কুরস্ক পুনর্দখলের দাবি রাশিয়ার, ইউক্রেন বলছে লড়াই চলছে
Published: 27th, April 2025 GMT
রাশিয়ার সেনাবাহিনী দেশটির কুরস্ক অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে পুনর্দখলে নেওয়ার দাবি করেছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী আট মাস আগে সেখানে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে চমকে দিয়েছিল। তবে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে রাশিয়ার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রুশ সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ গতকাল শনিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে কুরস্ক পুনর্দখলের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, রুশ সেনারা কুরস্কে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বশেষ গ্রাম গর্নাল মুক্ত করেছেন।
গেরাসিমভকে পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেন সরকারের দুঃসাহসী অভিযান সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এ দাবি অস্বীকার করে জানিয়েছে, তাদের সেনারা এখনো কুরস্কের কিছু অংশে অভিযান চালাচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে দেওয়া একটি পোস্টে ইউক্রেনের চিফ অব স্টাফ বলেন, ‘ইউক্রেন সেনাবাহিনীর পরাজয়’ নিয়ে শত্রুপক্ষের নেতাদের বক্তব্য অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু নয়।’ তবে তিনি স্বীকার করেছেন, কুরস্কে ইউক্রেনের জন্য পরিস্থিতি ‘কঠিন’ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেখানে রুশ বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রগতি করেছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশটির পূর্ব ও দক্ষিণের কিছু অঞ্চল দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে কুরস্কে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চেয়েছিল কিয়েভ।
আরও পড়ুনপুতিন একটা মহাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন?১৯ ঘণ্টা আগেইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাদের অগ্রগতির ঘোষণা দিতে গিয়ে মস্কোর সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ উত্তর কোরীয় সেনাদের প্রশংসা করেন। তাঁরা রণাঙ্গনে রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করছেন। মস্কোর পক্ষ থেকে এ যুদ্ধে তাঁদের ভূমিকার প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এটি।
ভ্যালেরি গেরাসিমভ বলেন, উত্তর কোরিয়ার সেনারা ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর একটি দলকে পরাজিত করতে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়তা করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে মস্কোকে সহায়তা করার জন্য গত বছর উত্তর কোরিয়া থেকে ১০ হাজারের বেশি সেনা রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল।
আরও পড়ুনইউক্রেনে রুশ যুদ্ধশিবির থেকে দুর্বিষহ জীবনের গল্প বললেন এই বাংলাদেশি তরুণ২০ ঘণ্টা আগেইউক্রেনের দাবি, তারা কুরস্কে যুদ্ধরত কয়েকজন উত্তর কোরীয় সেনাকে বন্দী করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
রাশিয়া যখন কুরস্ক পুনর্দখলের ঘোষণা দিয়েছে, তখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যের এক ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ‘সম্পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির’ প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ক্রেমলিন গতকাল শনিবার বলেছে, পুতিন কোনো শর্ত ছাড়া ইউক্রেনের সঙ্গে পুনরায় আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
আরও পড়ুনপুতিনকে ‘থামতে’ বললেন ট্রাম্প২৪ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র স কর ছ ন ক রস ক
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের
আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।
দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।
মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।
হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’
সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।
হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।
বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।
এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে
তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।
দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।
এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’