দেশজুড়ে এলজিইডি অফিসে দুদকের হানা, মিলেছে অনিয়মের তথ্য
Published: 29th, April 2025 GMT
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়সহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের ৩৬টি অফিসে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক টিম।
ঢাকা: রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এলজিইডির প্রধান কার্যালয় অভিযান চালায় দুদক। প্রধান কার্যালয়ে অভিযানের নেতৃত্বে আছেন দুদকের সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা ও মনির মিয়া।
গাইবান্ধা: ফুলছড়ি উপজেলায় এডিপি প্রকল্পে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশলীর (এলজিইডি) কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুদক। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর সমন্বিত দুদক কার্যালয়ের তিন সদস্যের একটি দল অভিযান পরিচালনা করে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহী এলজিইডিতে দুদক: এক ঠিকাদারের কাজে অন্যজন
টাঙ্গাইলে এলজিইডিতে দুদকের অভিযান
রংপুর সমন্বিত দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রায়হান বকশী বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় তিন সদস্যের একটি ইনফোর্সমেন্ট টিমের সমন্বয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে অস্তিত্বহীন যেমন অবকাঠামো ও রাস্তা নির্মাণে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আজকে আমরা অভিযান পরিচালনা করলাম। অভিযানে বেশ কিছু অসঙ্গতি পেয়েছি। অসঙ্গতি গুলো পুনরায় যাচাই-বাছাই করে আমরা রিপোর্ট জমা দেব।”
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ে (এলজিইডি) অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দিনভর উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের আওতাধীন গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট পরিদর্শন করেন দুদকের একটি টিম।
কুড়িগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, “প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা উলিপুরে অভিযান পরিচালনা করেছি। যেসব প্রকল্পের অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে, সেসব রাস্তা সরেজমিন তদন্ত করে স্যাম্পল সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরবর্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।”
কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নির্মিত একটি সড়কে দুদক অভিযান পরিচালনা করেছে। দুদক জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে কিশোরগঞ্জ-নীলগঞ্জ-তাড়াইল সড়কে নির্মাণকাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও কাজের মান বজায় না রাখার অভিযোগে এ অভিযান চালানো হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক ইশতিয়াদ আহমেদ জানান, এই সড়ক নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এমন অভিযোগে দুদক অভিযান চালায়। তারা এলজিইডির কাউকে না রেখে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে একজন নিরপেক্ষ প্রকৌশলী মাধ্যমে সড়কের গুণগতমান পরীক্ষা করেছে। সড়ক নির্মাণে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির খুঁজে পাননি তারা।
নোয়াখালী: অনিয়ম, কাজে ঠিকাদারদের গাফিলতি, প্রকল্পের কাজে শেষ না করেই টাকা উত্তোলনসহ বিভিন্ন অভিযোগে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুদক নোয়াখালী জেলা সমন্বিত কার্যালয়।
অভিযান চলাকালে উপজেলা এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী মো.
দুদকের নোয়াখালী জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, প্রাথমিকভাবে কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। কাগজিক সমস্যাও রয়েছে। কাজের মান যাচাইয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ে যাওয়া হয়। খোয়া ও বালুসহ রাস্তা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
এলজিইডির উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাহমিনা শারমিন বলেন, “তেমন কোনো অসঙ্গতি, অনিয়ম বা দুর্নীতির কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে কাগজিক কিছু সমস্যা পেয়েছে। সেগুলো তারা ফটোকপি করে নিয়ে গেছে। আর মাঠ পর্যায়ে কি পেয়েছে আমি সেটা জানি না।”
জামালপুর: জামালপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অফিসে অভিযান পরিচালনা করছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এলজিইডি বাস্তবায়নাধীন তিনটি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তারা অভিযান চালান।
জামালপুর দুদক কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক জিহাদুর ইসলাম এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী রোজদিদ আহম্মেদের সঙ্গে জাইকার প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এসময় খাল পুনঃখনন, রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের সব তথ্য চায় দুদক।
দুদকের উপ-পরিচালক জিহাদুর ইসলাম জানান, জাইকার অর্থায়নে জামালপুর সদর উপজেলায় দুইটি ও সরিষাবাড়ী উপজেলার একটি খাল খনন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়গুলো নিয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, “কার্যালয় থেকে ওই প্রকল্পের কাজ তদারকি করা হয়। প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা রয়েছে, জামালপুর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর বংশাই খালের ১২.৪০ কিলোমিটার, নান্দিনা ভালুকা শ্রীপুরে এলাকায় খালের ২৪ কিলোমিটার, এবং সরিষাবাড়ী উপজেলার বড়বাড়িয়া এলাকায় খালের ৩.৮ কিলোমিটার পুনঃখনন প্রকল্প এই তিনটি প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৫ কোটি টাকা। এই ৫ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলকে অনুরোধ করেছি। পরবর্তীতে আমরা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠাব।”
জামালপুর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী রোজদিদ আহম্মেদ বলেন, “সদর উপজেলা দুইটি ও সরিষাবাড়ী উপজেলার একটি খাল খনন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ওই কাজের সকল তথ্য এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ দেখার জন্য দুদকের একটি টিম এসেছিল।”
গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় এলজিইডি অফিসে অভিযান সম্পর্কে দুদকের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের প্রধান উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, “নিম্নমানের কাজ, বিল জালিয়াতি ও ঘুষ লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমাদের দল মাঠে কাজ করছে।”
রাজশাহী: দুদকের সদস্যরা রাজশাহী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলামের কক্ষে প্রবেশ করে তার উপস্থিতিতে সরকারি কাজের বিভিন্ন প্রকল্পের ফাইলপত্র দেখেন। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এরপর এলজিইডির কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তারা।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, “ঠিকাদারদের বিল প্রদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কমিশন বা ঘুষ নেওয়া হচ্ছে বলে আমরা অভিযোগ পাই। আমরা সব প্রকল্পের নথিগুলো দেখলাম। যে নির্বাহী প্রকৌশলী বা যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।”
তিনি বলেন, “আমরা কমিশন আদায়ের তাৎক্ষণিক প্রমাণ পাইনি। তবে এটা দেখলাম যে, এক ঠিকাদার কাজ পেয়ে অন্য কেউ কাজ করছেন। প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রে এই অনিয়ম হচ্ছে। কাজ নিয়ে নিজে না করে অন্য কেউ করলে অনিয়ম হওয়ার সুযোগ থেকে যায়। এভাবে কাজ হস্তান্তর করা প্রাথমিক অপরাধের মধ্যে পড়ছে। আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।”
গত ১৬ এপ্রিল দেশের ৩৫টি সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে একযোগে অভিযান চালিয়েছিল দুদক। ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম, দুর্নীতি, গ্রাহকদের সেবা থেকে বঞ্চিত করা, অতিরিক্ত ফি আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে এই অভিযান চালানো হয়েছিল।
এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা।
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন প রকল প প রকল প র উপজ ল র র সহক র র উপজ ল র একট সরক র লগঞ জ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ
রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।
জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’
এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ।