সমুদ্রের তীরে দুই পায়ের পাতায় ভর দিয়ে বসে আছেন এক ব্যক্তি। গভীর মনোযোগ দিয়ে তাঁর চুল-দাড়ি কাটছেন আরেকজন। কিছুক্ষণ পর পর ঢেউ এসে দু’জনের পায়ের পাতা ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। পাশে চোখ ফেরালেই আরেক দৃশ্যে নজর আটকায়। পরিত্যক্ত এক জোড়া জুতা পায়ে ময়লার বিশাল স্তূপ থেকে লাফিয়ে নামছেন এক মধ্যবয়সী নারী। তাঁর হাতে নোংরা প্লাস্টিকের বস্তা। আরেকটু দূরের ফ্রেমে নজর রাখলে দেখা মেলে নিখাদ আনন্দের। রেলপথের পাশের দুটি খুঁটিতে দড়ি বেঁধে দোলনা বানিয়ে একে অপরের মুখোমুখি বসে দুলছে দুই পথশিশু। তাদের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস।

এমনই বিচিত্র সব দৃশ্যের প্রদর্শনী চলছে রাজধানীর পান্থপথের দৃকপাঠ ভবনে। জুলাই আন্দোলন থেকে শুরু করে নিত্যজীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা, যেগুলো সহজেই চোখ এড়িয়ে যায়, সেই সব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে দর্শকদের সামনে তুলে এনেছেন আলোকচিত্রীরা। এর মধ্যে কিছু ছবি যেমন প্রশান্তির, কিছু ছবি আবার মন খারাপ করিয়ে দেয়, টেনে দাঁড় করায় কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। সেখানে একটি ছবি দেখে থেমে যান দর্শনার্থী আল-আমিন সজীব। নির্মাণাধীন ভবনের কার্নিশে ঝুলছেন ভীতসন্ত্রস্ত এক তরুণ। ছাদ থেকে তাঁর দিকে পিস্তল তাক করে আছে পুলিশ।

সজীব বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় এ ঘটনার ভিডিওটি দেখে আঁতকে উঠেছিলাম। একজন নিরস্ত্র মানুষকে কীভাবে গুলি করতে পারে! পরে অবশ্য গণমাধ্যমে খবর হয়, কার্নিশে ঝুলে থাকা ওই তরুণ বেঁচে আছেন। বিষয়টি জানার পর স্বস্তি পেয়েছিলাম।’

গত ১৯ এপ্রিল দৃকপাঠ ভবনে বাংলাদেশ প্রেস ফটো কনটেস্ট-২০২৫-এর পুরস্কার বিতরণ এবং প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। এ বছর ২৫২ অংশগ্রহণকারীর মধ্যে সাতজন বিজয়ী হয়েছেন। ৯ ফেব্রুয়ারি উন্মুক্ত ছবি আহ্বানের মধ্য দিয়ে প্রতিযোগিতার যাত্রা শুরু হয়। ২৫২ আলোকচিত্র সাংবাদিক গত বছর নিজেদের তোলা ছবি জমা দেন। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও তথ্যচিত্রনির্ভর ১ হাজার ৩১০টি ছবি জমা পড়ে। এর মধ্যে নির্বাচিত ৩১টি ছবি নিয়ে শুরু হয়েছে এই প্রদর্শনী।  

বর্ষসেরা আলোকচিত্রের (২০২৪) জন্য পুরস্কার পেয়েছেন আশরাফুল আলম।

প্রদর্শনীর কিউরেটর ও দৃকের মহাব্যবস্থাপক এ এস এম রেজাউর রহমান বলেন, ‘প্রদর্শনীটি কিউরেট করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, আলোচনায় থাকা ছবিগুলো তো বটেই, এর বাইরের ছবি নিয়েও মানুষ আলাপচারিতা করুক। যেমন, জনমুখী সাংবাদিকতা বিভাগের একটা ছবিতে উঠে এসেছে, এক নারী শিশুসন্তানসহ বাসে উঠতে চাচ্ছেন। কিন্তু বাসচালকের হেল্পার গলায় ধাক্কা দিয়ে তাঁকে সরিয়ে দিচ্ছেন। এই ছবি আমাদের বুঝিয়ে দেয়, দেশের গণপরিবহন নারীবান্ধব নয় এবং এ জায়গায় আমাদের কাজ করা উচিত।’
সবার জন্য উন্মুক্ত ১২ দিনব্যাপী প্রদর্শনীটি আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন, মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে বাসের চাকায় মৃত্যু নারীর

চট্টগ্রামের পটিয়ায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ার পর বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম ফজিলাতুন নেসা (২৮)। তিনি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার মহেশপুর গ্রামের আলিমুজ্জামান সুজনের স্ত্রী।

পুলিশ জানায়, স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে গতকাল রোববার চট্টগ্রামে বেড়াতে আসেন ফজিলাতুন নেসা। তাঁদের ছয় বছর বয়সী সন্তানও সঙ্গে ছিল। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের একটি বাসায় তাঁরা রাত্রিযাপন করেন। সকালে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। আলিমুজ্জামান মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন এবং তাঁর পেছনে ছয় বছর বয়সী সন্তান হুমায়ের হাম্মাদ, এরপর ফজিলাতুন নেসা বসে ছিলেন।

সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার নয়াহাট এলাকায় পৌঁছায় মোটরসাইকেলটি। সেখানে সামনে থাকা একটি লেগুনা হঠাৎ সড়কে থেমে গেলে তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেলটির ব্রেক কষেন আলিমুজ্জামান। এ সময় ফজিলাতুননেসা মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন। এর পরপরই পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ফজিলাতুন নেসাকে পিষ্ট করে। তাঁকে উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগরের যে বাসাটিতে ফজিলাতুন নেসা ছিলেন, সেটি তাঁর স্বামী আলিমুজ্জামানের বন্ধু রবিউল ইসলামের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রবিউল ইসলামের বোন আশরিফা আহমদ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফজিলাতুন নেসার স্বামী নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক। পরিবার নিয়ে পাহাড় দেখতে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। বেড়াতে যাওয়ার পথেই স্বামী-সন্তানের সামনে দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণহানি হয়েছে।

পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট ওয়াসিম আরাফাত দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিহত নারীর লাশ আইনি–প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লেগুনা ও বাসের চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ