খাগড়াছড়ির দুর্গম হাজাপাড়ার প্রধান সমস্যাই ‘পানি’
Published: 3rd, May 2025 GMT
খাগড়াছড়ির জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার দুর্গম একটি গ্রামের নাম হাজাপাড়া। যে গ্রামে নেই কোন ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা, নেই স্বাস্থ্য সেবা, নেই কোন সুপেয় পানির ব্যবস্থা। সে গ্রামে অনেকগুলোর সমস্যার মধ্যে প্রধান সমস্যাই পানি, জানালেন গ্রামবাসীরা। তাদের দাবি, অন্তত সরকার যেন তাদের জন্য যে কোন উপায়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দেন।
মাটিরাঙ্গার অতি পুরনো এই গ্রামের বাসিন্দাদের গোসল আর পানির জন্য যেতে হয় অনেক দূরে খাড়া পাহাড়ের নিচে। আর বাজারে বা স্বাস্থ্য সেবার জন্য দেড়-দুই ঘণ্টা পায়ে হেঁটে যেতে হয়। গ্রামে নেই কোন টিউবওয়েল। সারা বছর তাদের কুয়া, ছড়া-গিরি-ঝিরি ও নালার পানি খেতে হয়। শুকনা মৌসুমে তো ছড়া-নালা-গিরি-ঝিরি শুকিয়ে গিয়ে আরও পানি সংকটে পড়তে হয়। বর্ষায় সব পানিতে নোংরা আবর্জনা জমে যায়। ফলে এই গ্রামবাসীদের সারা বছরই পানি সমস্যায় ভুগতে হয়।
এলাকার ইউপি মেম্বার উমেন্দ্র বিকাশ ত্রিপুরা উষাতন জানান, এ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আর পানির সমস্যা প্রকট। সারা বছরই পানির সমস্যায় ভূগতে হয়। এই সময়ে ছড়া নালা সব শুকিয়ে পানির সমস্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এমন পানি দিয়েই জীবন চলছে হাজাপাড়া গ্রামবাসীর
এই গ্রামের কৃতি সন্তান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদকপ্রাপ্ত ভাষা গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, “এই পাড়াটা অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল। গাড়ির কোন সংযোগ নেই। ব্রিজ কালভার্ট নেই। উন্নত দুনিয়া থেকে একটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল। এখানে পানির কোন ব্যবস্থা নেই, সুপেয় পানির জন্য অনেক দূরে যেতে হয়। এখানে রিং ওয়েল, টিউবওয়েল কোন কিছুই নেই। কাছাকাছি নেই কোন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রও। তাদের অনেক দূরে গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিতে হয়। তারা এক-দেড় ঘণ্টা পায়ে হেঁটে যাওয়ার পর কোন একটা বাহনে চড়ে তারা স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছাতে পারে। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা দরকার। এর মধ্য দিয়ে অন্যান্য সমস্যাগুলোর সমাধান করা যেতে পারে।”
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র দাশ এর কাছে বারবার গিয়েও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। মুঠো ফোনেও (০১৯১৪১৬২৮৪৭) সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, পার্বত্য অঞ্চলে সুপেয় পানির কমন সমস্যা, এটি নিয়ে তিনি কাজ করছেন। বর্ষাকালে কিছু পানি থাকলেও গ্রীষ্মকালে বা শুষ্ক মৌসুমে ছড়া নালার পানি কমে যায়। মাটিরাঙ্গা গোমতি হাজাপাড়ার বিষয়টি বিশেষভাবে দেখবেন। এছাড়া সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা করেছেন বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/রূপায়ন/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সমস য ব যবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
১৭ বছর ধরে নলকূপ থেকে গড়গড়িয়ে পড়ছে পানি, জন্মাচ্ছে কৌতূহল
ভবেরমুড়া। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই গ্রামটির অবস্থান বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত এলাকায়। এই গ্রামেরই একটি নলকূপকে ঘিরে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। নলকূপটিতে নেই কোনো হাতল বা বৈদ্যুতিক মোটরের সংযোগ। এরপরও দিনরাত নির্গত হচ্ছে সুপেয় পানি।
নলকূপটি যেখানে স্থাপন করা হয়েছে, সেটি ‘ভবেরমুড়া পাক দরবার শরীফ’ নামে একটি মাজার প্রাঙ্গণ। স্থানীয় ও মাজার কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই নলকূপটি প্রায় ১৭ বছর আগে স্থাপন করা হয়েছিল। স্থাপনের দিন থেকেই টানা ১৭ বছর ধরে সেটি থেকে অনবরত পানি বের হচ্ছে। এই পানি এলাকার লোকজন পান করছেন, যাচ্ছে কৃষিজমিতেও। এরই মধ্যে স্থানীয়দের মধ্যে নলকূপ নিয়ে বিভিন্ন বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করেছে। তাঁরা বলছেন, বিশেষ কোনো ‘কুদরতে’ গড়গড়িয়ে এই পানি পড়ছে। এ ছাড়া এই পানি পান করলে ‘মনের আশা পূরণ’ হয় ভেবেও অনেকে সেটি পান করছেন।
কুমিল্লা নগর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ভবেরমুড়া গ্রামটির অবস্থান। সোমবার দুপুরে সরেজমিনে ওই নলকূপ থেকে গড়গড়িয়ে পানি পড়তে দেখা গেছে। নলকূপটি থেকে পানি তুলতে চাপ দেওয়ার জন্য কোনো হাতলও নেই। নিজ থেকেই সেটির মুখ দিয়ে পানি পড়ছে। বের হওয়া পানির চাপও অনেক। আধা লিটারের একটি মগ ভরতে সময় লেগেছে মাত্র দুই সেকেন্ড। সে হিসাবে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার, এক ঘণ্টায় ৯০০ লিটার এবং দিন ও রাত মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় বের হচ্ছে ২১ হাজার ৬০০ লিটার পানি।
মূল কারণটা হচ্ছে ভূগর্ভে পাহাড়ি এলাকায় পানির স্তর অনেক ওপরে চলে আসে। যার কারণে কোনো নলকূপ স্থাপন করলে ওই সব লেয়ারে সংযোগ পেলেই পানির অধিক চাপে এভাবে অনবরত পানি নির্গত হয়। যেটির পানির চাপও ভালোই থাকে।মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, কুমিল্লাস্থানীয় বাসিন্দা শিউলি বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘গ্রামে ও মাজারের পাশে বর্তমানে অনেক টিউবওয়েল আছে। কিন্তু কোথাও থেকে এভাবে পানি পড়ে না। অন্য টিউবওয়েলে এক কলস পানি ভরতে অনেক সময় লাগে। আর এখানে এক মিনিটও লাগে না। এই পানি অনেক পরিষ্কার। আমরা এটি দিয়ে রান্না করি, নিজেরাও পান করি।’
সরেজমিনে দেখা দেখা যায়, গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন ওই নলকূপের পানি পান করছেন। কেউ হাত-মুখ ধুচ্ছেন, আবার কেউ গোসল করছেন। দূর থেকে আসা মানুষজন এই পানি কেউ জগ বা বোতলে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন। নলকূপ থেকে অনবরত বের হওয়া এই পানি পাইপ ও নালার মাধ্যমে চলে যাচ্ছে আশপাশের কৃষিজমিতে।
‘ভবেরমুড়া পাক দরবার শরীফ’ নামে ওই মাজারের বর্তমান পীর মাওলানা কাজী রফিকুল ইসলাম হক শাহ্। প্রথম আলোকে তিনি জানান, প্রায় ১৭ বছর আগে এই টিউবওয়েল তিনি নিজ উদ্যোগ নিয়ে স্থাপন করেন। এটির গভীরতা প্রায় ৬০০ ফুট। এই দরবার শরীফের (মাজার) বয়স প্রায় ১০০ বছর। এখানে তাঁর দাদা ও বাবাও এই মাজারের পীর ছিলেন। প্রতিবছর এতে বাংলাদেশ ও ভারতের অসংখ্য ভক্তের আগমন ঘটে। বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে এই দরবারের লক্ষাধিক ভক্ত রয়েছেন। মাজারে একসময় সুপেয় পানির অভাব ছিল। আশপাশেও পানির তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভক্তরা পুকুর থেকে পানি পান করতেন। সবার জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে এই নলকূপ বসানো হয়।
নলকূপটি থেকে নির্গত সুপেয় পানি সাধারণ মানুষ পান করার পাশাপাশি নানা কাজে ব্যবহার করান। অনেকে নিয়েও যান