রাজধানীর যানজট নিরসনে দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেওয়া হবে। নতুন জায়গা নির্ধারণ করা হয় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর সেতুর ওপারে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত বছরের জুনেই চালু হওয়ার কথা ছিল নতুন টার্মিনালটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে প্রায় ২৬ কোটি টাকা খরচ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

তবে এখন প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ সায়েদাবাদ থেকে টার্মিনাল কাঁচপুরে সরানো হবে কি না। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সরকার পরিবর্তনের পর। ২০২৩ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে টার্মিনাল স্থানান্তরের কাজ থমকে আছে।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ইতিমধ্যে অকার্যকর হয়ে গেছে। যানজট নিরসনে এটি সরিয়ে নেওয়া সময়ের দাবি।ঢাকা দক্ষিণ সিটির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রাজীব খাদেম

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৬ জেলার বাস যেন সায়েদাবাদ পর্যন্ত না আসে, এ লক্ষ্যেই কাঁচপুরে টার্মিনাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ‘বাস রুট র‍্যাশনালাইজেশন কমিটি’। পরিকল্পনা ছিল, দূরপাল্লার বাসযাত্রীরা কাঁচপুরে নামবেন এবং সেখান থেকে নগর পরিবহন বাসে গন্তব্যে পৌঁছাবেন। এতে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ীসহ আশপাশের এলাকা যানজটমুক্ত হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রাজীব খাদেম প্রথম আলোকে বলেন, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ইতিমধ্যে অকার্যকর হয়ে গেছে। যানজট নিরসনে এটি সরিয়ে নেওয়া সময়ের দাবি। তাঁর মতে, সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন সায়েদাবাদ টার্মিনালে ১৬ জেলার প্রায় ১১ হাজার বাস আসা-যাওয়া করে। এসব বাস যদি নগরীতে প্রবেশ না করে, তাহলে ঢাকার ৩০ শতাংশ যানজট কমানো সম্ভব।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সাড়ে ১২ একর জমিতে গত বছরের আগস্টে মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়, যা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। টার্মিনালের মাটি যাতে সরে না যায়, এ জন্য চারপাশে খুঁটি বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর থেকে কাজ প্রায় বন্ধ।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন সায়েদাবাদ টার্মিনালে ১৬ জেলার প্রায় ১১ হাজার বাস আসা-যাওয়া করে। এসব বাস যদি নগরীতে প্রবেশ না করে, তাহলে ঢাকার ৩০ শতাংশ যানজট কমানো সম্ভব।

গত ২১ মার্চ কাঁচপুর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত জমিতে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হলেও সেখানে আর কোনো নির্মাণকাজ চলছে না। স্থানীয়দের ভাষ্য, সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় বখাটেরা মাদক সেবনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

এদিকে সায়েদাবাদ ছাড়াও ফকিরাপুল, মতিঝিল, কমলাপুর, মালিবাগ, মানিকনগরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রাম-সিলেটমুখী বাস ছেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বড় অংশজুড়ে যানজট তৈরি হয়। কাঁচপুর টার্মিনাল চালু হলে এ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতো বলে মনে করেন ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের কর্মকর্তারা।

তবে যোগাযোগবিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল কাঁচপুরে টার্মিনাল করলেই যানজট সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, সেখান থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা করার ব্যবস্থা কেমন হবে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। যেহেতু ঢাকায় এখনো ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক গণপরিবহন নেই, যাত্রীরা বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল, সিএনজি কিংবা অন্য মাধ্যমে ঢাকায় প্রবেশ করবেন। এতে বরং যানজট আরও বাড়তে পারে।

কাঁচপুরে টার্মিনাল স্থানান্তর প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে অনেক দুর্বলতা আছে। যানজট নিরসনে কেবল টার্মিনালভিত্তিক চিন্তা করলে হবে না। ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।যোগাযোগবিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো.

হাদিউজ্জামান

তাঁরা বলছেন, টার্মিনাল এমন স্থানে করতে হবে, যেখানে মেট্রোরেলের সহজ সংযোগ থাকবে, যাতে যাত্রীরা সহজেই নগরীর ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন। পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বাসসেবার মতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে না নিলে এ প্রকল্প কার্যকর হবে না। এসব দিক বিবেচনায় না রেখে কাঁচপুরে যে পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়েছে, তা এখন ‘অপচয়’ হিসেবেই দেখছেন তাঁরা।

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বাইরেও পদ্মা সেতুর ওপারের বিভিন্ন জেলার বাস এখনো সায়েদাবাদ ও আশপাশের এলাকা থেকে চলাচল করছে। এসব বাসের জন্য কেরানীগঞ্জের বাঘৈর এলাকায় আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। তবে সেখানেও জমি অধিগ্রহণ ব্যয়বহুল হওয়ায় সেই প্রকল্পও থমকে আছে।

যেহেতু ঢাকায় এখনো ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক গণপরিবহন নেই, যাত্রীরা বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল, সিএনজি কিংবা অন্য মাধ্যমে ঢাকায় প্রবেশ করবেন। এতে বরং যানজট আরও বাড়তে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে টার্মিনাল সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকলে এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে না।

যোগাযোগবিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কাঁচপুরে টার্মিনাল স্থানান্তর প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে অনেক দুর্বলতা আছে। যানজট নিরসনে কেবল টার্মিনালভিত্তিক চিন্তা করলে হবে না। ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য নজট ন রসন ঢ ক য় প রব শ প রকল প পর বহন র এল ক সমন ব

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা থাকাকালে তাঁর ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বের উল্টো যাত্রা ঘটল: অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ (তিন শূন্য) তত্ত্ব সমর্থন করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে তার উল্টো যাত্রা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি থাকা অবস্থায় তাঁর থ্রি জিরো তত্ত্বের যে উল্টো যাত্রাটা ঘটল, এটা তাঁর খেয়াল করা দরকার। আমরা চাই, থ্রি জিরো তত্ত্বটাই অগ্রসর হোক।’

সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে’ শিরোনামে যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও প্রথম আলো।

বৈঠকে অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের “থ্রি জিরো” (তিন শূন্য) তত্ত্ব সারা পৃথিবীতে পরিচিত। আমি এটা খুবই সমর্থন করি যে শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য দারিদ্র্য। কিন্তু পুরো যাত্রাটা তো হচ্ছে উল্টো দিকে। অধ্যাপক ইউনূসের একটা সুযোগ ছিল যে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে থ্রি জিরো তত্ত্বের বাস্তবায়নের একটা মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে দাঁড় করানোর কিছু চেষ্টা করা। কিন্তু আমরা দেখছি, কীভাবে কার্বন নিঃসরণ আরও বাড়ে, সেটার একটা চেষ্টা চলছে। গত ১০ মাসে লক্ষাধিক বেকারত্ব বেড়েছে শুধু কারখানা বন্ধ করার কারণে আর দারিদ্র্য বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনি থাকা অবস্থায় তাঁর থ্রি জিরো তত্ত্বের যে উল্টো যাত্রাটা ঘটল, এটা তো তাঁর একটু খেয়াল করা দরকার। এতে তো আমরা খুশি না। আমরা তো চাই যে থ্রি জিরো তত্ত্বটাই অগ্রসর হোক।’

‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে’ শীর্ষক গোলটেবিলে আলোচকদের একাংশ। সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে

সম্পর্কিত নিবন্ধ