কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন কংগ্রেস আইনপ্রণেতা (এমপি) শশী থারুর। চলমান সংকটের সময়ে তাড়াহুড়া করে একে অপরের ওপর দোষ চাপানো থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি।

২২ এপ্রিল বন্দুকধারীরা পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালায়। ২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাই হামলার পর এটিই ছিল দেশটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা আলাপকালে শশী থারুর নিরাপত্তাঘাটতির কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বৃহৎ প্রেক্ষাপটের দিকে তাকানোর আহ্বান জানান এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার সঙ্গে এ ঘটনার তুলনা দেন। তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই এখানে অব্যর্থ কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিল না। কিছু ব্যর্থতা ছিল। তবে মনে রাখতে হবে, ইসরায়েলের মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা গোয়েন্দা সংস্থার দেশও ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় সম্পূর্ণভাবে বিস্মিত হয়েছিল। আমার মনে হয়, ইসরায়েল যেমন যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত জবাবদিহি চাচ্ছে না, তেমনি আমাদেরও আগে পরিস্থিতি সামলানো উচিত। পরে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করা উচিত।

শশী থারুর আরও বলেন, ‘কোনো দেশই সন্ত্রাসী হামলা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। বিশ্বজুড়ে যতগুলো সন্ত্রাসী হুমকি প্রতিহত করা হয়, সেগুলোর কথা আমরা কখনোই জানতে পারি না। কেবল যেখানে ব্যর্থতা ঘটে, সেগুলোর কথাই সামনে আসে। এটি যেকোনো দেশের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক। এখানে ব্যর্থতা ছিল, আমি স্বীকার করি। তবে এখন সেটাই প্রধান আলোচ্য বিষয় হওয়া উচিত নয়।’

কংগ্রেস দল একদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র রাজনৈতিক আক্রমণ চালিয়ে ‘গুরুতর গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে। অন্যদিকে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এখন ঘটনার তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছে। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা তদন্ত কার্যক্রম তদারক করছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি ও ফরেনসিক রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি পেহেলগামের ঘন জঙ্গলে চিরুনি অভিযানও চলছে। জম্মু কাশ্মীর পুলিশ সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীলদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান জোরদার করেছে। গত দুই দিনে সন্দেহভাজন বন্দুকধারীদের সঙ্গে যুক্ত ছয়টি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনপেহেলগামের ঘটনায় একের পর এক বাড়ি ধ্বংস, সরকারকে সতর্ক করল কাশ্মীরের দলগুলো২ ঘণ্টা আগে

পেহেলগাম হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে। পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে এবং আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। সব পাকিস্তানি নাগরিককে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, চুক্তি স্থগিত করা হলে তা ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে বিবেচিত হবে এবং তারা শিমলা চুক্তিসহ সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত করতে পারে।

সরকারি তথ্য মতে, গত শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত ৫০৯ জন পাকিস্তানি নাগরিক ভারত ছেড়েছেন। এদের মধ্যে ৯ জন কূটনীতিকও রয়েছেন। এদিকে ৭৪৫ জন ভারতীয় নাগরিক পাকিস্তান থেকে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ফিরে এসেছেন।

আরও পড়ুনপাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে পরীক্ষার মুখে ভারতের সামরিক বাহিনী৮ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ