আমরা কমবেশি অনেকেই জানি মে দিবস কেন চালু হয়েছে। তাই এটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে যেটা বলার আছে মে দিবস সম্পর্কে জানলেও এটা কয়জনের পালন করার সুযোগ রয়েছে? বা এতে আদৌ কি শ্রমিকদের কোন কল্যাণে এসেছে?
২০১৫ সালে আমি স্টুডেন্ট ভিসায় সাইপ্রাস যাওয়ার পর স্টাডির পাশাপাশি ওয়ার্কশপের কাজে যোগ দিই। প্রথম বছর মনে করেছিলাম ১লা মে সরকারি বন্ধ। মে দিবসের আগেরদিন বসকে বলেছিলাম আগামীকাল আমাদের ছুটি না?
সে হেসে বলল,“মে দিবস’ এটা আবার কি? এ সম্পর্কে তো আমি কিছু জানি না।” আসলেই ঐ দেশের প্রায় লোক মে দিবস সম্পর্কে অবগত নয়। অবগত হবার কথাও না, কারণ মে দিবসটি মূলত বিশেষ যে কারণে চালু করা হয়েছিল ১২ ঘণ্টা সাধারণ ডিউটির পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা করা হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে ১২ ঘণ্টা ডিউটি নেই বললেই চলে। ৮ ঘণ্টার বাইরে যা করবে তা ওভারটাইম হিসেবে মজুরি পরিশোধ করা হয়। সেজন্য তারা মে দিবসটিকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। ফলে সরকারিভাবে সেদিন কোন ছুটি নেই।
তবে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এমনকি মধ্যপ্রাচ্যেও এখনো ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সাধারণ ডিউটি চালু রয়েছে। শুধু বিশেষ কিছু সেক্টরে ৮ ঘণ্টা সাধারণ ডিউটি। তাই হয়ত আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে মে দিবস নিয়ে এতটা মাতামাতি হয়।
বলছিলাম সাইপ্রাসের কথা— তখন বন্ধুদেরকে মন খারাপ করে বলছিলাম ভাই কী চাকরি করি মে দিবসেও বন্ধ নেই। তখন তাদের মধ্যে কয়েকজন বলল, “ভাই তোমার কাজ আছে বলে বন্ধের জন্য চিন্তা কর আর আমাদের যে কাজই নাই। মে দিবস এসব দিয়ে আমরা কী করব?”
আসলেই প্রবাসে একদিন কাজ না থাকা মানে অনেক পিছিয়ে পড়া। সাইপ্রাসে অন্যান্য সরকারি ছুটিগুলিতে বন্ধ দিলেও বেতন দেওয়া হয় না। এখানে দৈনিক ডিউটির উপর বেতন নির্ভর করে। তাই এখানে সরকারি ছুটি পাওয়া মানে লসটা নিজের। সুতরাং এই ‘মে দিবস’ কি আদৌ গুরুত্বপূর্ণ? নাকি এটি নামেমাত্র?
এরপর যখন ২০২০ সালে আরব আমিরাতে আসলাম এখানেও দেখি একই অবস্থা। মে দিবসে শ্রমিকদের কোন ছুটি নেই। মধ্যেপ্রাচ্যের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। এখানে এসে দেখলাম মানুষের প্রতিটা সেকেন্ডের মূল্য আছে। যে যত বেশি কাজ করতে পারে ততবেশি আয়। আরব আমিরাতে যেহেতু এখন কাজের সুযোগ অনেক বেশি, তাই একজন মানুষ চাইলে মাসে ৩০ দিনই কাজ করতে পারে।
এখানে যারা কনস্ট্রাকশন সেক্টর বা বিভিন্ন সুপার মার্কেট ও গ্রোসারিতে কাজ করে, তারা আদৌ জানে না মে দিবস নামে যে একটা দিবস আছে। কারণ, এ দিবসে কোন বন্ধ নেই এখানেও। এখানে কনস্ট্রাকশন সেক্টরগুলিতে সাধারণ ডিউটি হল ৮ ঘণ্টা। সপ্তাহে একদিন ছুটি রয়েছে। ৮ ঘণ্টার বাইরে ও বন্ধের দিন কাজ করলে তা হল ওভারটাইম। মে দিবসের নামে যদি বন্ধ দিয়ে মালিকপক্ষ ঐ একদিনের বেতন কাটে তাহলে এই মে দিবস কি শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য নাকি অকল্যাণের জন্য- সে প্রশ্ন থেকে যায়!
আবার যারা ব্যবসা করে আরব আমিরাতে, এখানে ব্যবসা করা মানে একদিনে অনেক খরচ একদিন যদি ব্যবসা বন্ধ থাকে তাহলে অনেক টাকা লোকসান এখানে যে অপ্রয়োজনে একদিন ব্যবসা বন্ধ রাখবেন সে সুযোগ নেই। সুতরাং বলা যায় এই মে দিবস কারো পক্ষে গেলেও আবার কারো বিপক্ষে চলে যায়। তাই হয়ত পুঁজিবাদী দেশগুলিতে মে দিবস নামেমাত্র থাকলেও এটি পালন করা হয় না।
বাংলাদেশে যারা মে দিবস নিয়ে বেশি মাতামাতি করছে তারাও বলতে পারবে না এটি তাদের কোন কাজে আসে। একজন রিকশা বা সিএনজি চালক বা সাধারণ দিন মজুর যদি একদিন কাজ করতে না পারে তার পরিবার না খেয়ে থাকবে। এই মে দিবস দিয়ে তার পেট চলবে না। তাই বলা যায় শুধু প্রবাস কেন; দেশেও ছুটিহীন এই মে দিবস।
লেখক : প্রবাসী
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব স ক জ কর একদ ন ব যবস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীতে কর্মজীবী নারী হোস্টেল থেকে মরদেহ উদ্ধার
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ‘কর্মজীবী নারী হোস্টেল’ থেকে রিয়া আক্তার শান্তা (৩০) নামের এক নারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুরে হোস্টেলের একটি কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিউ মার্কেট থানার ওসি মো. হাফিজুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।”
আরো পড়ুন:
নেশা ও জুয়ায় টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ
বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশনে নারী
নিউ মার্কেট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হোসনে মোবারক জানান, হোস্টেল কর্তৃপক্ষের খবরে ঘটনাস্থলে গিয়ে সেখানে কক্ষের ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, নিজের পরিহিত ওড়না দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে পেচিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া ছিলেন।
পুলিশ জানায়, রিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকার দোহার এলাকায় অগ্রণী ব্যাংকে চাকরি করতেন। তিনি কর্মজীবী নারী হোস্টেলেই থাকতেন। তিনি বিবাহিত। তার বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার পলাশপুর গ্রামে। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন খন্দকার।
ঢাকা/এমআর/এসবি