এসএসসি পরীক্ষা: পুনর্নিরীক্ষণেই ধরা পড়ে এত ভুল, দাবি পুনর্মূল্যায়নের
Published: 17th, August 2025 GMT
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে একের পর এক ভিড় করছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। অনেকেরই অভিযোগ, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে। কেউ উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের অনুরোধ করছেন, কেউ আবার সামান্য নম্বরের জন্য জিপিএ-৫ হাতছাড়া হওয়ায় আক্ষেপ জানাচ্ছেন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দারকে একজন মা বারবার অনুরোধ করে বলছিলেন, তাঁর সন্তানের ধর্ম বিষয়ের উত্তরপত্র যেন পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। কারণ, সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেলেও ওই বিষয়ে ৭৯ নম্বর পেয়েছে। এতে জিপিএ-৫ হাতছাড়া হয়েছে। পুনর্নিরীক্ষণের পরও ফল না বদলানোয় তাঁর এই দাবি। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বোঝাচ্ছিলেন, আইনে পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ নেই; কেবল পুনর্নিরীক্ষণের সুযোগ আছে। তাই তিনি কিছু করতে পারছেন না।
একই দপ্তরে থাকা আরেক শিক্ষার্থী বললেন, একাধিক বিষয়ে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেও কেবল একটি বিষয়ে ফল বদলেছে। তাঁর পরিচিত অনেকেরই একই অবস্থা। আরেক অভিভাবক জানালেন, ‘শুধু মনের শান্তি’র জন্য হলেও সন্তানের খাতা দেখতে চাই, কিন্তু নিয়মের জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।
প্রশ্ন উঠছে, শুধু পুনর্নিরীক্ষণেই ধরা পড়ল এত ভুল, পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ থাকলে এই ফল কি আরও ভালো হতো?গত রোববার এসএসসি পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশের পরদিন সোমবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এভাবে ভিড় দেখা যায়। এবার কেবল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেই এসএসসিতে ২ হাজার ৯৪৬ জন পরীক্ষার্থীর ফল বদলেছে। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮৬ জন; ফেল থেকে সরাসরি জিপিএ-৫ পেয়েছে তিনজন। আর ফেল করা ২৯৩ জন এবার পাস করেছে। এ বছর কেবল ঢাকা বোর্ডেই ৯২ হাজার ৬৭৬ পরীক্ষার্থী ২ লাখ ২২ হাজার ৫৩৩টি পত্র পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছিল।
অন্য বোর্ড মিলিয়ে এ বছর ১৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই শুধু উত্তরপত্রের নম্বর গণনার ভুল ধরা পড়ার কারণে এমনটি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, শুধু পুনর্নিরীক্ষণেই ধরা পড়ল এত ভুল, পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ থাকলে এই ফল কি আরও ভালো হতো?
এসএসসি-এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষা একজন পরীক্ষার্থীর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, কিন্তু বিদ্যমান আইনের কারণে শিক্ষার্থীরা চাইলেও পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ পান না। বর্তমানে পরীক্ষক যে নম্বর দেন, সেটিই মূলত চূড়ান্ত ধরা হয়; অবমূল্যায়ন বা অতিমূল্যায়ন হলেও তা সংশোধনের সুযোগ নেই।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র বলছে, ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের নিয়ম থাকায় পরীক্ষকদের মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হয়। যা সঠিক মূল্যায়নের জন্য কম সময় বলে অভিযোগ আছে।গত ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। অর্থাৎ ৬ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে।
গত চার বছরের তথ্য বলছে, শুধু নম্বর গণনার ভুল সংশোধন করতেই প্রতিবছর শত শত পরীক্ষার্থীর ফল বদলায়। এর মধ্যে ২০২২ সালে ৭২৩ জন, ২০২৩ সালে ৩ হাজার ৮৫ জন, ২০২৪ সালে ২ হাজার ৭২৩ জন এবং ২০২৫ সালে ২ হাজার ৯৪৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র বলছে, ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের নিয়ম থাকায় পরীক্ষকদের মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হয়। যা সঠিক মূল্যায়নের জন্য কম সময় বলে অভিযোগ আছে। বিদ্যমান নিয়মে বেশ কয়েকজন বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষকের বিপরীতে একজন প্রধান পরীক্ষক থাকেন। তাঁর অধীনে আবার দুজন নিরীক্ষক (শিক্ষক) থাকেন। পরীক্ষকেরা উত্তরপত্রগুলো মূল্যায়ন করে নির্ধারিত শিটে (ওএমআর শিট) নম্বর দিয়ে প্রধান পরীক্ষকের কাছে পাঠান। নম্বর যোগ-বিয়োগ সঠিক হয়েছে কি না, তা নিরীক্ষকেরা দেখেন। আবার প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব তাঁর অধীন মূল্যায়ন হওয়া উত্তরপত্রের ১২ শতাংশ নিজে আবার দেখা। যদিও অভিযোগ আছে, এই কাজগুলো প্রায় সময়ই ঠিকমতো হয় না।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র বলছে, ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের নিয়ম থাকায় পরীক্ষকদের মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে হয়। যা সঠিক মূল্যায়নের জন্য কম সময় বলে অভিযোগ আছে।আইনে বদল আনার দাবিবর্তমান নিয়মে পুনর্নিরীক্ষণে শুধু উত্তরপত্রের প্রাপ্ত নম্বরের যোগ-বিয়োগের ভুলগুলো দেখা হয়, উত্তরপত্রের পুনর্মূল্যায়ন হয় না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তৃতীয় পরীক্ষক পর্যন্ত ব্যবস্থা থাকলে অথবা এখানে পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ থাকলে ফলাফলে আরও স্বচ্ছতা আসত, এমন মত দিয়েছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও বোর্ডের কর্মকর্তারা। দক্ষ ও অভিজ্ঞ পরীক্ষক নিয়োগ, তাঁদের সম্মানী বৃদ্ধি, উত্তরপত্র মূল্যায়নে সময় বাড়ানো ও যত্নশীলতা নিশ্চিত করা এবং তৃতীয় পরীক্ষকের ব্যবস্থা করার জন্য বিদ্যমান আইন সংশোধনের দাবি তুলেছেন তাঁরা।
ঢাকা বোর্ডের এক কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় মাত্র তিন ঘণ্টার পরীক্ষায় পাঁচ বছরের (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) পড়াশোনার সঠিক মূল্যায়ন কঠিন। তাই আরও শিক্ষার্থীবান্ধব ব্যবস্থা নিতে হবে।’
জানতে চাইলে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির প্রথম আলোকে, তাঁরা কেবল শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশ করেন। এখন ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে পুনর্মূল্যায়নসহ অন্য যেসব দাবির কথা বলছেন, সেগুলোর বিষয়ে আলোচনা করে কীভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাবেন তাঁরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ র থ র য় পর ক ষ ন পর ক ষ র ফল প র জন য সময় ব
এছাড়াও পড়ুন:
হেলথ টেকনোলজি ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং কোর্স, ভর্তির সুযোগ ৩০৪৩টি আসনে
সরকারি-বেসরকারি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে (ম্যাটস) যথাক্রমে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজি ও ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ভর্তির আসনসংখ্যা—৯টি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) ২ হাজার ৩৭৯ জন এবং ৭টি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে (ম্যাটস) ৬৬৪টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির আসন রয়েছে।
আবেদনের যোগ্যতা—১. প্রার্থীকে ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
২. প্রার্থীকে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় ‘বিজ্ঞান বিভাগে’ উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০ পেতে হবে।
৩. প্রার্থীকে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় ‘জীববিজ্ঞান’ অবশ্যই থাকতে হতে হবে এবং ন্যূনতম জিপিএ ২.০০ থাকতে হবে।
৪. বাংলাদেশের নাগরিক যারা ‘ও’ লেভেল বা সমমান এবং ‘এ’ লেভেল বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের মার্কশীটগুলো বাংলাদেশে প্রচলিত জিপিএতে রূপান্তর করে Equivalance Certificate বা ‘সমমানের সনদপত্র’ সংগ্রহ করা পর অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
টেলিটক প্রিপেইড নম্বরের মাধ্যমে কোর্স ফি বাবদ ৭০০ টাকা প্রদান করতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষার বিষয় ও নম্বর বণ্টন—
১. এসএসসি সিলেবাস অনুযায়ী এমসিকিউ পদ্ধতিতে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষায় বিষয় ও নম্বর থাকবে- বাংলায় ১৫, ইংরেজিতে ১৫, গণিতে ১৫, পদার্থবিজ্ঞানে ১৫, রসায়নে ১৫, জীববিজ্ঞানে ১৫ ও সাধারণ জ্ঞানে ১০ নম্বর।
২. পরীক্ষার সময় থাকবে এক ঘণ্টা।
৩. পরীক্ষায় পাশ নম্বর নির্ধারিত করা হয়েছে ৪০।