ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশের মধ্যকার উত্তেজনা কার্যত চরমে পৌঁছেছে। এ পরিস্থিতিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। 

এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, পেহেলগামে ভয়াবহ হামলার পর ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ রয়েছে। পাকিস্তানি ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে নিয়মিত গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, পাকিস্তানি সেনারা নিয়মিতভাবেই নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। শনিবার রাতেও পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ থেকে ‘ছোট অস্ত্রের উস্কানিমূলক গুলিবর্ষণের’ ঘটনা ঘটে। ভারতীয় সেনারাও হালকা অস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছে। 

গত মঙ্গলবার ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এ ঘটনার পর থেকেই ভারত সরকার পাকিস্তানকে দোষারোপ করে আটারি স্থল সীমান্ত এবং ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি স্থগিত, ওয়াগা সীমান্ত বন্ধ, সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিতের পাশাপাশি ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। এ ছাড়া দু’দেশই সার্ক ভিসা বাতিল করে অন্য দেশের নাগরিকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এ নিয়ে গত দু’দিনে ২৭২ পাকিস্তানি নাগরিক আটারি সীমান্ত দিয়ে ভারত ছেড়েছেন। গতকাল রোববার সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে আরও অনেকে ফিরে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, পাঞ্জাবে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে পাকিস্তান থেকে ফিরেছেন ১৩  কূটনীতিক, কর্মকর্তাসহ ৬২৯ জন ভারতীয়। 

নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণ অনুসারে, গত সপ্তাহে কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলার পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডজনেরও বেশি বিশ্বনেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের রাজধানীর ১০০টি মিশনের কূটনীতিকরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ের জন্য আবেদন করেছেন। আলোচনা সম্পর্কে অবগত চারজন কূটনীতিকের মতে, নয়াদিল্লি তার চিরশত্রু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তানের নাম না নিয়ে মোদি এক ভাষণে জড়িতদের কঠোর শাস্তি এবং সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কাশ্মীরেও ভারতীয় বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে। শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার এবং অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

এদিকে কোনো কিছু না জানিয়েই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের অন্যতম প্রধান নদী ঝিলামের পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত। ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফরাবাদের বিভাগীয় প্রশাসন শনিবার এক বিবৃতিতে নদীপারের বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে। বন্যার বিষয়ে সতর্ক করতে মসজিদ থেকে স্থানীয়দের মাইকিং করতে শোনা গেছে। এতে করে নদীপারের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে থাকা সিন্ধু নদের একটি উপনদী হলো ঝিলাম। 

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ভারত সিন্ধু নদের পানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিতে পাকিস্তানে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সিন্ধু নদ থেকে সামান্য দূরের একটি সবজি ক্ষেতে কাজ করা ৪০ বছর বয়সী হোমলা ঠাকুর বলেন, ‘যদি তারা পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে এই পুরো এলাকা, পুরো দেশ থর মরুভূমিতে পরিণত হবে। আমরা না খেয়ে মরব।’ ১৫ জনেরও বেশি পাকিস্তানি কৃষক ও একাধিক বিশেষজ্ঞের বক্তব্যেও হোমলা ঠাকুরের উদ্বেগগুলো প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তবে নয়াদিল্লির অবিলম্বে পানির প্রবাহ বন্ধ করার মতো সক্ষমতা নেই বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 
পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতার প্রস্তাবের ইচ্ছাকে স্বাগত জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। শনিবার সন্ধ্যায় শাহবাজ শরিফ ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এক টেলিফোনে আলোচনা করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ ইরানের পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য সহায়তার ইচ্ছাকে স্বাগত জানান। 

দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদন অনুসারে, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার তদন্তে রাশিয়া, চীন এবং অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পৃক্ততা চায় পাকিস্তান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ রুশ সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামলা প্রসঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি, রাশিয়া, চীন বা এমনকি পশ্চিমা দেশগুলো এই সংকটে খুব ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা একটি তদন্ত দল গঠন করতে পারে। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ