টিস্যু কালচারে স্বপ্নযাত্রা ২০ তরুণ গবেষকের
Published: 28th, April 2025 GMT
দেশের কৃষি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থীর চোখে স্বপ্ন আর অবয়বে আত্মপ্রত্যয়। কেউ গবেষণা করেছেন জারবেরা ফুলের চারা উৎপাদনের পদ্ধতি নিয়ে, কেউবা কাজ করেছেন আনারসের উন্নত চারা তৈরির উপায় বের করতে। কারও গবেষণার বিষয় মিষ্টি আলুর চারা উৎপাদন, সুগারবিটের চারা তৈরির কৌশল। বাদ পড়েনি অর্কিড, আদা, সবরি কলা, স্ট্রবেরি, গ্লাডিওলাস, স্টেভিয়াও। টিস্যু কালচার পদ্ধতি ব্যবহার করে রোগমুক্ত এবং তুলনামূলক কম সময়ে অধিক ফলনশীল চারা উৎপাদন নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন এই গবেষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পে’র ল্যাবে এসব গবেষণাপত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তরুণ গবেষকরা ১৫টি ফসলের চারা তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবনে কাজ করছেন। উদ্দেশ্য হলো– এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ল্যাবরেটরিতে উন্নত-রোগমুক্ত চারা উৎপাদন করে কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে। পুরো এই গবেষণায় নেওয়া হবে কৃষকের অভিজ্ঞতা।
সোমবার রাজধানীর ফার্মগেটে খামারবাড়িতে কৃষি তথ্য সার্ভিস অডিটোরিয়ামে টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে গবেষণার জন্য ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়া হয়। প্রকল্পের সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কৃষি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্বপ্নবাজের নতুন পথচলা শুরু হলো।
অনুদান হস্তান্তর অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.
টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক তালহা জুবায়ের মাশরুর বলেন, ‘আমরা তরুণ গবেষকদের মাধ্যমে ১৫টি ফসলের টিস্যু কালচার রিজেনারেশন প্রটোকল তৈরি করব। ভবিষ্যতে এ প্রটোকল ব্যবহার করে উন্নতমানের রোগমুক্ত চারা উৎপাদন করা হবে। এই চারা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে বিতরণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘তরুণ গবেষকদের যুক্ত করে আমরা এমন একটি টেকসই গবেষণা-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবন সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজে লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি কার্যকর সংযোগ তৈরি হচ্ছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে, যেখানে গবেষণাগার আর কৃষিজমির মধ্যে আর কোনো দূরত্ব থাকবে না। একটা সময় ছিল যখন উন্নত জাতের রোগমুক্ত চারা ছিল দুর্লভ, এখন সেই চারাই হবে কৃষকের জন্য সহজলভ্য। এই অভিযাত্রার নায়ক হচ্ছেন দেশের তরুণ গবেষকরা, যারা নিঃশব্দে গড়ে তুলবে আগামীর সোনালি কৃষি।’
তরুণ গবেষক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে কৃষিবিজ্ঞানীদের অনন্য অবদানের ফলে। সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ। প্রতিকূল প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের লড়তে হবে। লবণাক্ততা, বন্যা, খরা তো আছেই, রোগজীবাণুকে কীটনাশক ছাড়া প্রযুক্তি দিয়ে দমন করার কৌশল বের করতে হবে। আমরা যে যাত্রা শুরু করেছি, তা কৃষকের কাছে ছড়িয়ে দিতে না পারলে এ গবেষণার কোনো মূল্য নেই। আমাদের আশা, কৃষক এই গবেষণার সুফল পাবেন।’
প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং অফিসার মো. জামাল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক এস. এম. সোহরাব উদ্দিন, পরিকল্পনা ও আইসিটি উইংয়ের পরিচালক মো. আব্দুস সাত্তার, টিস্যু কালচার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ একরামুল হক। উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. ফাহমিদা খাতুন, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল হক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ও প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রহিম, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মেহেদি হাসান খান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প র র গম ক ত আম দ র ষকদ র
এছাড়াও পড়ুন:
দুই মাস ফ্রিজে রাখার পর মামুনের মাথায় খুলি পুনঃস্থাপন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী মামুন মিয়ার মাথায় খুলি প্রায় দুই মাস ফ্রিজে সংরক্ষণ করার পর সফলভাবে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) চট্টগ্রাম পার্কভিউ হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে খুলি পুনঃস্থাপন করেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মামুন মিয়ার মাথায় সফলভাবে অপারেশন করা হয়েছে। তিনি এখন সুস্থ আছেন।
গত ৩০ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মাথায় আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন মামুন মিয়া।
চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশের পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ টি এম রেজাউল করিম জানিয়েছেন, চবিতে সংঘর্ষের দিন গুরুতর আহত অবস্থায় মামুন মিয়াকে পার্কভিউ হাসপাতালে আনা হয়েছিল। সেই থেকে তিনি এখানে চিকিৎসাধীন আছেন। অপারেশনের সময় তার মাখার খুলি খুলে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় দুই মাস পর সফল অপারেশনের মাধ্যমে শনিবার মামুনের মাথার খুলি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন।
গত ৩০ আগস্ট তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়। এতে মামুনসহ চবির অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী আহত হন। মাথায় মারাত্মক আঘাতের কারণে মামুনের মাথার খুলি খুলে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
ঢাকা/রেজাউল/রফিক