পেহেলগামের ঘটনাকে ইসরায়েলে হামাসের হামলার সঙ্গে তুলনা করলেন শশী থারুর
Published: 28th, April 2025 GMT
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন কংগ্রেস আইনপ্রণেতা (এমপি) শশী থারুর। চলমান সংকটের সময়ে তাড়াহুড়া করে একে অপরের ওপর দোষ চাপানো থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি।
২২ এপ্রিল বন্দুকধারীরা পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালায়। ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাই হামলার পর এটিই ছিল দেশটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা আলাপকালে শশী থারুর নিরাপত্তাঘাটতির কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বৃহৎ প্রেক্ষাপটের দিকে তাকানোর আহ্বান জানান এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার সঙ্গে এ ঘটনার তুলনা দেন। তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই এখানে অব্যর্থ কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিল না। কিছু ব্যর্থতা ছিল। তবে মনে রাখতে হবে, ইসরায়েলের মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা গোয়েন্দা সংস্থার দেশও ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় সম্পূর্ণভাবে বিস্মিত হয়েছিল। আমার মনে হয়, ইসরায়েল যেমন যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত জবাবদিহি চাচ্ছে না, তেমনি আমাদেরও আগে পরিস্থিতি সামলানো উচিত। পরে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করা উচিত।
শশী থারুর আরও বলেন, ‘কোনো দেশই সন্ত্রাসী হামলা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। বিশ্বজুড়ে যতগুলো সন্ত্রাসী হুমকি প্রতিহত করা হয়, সেগুলোর কথা আমরা কখনোই জানতে পারি না। কেবল যেখানে ব্যর্থতা ঘটে, সেগুলোর কথাই সামনে আসে। এটি যেকোনো দেশের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক। এখানে ব্যর্থতা ছিল, আমি স্বীকার করি। তবে এখন সেটাই প্রধান আলোচ্য বিষয় হওয়া উচিত নয়।’
কংগ্রেস দল একদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র রাজনৈতিক আক্রমণ চালিয়ে ‘গুরুতর গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে। অন্যদিকে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এখন ঘটনার তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছে। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তদন্ত কার্যক্রম তদারক করছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি ও ফরেনসিক রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি পেহেলগামের ঘন জঙ্গলে চিরুনি অভিযানও চলছে। জম্মু কাশ্মীর পুলিশ সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীলদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান জোরদার করেছে। গত দুই দিনে সন্দেহভাজন বন্দুকধারীদের সঙ্গে যুক্ত ছয়টি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনপেহেলগামের ঘটনায় একের পর এক বাড়ি ধ্বংস, সরকারকে সতর্ক করল কাশ্মীরের দলগুলো২ ঘণ্টা আগেপেহেলগাম হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে। পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে এবং আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। সব পাকিস্তানি নাগরিককে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, চুক্তি স্থগিত করা হলে তা ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে বিবেচিত হবে এবং তারা শিমলা চুক্তিসহ সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত করতে পারে।
সরকারি তথ্য মতে, গত শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত ৫০৯ জন পাকিস্তানি নাগরিক ভারত ছেড়েছেন। এদের মধ্যে ৯ জন কূটনীতিকও রয়েছেন। এদিকে ৭৪৫ জন ভারতীয় নাগরিক পাকিস্তান থেকে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ফিরে এসেছেন।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে পরীক্ষার মুখে ভারতের সামরিক বাহিনী৮ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।