্ভব নয়।
‘সাম্প্রতিক বিনিয়োগ সম্মেলন বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে’ বিষয়ে ছায়া সংসদ নামের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা ইডেন কলেজের দল জয়ী হয়। সরকারি দলে ছিলেন ঢাকা কলেজের বিতার্কিকরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিশ্বাসযোগ্যতা, নীতি ধারাবাহিকতা, উন্নত অবকাঠামোসহ ১০ দফা সুপারিশ করেন।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের
এক প্রশ্নের উত্তরে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমানের যুদ্ধ পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য ভালো নয়। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য বড় শঙ্কার কারণ না হলেও উদ্বেগের। কেননা পরমাণু শক্তির অধিকারী দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার সম্ভাব্য তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সার্ক দীর্ঘদিন ধরে তেমন সক্রিয় নয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সার্কের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তিনি আশা করেন, এবারও আলোচনার মাধ্যমে সংকট এড়ানো যাবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশ বড় অঙ্কের পণ্য আমদানি করে। সে দেশে আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম। ভারতের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। সে দেশে রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে বাংলাদেশের ৪০ বছর লেগেছিল। পরের ৭ বছরে দুই বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত যদি সামরিক খাতে বেশি মনোযোগী হয়, তাহলে তাদের বাণিজ্য প্রভাবিত হতে পারে। যার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরেও পড়তে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ
রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।
জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’
এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ।