তৃতীয় দিনের মতো ভারত-পাকিস্তান গোলাগুলি
Published: 27th, April 2025 GMT
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক ক্ষমতাধর দেশের মধ্যকার উত্তেজনা কার্যত চরমে পৌঁছেছে। এ পরিস্থিতিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, পেহেলগামে ভয়াবহ হামলার পর ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ রয়েছে। পাকিস্তানি ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে নিয়মিত গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, পাকিস্তানি সেনারা নিয়মিতভাবেই নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। শনিবার রাতেও পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ থেকে ‘ছোট অস্ত্রের উস্কানিমূলক গুলিবর্ষণের’ ঘটনা ঘটে। ভারতীয় সেনারাও হালকা অস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছে।
গত মঙ্গলবার ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এ ঘটনার পর থেকেই ভারত সরকার পাকিস্তানকে দোষারোপ করে আটারি স্থল সীমান্ত এবং ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি স্থগিত, ওয়াগা সীমান্ত বন্ধ, সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিতের পাশাপাশি ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। এ ছাড়া দু’দেশই সার্ক ভিসা বাতিল করে অন্য দেশের নাগরিকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এ নিয়ে গত দু’দিনে ২৭২ পাকিস্তানি নাগরিক আটারি সীমান্ত দিয়ে ভারত ছেড়েছেন। গতকাল রোববার সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে আরও অনেকে ফিরে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, পাঞ্জাবে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে পাকিস্তান থেকে ফিরেছেন ১৩ কূটনীতিক, কর্মকর্তাসহ ৬২৯ জন ভারতীয়।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণ অনুসারে, গত সপ্তাহে কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলার পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডজনেরও বেশি বিশ্বনেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের রাজধানীর ১০০টি মিশনের কূটনীতিকরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ের জন্য আবেদন করেছেন। আলোচনা সম্পর্কে অবগত চারজন কূটনীতিকের মতে, নয়াদিল্লি তার চিরশত্রু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তানের নাম না নিয়ে মোদি এক ভাষণে জড়িতদের কঠোর শাস্তি এবং সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কাশ্মীরেও ভারতীয় বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে। শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার এবং অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে কোনো কিছু না জানিয়েই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের অন্যতম প্রধান নদী ঝিলামের পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত। ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফরাবাদের বিভাগীয় প্রশাসন শনিবার এক বিবৃতিতে নদীপারের বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে। বন্যার বিষয়ে সতর্ক করতে মসজিদ থেকে স্থানীয়দের মাইকিং করতে শোনা গেছে। এতে করে নদীপারের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে থাকা সিন্ধু নদের একটি উপনদী হলো ঝিলাম।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ভারত সিন্ধু নদের পানি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিতে পাকিস্তানে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সিন্ধু নদ থেকে সামান্য দূরের একটি সবজি ক্ষেতে কাজ করা ৪০ বছর বয়সী হোমলা ঠাকুর বলেন, ‘যদি তারা পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে এই পুরো এলাকা, পুরো দেশ থর মরুভূমিতে পরিণত হবে। আমরা না খেয়ে মরব।’ ১৫ জনেরও বেশি পাকিস্তানি কৃষক ও একাধিক বিশেষজ্ঞের বক্তব্যেও হোমলা ঠাকুরের উদ্বেগগুলো প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তবে নয়াদিল্লির অবিলম্বে পানির প্রবাহ বন্ধ করার মতো সক্ষমতা নেই বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতার প্রস্তাবের ইচ্ছাকে স্বাগত জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। শনিবার সন্ধ্যায় শাহবাজ শরিফ ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এক টেলিফোনে আলোচনা করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ ইরানের পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য সহায়তার ইচ্ছাকে স্বাগত জানান।
দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদন অনুসারে, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার তদন্তে রাশিয়া, চীন এবং অন্য পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পৃক্ততা চায় পাকিস্তান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ রুশ সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামলা প্রসঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি, রাশিয়া, চীন বা এমনকি পশ্চিমা দেশগুলো এই সংকটে খুব ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা একটি তদন্ত দল গঠন করতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।