বর্তমানে অনেকেই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দেশে বসে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের গ্রাহকদের (ক্লায়েন্ট) জন্য কাজ করছেন। নিয়মিত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন ফ্রিল্যান্সাররা। তবে বাংলাদেশে পেপ্যাল, ওয়াইজ ও স্ট্রাইপের মতো আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালু না হওয়ায় গ্রাহকদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক পেতে বেশ সমস্যায় পড়ছেন ফ্রিল্যান্সাররা। শুধু তা–ই নয়, অনেক গ্রাহক পেপ্যাল, ওয়াইজ ও স্ট্রাইপের মতো পেমেন্ট গেটওয়ে না থাকার কারণে ফ্রিল্যান্সারদের কাজ দেন না। আর তাই বাংলাদেশে দ্রুত পেপ্যালসহ বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ও আইটি প্রফেশনাল কমিউনিটি। বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর জন্য এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ আইসিটি–বিষয়ক উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছে সংগঠনটি। আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ফ্রিল্যান্সার এমরাজিনা ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আইটি খাতের অগ্রগতির জন্য আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করা সময়ের দাবি। দেশের বিভিন্ন এলাকার ফ্রিল্যান্সাররা গেটওয়ে সমস্যার কারণে বেশি কাজ করতে পারছেন না।’ ফ্রিল্যান্সার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে আইটি ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করছেন। এখনো নানা জটিলতায় দেশে পেপ্যালের মতো আন্তর্জাতিক গেটওয়ে চালু হচ্ছে না। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক গেটওয়ে চালুর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলে আমরা আশা করছি। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই এসব গেটওয়ে চালু আছে। ৩ দশমিক ২ শতাংশ গ্লোবাল মার্কেট শেয়ার নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং বাজার। এ কারণে গেটওয়ের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও পড়ুনদেশে পেপ্যাল জরুরি কেন, বললেন ফ্রিল্যান্সাররা ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ফ্রিল্যান্সাররাও উপস্থিত ছিলেন। পটুয়াখালী থেকে আসা ফ্রিল্যান্সার এইচ এম আথির আল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ২০১৭ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিং করছি। এখনো পেমেন্ট–সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। আর তাই আমরা স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দেশে পেপ্যালসহ আন্তর্জাতিক সব পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর জন্য কয়েক মাস ধরে প্রায় ৪০ হাজার ফ্রিল্যান্সার বিভিন্ন ফোরামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আতিকুর রহমান, সাজিদ ইসলাম ও আতাউর রহমান। স্মারকলিপি পড়ে শোনান এমরাজিনা ইসলাম।

আরও পড়ুনআসি আসি করে পেপ্যাল কেন আসে না০৬ জানুয়ারি ২০২২.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ম ন ট গ টওয় চ ল র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ