দেশ যখন ডাক দিচ্ছে, তখন দেশেই থেকো, এখানেই কাজ করো: শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিএসআরএমের চেয়ারম্যান
Published: 30th, April 2025 GMT
শিক্ষার্থীদের দেশে থেকে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় রড উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলীহোসাইন আকবরআলী। তিনি বলেছেন, ‘দেশ যখন তোমাকে ডাক দিচ্ছে, তখন বাইরে নয়, দেশেই থেকো, এখানেই কাজ করো, এখানেই গড়ে তোলো। আজ যদি তুমি তোমার উত্তরাধিকার তৈরি করো, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।’
আজ বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসআরএম স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আলীহোসাইন আকবরআলী।
বিএসআরএম ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই যৌথ উদ্যোগ সম্পর্কে আলীহোসাইন আকবরআলী বলেন, ‘ভালো কিছু তখনই সম্ভব, যখন প্রতিষ্ঠানগুলো বৃহত্তর কল্যাণের উদ্দেশ্যে একত্র হয়। আমরা বিশ্বাস করি, এই অংশীদারত্ব আগামী প্রজন্মের প্রকৌশলীদের গড়ে তোলার এক শক্তিশালী ভিত্তি হবে।’
বিএসআরএমের চেয়ারম্যান বলেন, তরুণ মেধাবীদের মধ্যে শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতা নয়, আধুনিক মূল্যবোধ, দায়িত্ববোধ ও দেশের সেবায় আত্মনিয়োগের মানসিকতাও গড়ে তুলতে হবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশে আলীহোসাইন আকবরআলী বলেন, শিক্ষার্থীদের শুধু বুদ্ধিমত্তা নয়, নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও সেবার মানসিকতা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে। এই মূল্যবোধগুলো শুধু তাঁদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নির্ধারণ করবে না, বরং দেশের ওপর একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ বক্তব্য দেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসকে উদ্ভাবন, দায়িত্বশীল প্রকৌশল ও টেকসই স্থাপত্যের এক সত্যিকারের নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এটি শুধু একটি ভবন নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সবুজ ক্যাম্পাস হয়ে ওঠার লক্ষ্যে নির্মিত একটি প্রাণবন্ত শিক্ষা-পরিবেশ। এই নতুন পরিসর কেবল শিখনের ক্ষেত্র নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি জীবন্ত গবেষণাগার।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তামারা হাসান আবেদ। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের নকশা একটি বার্তা বহন করে। আর তা হলো, টেকসই ব্যবস্থা কোনো বিকল্প নয়, এটিই মূল ভিত্তি। এই স্থাপনা তাঁদের এই বিশ্বাসকে তুলে ধরে—প্রকৌশল মানে শুধু সমস্যার সমাধান নয়, বরং এমন এক পরিবেশ গড়ে তোলা, যেখানে মানুষ ও প্রকৃতি হাতে হাত রেখে বিকশিত হতে পারে। এই ভাবনারই ধারাবাহিকতায় নতুন ক্যাম্পাসে অবস্থিত বিএসআরএম ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল একটি অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। যেখানে উদ্ভাবন, দায়িত্ববোধ ও দূরদর্শিতার সমন্বয়ে ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, বিএসআরএমের সঙ্গে এই অংশীদারত্ব শুধু টেকসই ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে না, বরং শিল্পক্ষেত্রের জ্ঞান একাডেমিয়ার সঙ্গে সমন্বিতভাবে বিকশিত হবে। বিশ্বজুড়ে তা ছড়িয়ে দেওয়ার পথ প্রশস্ত করবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক আরশাদ মাহমুদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ স্মরণে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এসআরএম র অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
দেশের শীর্ষস্থানীয় রড উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের দুই কোম্পানি মিলে ৯ মাসে ১৪ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। কোম্পানি দুটি হলো বিএসআরএম লিমিটেড ও বিএসআরএম স্টিল। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিএসআরএমের এই দুটি কোম্পানিরই মূল ব্যবসা রডের।
চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) কোম্পানি দুটি সম্মিলিতভাবে এই ব্যবসা করেছে। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানি দুটির সম্মিলিত ব্যবসা ছিল ১২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিএসআরএমের ব্যবসা বেড়েছে ১ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা বা ১৩ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের যে আর্থিক প্রতিবেদন কোম্পানি দুটি প্রকাশ করেছে, তা থেকে তাদের ব্যবসার এই চিত্র পাওয়া গেছে। গত সোমবার কোম্পানি দুটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। গতকাল বুধবার তা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে। আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত কোম্পানি দুটি ১৪ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকার যে ব্যবসা করেছে, তার মধ্যে বিএসআরএম লিমিটেডের ব্যবসা ৬ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকার। আর বিএসআরএম স্টিলের ব্যবসার পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ায় কোম্পানি দুটি মুনাফাও বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানির ব্যবসা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে। কারণ, আমাদের নতুন একটি কারখানা এ সময়ের মধ্যে উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে। তপন সেনগুপ্ত, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিএসআরএম গ্রুপবিএসআরএম লিমিটেড চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে মুনাফা করেছে ৪১৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩৩৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ৮১ কোটি টাকা বা ২৪ শতাংশের বেশি। আর চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বিএসআরএম স্টিল মুনাফা করেছে ৩০২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৭৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ২৩ কোটি টাকা বা সোয়া ৮ শতাংশ।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে মার্চ—এই ৯ মাসে সম্মিলিতভাবে কোম্পানি দুটি মিলে ৭১৭ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬১৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানি দুটির সম্মিলিত মুনাফা ১০৪ কোটি টাকা বা ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
মুনাফা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কোম্পানি–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৯ মাসে নতুন একটি কারখানার উৎপাদনে এসেছে। তাতে কোম্পানির বিক্রি বেড়েছে। ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ায় মুনাফাও বেড়েছে। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমাতেও সচেষ্ট ছিল কোম্পানিটি। এসব কারণে কোম্পানির মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বর্তমানে বিএসআরএমের রড তৈরির তিনটি কারখানা রয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফৌজদারহাট ও নাসিরাবাদে—তিনটি কারখানা অবস্থিত। এই তিন কারখানার মধ্যে মিরসরাই ও ফৌজদারহাটের কারখানা দুটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিএসআরএম স্টিলের আওতাধীন। আর নাসিরাবাদের কারখানাটি বিএসআরএম লিমিটেডের আওতায় রয়েছে। দুটি কোম্পানিরই মূল ব্যবসা রডের। তবে বিএসআরএম লিমিটেডের ব্যবসার সঙ্গে রডের বাইরে এঙ্গেল, চ্যানেলের আয়ও যুক্ত হয়।
বিএসআরএমের ব্যবসা ও মুনাফা বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানির ব্যবসা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে। কারণ, আমাদের নতুন একটি কারখানা এ সময়ের মধ্যে উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে। যদিও কারখানাটিতে এখনো পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়নি। তারপরও আংশিক উৎপাদন শুরুর কারণে বিক্রি বেড়েছে। আবার উৎপাদন খরচ কমানোর ক্ষেত্রে আমরা সচেষ্ট ছিলাম। এসব কারণে মুনাফা বেড়েছে।’
অর্থবছরের ৯ মাসের পাশাপাশি চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের আয়–ব্যয়ের হিসাবও আলাদাভাবে প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিএসআরএম লিমিটেড ২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে ৫৯৭ কোটি টাকার। ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ায় মুনাফাও বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিএসআরএম লিমিটেড মুনাফা করেছে ২২৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৪৭ কোটি টাকা।
একইভাবে বিএসআরএম স্টিল চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যবসা করেছে ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকার। এ সময় কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ১৬২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে ৬০২ কোটি টাকা। আর মুনাফা বেড়েছে ৩৭ কোটি টাকা।