পাকিস্তান যেকোনো কিছুর জন্য তৈরি, ভারত চেষ্টা করে দেখতে পারে: খাজা আসিফ
Published: 29th, April 2025 GMT
বিদেশি বন্ধুদেশগুলো যখন দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে অব্যাহত আহ্বান জানাচ্ছে, তখন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ভারত যেকোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নিলে তার জবাব দিতে প্রস্তুত আছে তাঁর দেশ। গতকাল সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) চার দিন ধরে গোলাগুলি চলছে। একে অপরের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ তুলছে দেশ দুটি।
খাজা আসিফ বলেন, ‘আমরা আমাদের বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করেছি। কারণ, এখন এটি (সম্ভাব্য হামলা) অত্যাসন্ন হয়ে উঠেছে। তাই এমন পরিস্থিতিতে কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশটির সরকারকে সামরিক বাহিনী একটি সম্ভাব্য ভারতীয় হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছে। তবে কী কারণে একটি হামলা অত্যাসন্ন বলে মনে করছেন, তা জানাননি খাজা আসিফ।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর ভারতের আগ্রাসী অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে খাজা আসিফ এ মন্তব্য করেছেন। ২২ এপ্রিল পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন বিদেশি পর্যটকও আছে। হামলায় আহত হয়েছেন অনেকে। এর পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।
পেহেলগামে হামলার পরপরই ভারত দাবি করে, সন্দেহভাজনদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানের নাগরিক। যদিও দেশটি এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ইসলামাবাদ এ অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে এবং হামলার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ বলেন, পাকিস্তান সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ‘আমাদের অস্তিত্বের ওপর সরাসরি হুমকি এলে’ তবেই কেবল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হবে।
পরে সামা টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ বলেন, ‘মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা উচিত। কারণ, দ্রুতই যুদ্ধ শুরু হতে পারে।’
চ্যানেলটি আরও জানায়, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আগামী এক, দুই, তিন বা চার দিনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার ‘পরিষ্কার আশঙ্কা’ রয়েছে।
তবে পরে তাঁকে এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হয়। জিও নিউজকে তিনি বলেন, ‘তারা (চ্যানেল) আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, যুদ্ধের আশঙ্কা কতটুকু। আমি বলেছি, আগামী দুই-তিন দিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি কিছু ঘটে, তবে আগামী দুই থেকে চার দিনের মধ্যেই ঘটবে…অন্যথায় তাৎক্ষণিক বিপদ কেটে যাবে।’
মন্ত্রী আবারও বলেন, তাঁর বক্তব্য যেন এমনভাবে না ব্যাখ্যা করা হয় যে যুদ্ধ অবশ্যই দু-তিন দিনের মধ্যেই শুরু হবে। তিনি কেবল বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
যুদ্ধের আশঙ্কা পুনর্ব্যক্ত করে খাজা আসিফ বলেন, এ পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব। কারণ, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশও উত্তেজনা কমানোর জন্য কাজ করছে।
খাজা আসিফ জানান, ইসলামাবাদ তার মিত্রদেশগুলো, যেমন উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো ও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যদেরও বিষয়টি অবহিত করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের উপসাগরীয় কয়েকজন বন্ধু উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে।’ তবে তিনি দেশগুলোর নাম উল্লেখ করেননি।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত৯ ঘণ্টা আগেগত এক সপ্তাহে চীন, সৌদি আরব, ইরান ও যুক্তরাজ্যের নেতারা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা সবাই উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে গতকাল বেইজিং, ওয়াশিংটন, আঙ্কারা ও দোহা জানিয়েছে, তারা আশা করে ভারত ও পাকিস্তান সংযত থাকবে। তারা উত্তেজনা প্রশমনে সহায়ক সব পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
আরও পড়ুনকাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড়, ভাঙা হচ্ছে বাড়ি: ‘আমার ভাই জড়িত থাকলেও পরিবারের অপরাধ কী’১২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।