রাজধানীর পরিবেশ রক্ষা ও পরিকল্পিত নগরায়ণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলেছেন, এ জন্য সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

গতকাল সোমবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নগর ভবনে ডিএনসিসি ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ন্যায্য নগর গঠনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে বক্তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। 

মূল প্রবন্ধে ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.

আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, রাজধানী ঢাকা জীবনমান সূচকে শেষ দিক থেকে চতুর্থ, বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর, বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে, দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ, বসবাসের অযোগ্য তালিকার প্রথম সারিতে। যানজটের সূচকে ৫ নম্বরে থাকা পৃথিবীর চতুর্থ ঘনবসতিপূর্ণ এই ঢাকা শব্দ দূষণেও শীর্ষে এবং স্বাস্থ্যসেবা সূচকে শেষের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্সের (ইপিআই) ২০২৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৫তম। তিনি বলেন, এসব দূষণ থেকে পরিত্রাণের অন্যতম উপায় জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ঢাকার আশপাশের উদ্ধারকৃত নদীর পারকে কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব। এতে করে জাস্ট ট্রানজিশন এবং ন্যায্য নগরের যে চিন্তাভাবনা আমরা ধারণ করছি, তা অর্জন করা সম্ভব। রুফটপ সোলার প্যানেল ব্যবহারকারীদের হোল্ডিং ট্যাক্সের ওপর ৫% কর রেয়াত দেওয়ার কথা ভাবছে ডিএনসিসি। 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান, বিআইপির প্রেসিডেন্ট পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এবং চেয়ারম্যান ড. এম শহীদুল ইসলাম, বিআইপির উপদেষ্টা বোর্ডের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির প্রাক্তন ডিন ড. ইজাজ হোসেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্রের (সিথ্রিইআর) সমন্বয়ক (অপারেশন্স) রৌফা খানম, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের (ডব্লিউবিবিটি) পরিচালক গাউস পিয়ারী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুজ্জামান মজুমদার, ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ, ইয়ুথনেট গ্লোবালের সমন্বয়ক সোহানুর রহমান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের রিসার্চ লিড ইঞ্জিনিয়ার মারজিয়াত রহমান প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড এনস স ম হ ম মদ ড এনস স ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ