স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়সহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের ৩৬টি অফিসে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক টিম। 

ঢাকা: রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এলজিইডির প্রধান কার্যালয় অভিযান চালায় দুদক। প্রধান কার্যালয়ে অভিযানের নেতৃত্বে আছেন দুদকের সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা ও মনির মিয়া।

গাইবান্ধা:  ফুলছড়ি উপজেলায় এডিপি প্রকল্পে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশলীর (এলজিইডি) কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুদক। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর সমন্বিত দুদক কার্যালয়ের তিন সদস্যের একটি দল অভিযান পরিচালনা করে।

আরো পড়ুন:

রাজশাহী এলজিইডিতে দুদক: এক ঠিকাদারের কাজে অন্যজন

টাঙ্গাইলে এলজিইডিতে দুদকের অভিযান

রংপুর সমন্বিত দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফেরদৌস রায়হান বকশী বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন ঢাকার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় তিন সদস্যের একটি ইনফোর্সমেন্ট টিমের সমন্বয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে অস্তিত্বহীন যেমন অবকাঠামো ও রাস্তা নির্মাণে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আজকে আমরা অভিযান পরিচালনা করলাম। অভিযানে বেশ কিছু অসঙ্গতি পেয়েছি। অসঙ্গতি গুলো পুনরায় যাচাই-বাছাই করে আমরা রিপোর্ট জমা দেব।”

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা প্রকৌশল কার্যাল‌য়ে (এলজিইডি) অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দিনভর উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের আওতাধীন গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট প‌রিদর্শন ক‌রেন দুদকের এক‌টি টিম।

কুড়িগ্রাম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, “প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা উলিপুরে অভিযান পরিচালনা করেছি। যেসব প্রকল্পের অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে, সেসব রাস্তা সরেজমিন তদন্ত করে স্যাম্পল সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরবর্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।”

কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নির্মিত একটি সড়কে দুদক অভিযান পরিচালনা করেছে। দুদক জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে কিশোরগঞ্জ-নীলগঞ্জ-তাড়াইল সড়কে নির্মাণকাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও কাজের মান বজায় না রাখার অভিযোগে এ অভিযান চালানো হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক ইশতিয়াদ আহমেদ জানান, এই সড়ক নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এমন অভিযোগে দুদক অভিযান চালায়। তারা এলজিইডির কাউকে না রেখে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে একজন নিরপেক্ষ প্রকৌশলী মাধ্যমে সড়কের গুণগতমান পরীক্ষা করেছে। সড়ক নির্মাণে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির খুঁজে পাননি তারা।

নোয়াখালী: অনিয়ম, কাজে ঠিকাদারদের গাফিলতি, প্রকল্পের কাজে শেষ না করেই টাকা উত্তোলনসহ বিভিন্ন অভিযোগে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুদক নোয়াখালী জেলা সমন্বিত কার্যালয়।

অভিযান চলাকালে উপজেলা এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী মো.

ইসলাম হোসেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাহমিনা শারমিন, আকরাম হোসন (আইআরআইডিপি-৩) উপস্থিত ছিলেন।

দুদকের নোয়াখালী জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, প্রাথমিকভাবে কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। কাগজিক সমস্যাও রয়েছে। কাজের মান যাচাইয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ে যাওয়া হয়। খোয়া ও বালুসহ রাস্তা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

এলজিইডির উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাহমিনা শারমিন বলেন, “তেমন কোনো অসঙ্গতি, অনিয়ম বা দুর্নীতির কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে কাগজিক কিছু সমস্যা পেয়েছে। সেগুলো তারা ফটোকপি করে নিয়ে গেছে। আর মাঠ পর্যায়ে কি পেয়েছে আমি সেটা জানি না।”

জামালপুর: জামালপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অফিসে অভিযান পরিচালনা করছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এলজিইডি বাস্তবায়নাধীন তিনটি প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তারা অভিযান চালান।

জামালপুর দুদক কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক জিহাদুর ইসলাম এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী রোজদিদ আহম্মেদের সঙ্গে জাইকার প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এসময় খাল পুনঃখনন, রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের সব তথ্য চায় দুদক।

দুদকের উপ-পরিচালক জিহাদুর ইসলাম জানান, জাইকার অর্থায়নে জামালপুর সদর উপজেলায় দুইটি ও সরিষাবাড়ী উপজেলার একটি খাল খনন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়গুলো নিয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। 

তিনি বলেন, “কার্যালয় থেকে ওই প্রকল্পের কাজ তদারকি করা হয়। প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা রয়েছে, জামালপুর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর বংশাই খালের ১২.৪০ কিলোমিটার, নান্দিনা ভালুকা শ্রীপুরে এলাকায় খালের ২৪ কিলোমিটার, এবং সরিষাবাড়ী উপজেলার বড়বাড়িয়া এলাকায় খালের ৩.৮ কিলোমিটার পুনঃখনন প্রকল্প এই তিনটি প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৫ কোটি টাকা। এই ৫ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।  বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলকে অনুরোধ করেছি। পরবর্তীতে আমরা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠাব।”

জামালপুর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী রোজদিদ আহম্মেদ বলেন, “সদর উপজেলা দুইটি ও সরিষাবাড়ী উপজেলার একটি খাল খনন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ওই কাজের সকল তথ্য এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ দেখার জন্য দুদকের একটি টিম এসেছিল।”

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় এলজিইডি অফিসে অভিযান সম্পর্কে দুদকের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের প্রধান উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, “নিম্নমানের কাজ, বিল জালিয়াতি ও ঘুষ লেনদেনের মতো গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমাদের দল মাঠে কাজ করছে।”

রাজশাহী: দুদকের সদস্যরা রাজশাহী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলামের কক্ষে প্রবেশ করে তার উপস্থিতিতে সরকারি কাজের বিভিন্ন প্রকল্পের ফাইলপত্র দেখেন। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এরপর এলজিইডির কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তারা।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, “ঠিকাদারদের বিল প্রদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কমিশন বা ঘুষ নেওয়া হচ্ছে বলে আমরা অভিযোগ পাই। আমরা সব প্রকল্পের নথিগুলো দেখলাম। যে নির্বাহী প্রকৌশলী বা যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি।”

তিনি বলেন, “আমরা কমিশন আদায়ের তাৎক্ষণিক প্রমাণ পাইনি। তবে এটা দেখলাম যে, এক ঠিকাদার কাজ পেয়ে অন্য কেউ কাজ করছেন। প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রে এই অনিয়ম হচ্ছে। কাজ নিয়ে নিজে না করে অন্য কেউ করলে অনিয়ম হওয়ার সুযোগ থেকে যায়। এভাবে কাজ হস্তান্তর করা প্রাথমিক অপরাধের মধ্যে পড়ছে। আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।”

গত ১৬ এপ্রিল দেশের ৩৫টি সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে একযোগে অভিযান চালিয়েছিল দুদক। ঘুষ গ্রহণ, অনিয়ম, দুর্নীতি, গ্রাহকদের সেবা থেকে বঞ্চিত করা, অতিরিক্ত ফি আদায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে এই অভিযান চালানো হয়েছিল।

এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা।

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন প রকল প প রকল প র উপজ ল র র সহক র র উপজ ল র একট সরক র লগঞ জ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ