কৃষি ব্যাংক খুলনার রূপসা ঘাট শাখার ভল্ট ভেঙে ১৬ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ব্যাংকটির ওই শাখার ব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে শনিবার (১৬ আগস্ট) রাতে রূপসা থানায় মামলাটি করেন।  

এদিকে, ঘটনার দুইদিন অতিবাহিত হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক তিন নিরাপত্তা প্রহরীকে থানায় রাখা হয়েছে।

গত শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে ব্যাংকের টাকা লুট করে সন্ত্রাসীরা। ওইদিন রাতে ব্যাংকের তিনজন নিরাপত্তা প্রহরীকে আটক করে সংশ্লিষ্ট থানায় নেওয়া হয়। ব্যাংকের এই শাখা কার্যালয়টি পূর্ব রূপসা পেট্রোল পাম্প ও পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ড পুলিশ ফাঁড়ির কাছে খুলনা-মোংলা মহাড়কের পাশে অবস্থিত। ব্যাংকে চুরির খবরে এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।    

আরো পড়ুন:

পঞ্চগড়ে ছাত্রদল কর্মী হত্যা, গ্রেপ্তার ২ আসামি কারাগারে

সরকার উৎখাতের যড়যন্ত্রের মামলায় আ.

লীগ নেতা গ্রেপ্তার

সিসিটিভির ফুটেজ থেকে জানা গেছে, গত শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এই দুই ঘণ্টার মধ্যে ব্যাংকের বিভিন্ন গেটের ছয়টি তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে সন্ত্রাসীরা। তারা ব্যাংকের ভেতরের চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা কাপড় দিয়ে ঢেকে ক্যাশ কাউন্টারে প্রবেশ করে। ভল্টের তালা ভেঙে সেখানে রক্ষিত ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকার মধ্যে ১ হাজার ৪২০ টাকা রেখে বাকি টাকা নিয়ে যায় তারা। সিসিটিভি ফুটেজে একজন সন্ত্রাসীকে দেখা গেলেও মুখে কাপড় দিয়ে বাঁধা থাকায় তাকে চিহ্নিত করা যায়নি। 

সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে ব্যাংকের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ব্যাংকের তিন নিরাপত্তা প্রহরী আফজাল হোসেন, আবুল কাশেম ও তরিকুল ইসলাম এখনো পুলিশ হেফাজতে আছেন।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী আবুল কাশেম শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ব্যাংকের প্রধান গেট খোলা দেখতে পেয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানালে রূপসা থানার ওমি মো. মাহফুজুর রহমান ও স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। রাতেই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, খুলনা জেলা ডিবি পুলিশের টিম, ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাতে ব্যাংকের তিনজন নিরাপত্তা প্রহরীকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে রুবেল নামে এক ওয়ার্কশপ কর্মচারীকে আটক করে থানায় রাখা হয়েছে। 

এ বিষয়ে কৃষি ব্যাংকের খুলনা বিভাগীয় অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‍“ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করার নিয়ম থাকলেও এখনো করা হয়নি। আজ রবিবার (১৭ আগস্ট) করা হতে পারে।” 

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আটক তিন নিরাপত্তা প্রহরীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কারো নামে মামলা দেইনি। পুলিশ তাদের তিনজনসহ আরো একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ ব্যাপারে পুলিশ ভালো বলতে পারবে।”

কৃষি ব্যাংকের রূপসা ঘাট শাখার ম্যানেজার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “গত বৃহস্পতিবার অফিস শেষে আমরা সবাই বাড়ি চলে যাই।  শুক্রবার রাত ১০টায় নিরাপত্তা প্রহরীর মাধ্যমে জানতে পারি, ব্যাংকে চুরি হয়েছে। সন্ত্রাসীরা গেটের তালা ও ভেতরের ভল্ট ভেঙে ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকার মধ্যে ১ হাজার ৪২০ টাকা রেখে বাকি টাকা নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছি।”  

খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আল-বেরুনী বলেন, “প্রকৃত তথ্য উদঘাটনে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।” 

খুলনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মুক্ত রায় চৌধুরী বলেন, “মূল ঘটনা উদঘাটনে কাজ চলছে। দ্রুত এ ঘটনার রহস্য যাতে বের করা যায় এজন্য আমাদের টিম কাজ করছে।” 

রূপসা থানার ওসি মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যাংকের তিন নিরাপত্তা প্রহরীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের ম্যানেজার বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন।” 

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ জ ঞ স ব দ র জন য শ ক রব র সন ত র স প রহর ক ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গাজার ১০ লাখ নারী ও কিশোরী চরম অনাহারে: জাতিসংঘের সংস্থা

ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ ও বিধ্বংসী হামলার কারণে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় কমপক্ষে ১০ লাখ নারী ও কিশোরী চরম অনাহারের মুখে পড়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)। খবর সিনহুয়ার।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, গাজার নারী ও মেয়েরা ব্যাপক অনাহার, সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এখানে ক্ষুধা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে... নারী ও মেয়েরা জীবন বাঁচাতে ক্রমেই বিপজ্জনক কৌশল নিতে বাধ্য হচ্ছেন- যেমন খাবার ও পানি খুঁজতে বাইরে এমন স্থানে যেতে হচ্ছে যেখানে গুলি বা হামলায় নিহত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

২০ লাখেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ তুলে নেওয়া এবং ‘ব্যাপক পরিমাণে’ মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাটি।

আরো পড়ুন:

গাজাবাসীদের ভিসা স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র

গাজার ২০ শতাংশের বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে: ইউএনআরডব্লিউএ

শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে এক শিশুসহ আরো ১১ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ করার পর ইউএনআরডব্লিউএ এই মন্তব্য করেছে। গাজায় ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর মোট সংখ্যা ২৫১ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১০৮ জন শিশু।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের মোট সংখ্যা ৬১ হাজার ৯০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং আরো ১ লাখ ৫৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার, ১০৮টি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) একটি যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে বেশিরভাগ প্রধান আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে এক ট্রাকও জীবন রক্ষাকারী সহায়তা সরবরাহ করতে পারেনি। কেবল গত মাসেই, ইসরায়েলের যুক্তিতে ‘তারা সাহায্য প্রদানের জন্য অনুমোদিত নয়’ বলে কয়েক ডজন এনজিওর ৬০টিরও বেশি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

শুক্রবার, জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, ২৭ মে থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে, গাজায় সাহায্য চাইতে গিয়ে কমপক্ষে ১ হাজার ৭৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৯৪ জন ইসরায়েল সমর্থিত ত্রাণকেন্দ্র জিএইচএফের আশেপাশে এবং ৭৬৬ জন বিভিন্ন ত্রাণ সরবরাহ রুটে নিহত হয়েছে। এই হত্যার অধিকাংশ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে ঘটেছে।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছিল, গাজার মোট ২৪ লাখ মানুষের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ কয়েকদিন ধরে কোনো খাবার পাচ্ছে না।

জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে, ইসরায়েল মানবিক সাহায্যের পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস করেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ