সিলেটে ভোলাগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে আসা নদীর নাম ধলাই নদ। পাহাড় থেকে ঝরনার পানির স্রোতে এই নদী বেয়েই সাদা পাথর নেমে আসে। নদী শুধু বিশেষ কোনো জলধারা নয়। নদী সাধারণভাবে পাথরের এক বিশাল বাহক। পাহাড় থেকে নেমে আসা অসংখ্য পাথর নদীর স্রোতে ভেসে চলে আসে সমতলে। নদীর বিভিন্ন পাথর মূলত পৃথিবীর ভূত্বকে থাকা বিভিন্ন শিলার ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ।
পাথর তৈরির প্রক্রিয়াকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা অত্যধিক উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা বা লাভা ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে আগ্নেয় শিলা তৈরি হয়। আগ্নেয় শিলার মধ্যে গ্রানাইট ও ব্যাসল্ট অন্যতম। পাহাড়ের ওপরের অংশে এ ধরনের শিলা ব্যাপকভাবে দেখা যায়। এ ছাড়া পাললিক শিলা দেখা যায়। বিভিন্ন ধরনের শিলা, বালি, কাদা ও জৈব পদার্থ একত্র হয়ে স্তরে স্তরে জমাট বেঁধে এমন শিলা তৈরি হয়। নদীর তলদেশে বা প্রাচীন হ্রদের তলদেশে এই শিলা প্রায়শই দেখা যায়। বেলেপাথর বা স্যান্ডস্টোন ও চুনাপাথর বা লাইমস্টোন এমন শিলা। আমরা প্রকৃতিতে রূপান্তরিত শিলা দেখি। আগ্নেয় বা পাললিক শিলা উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়। মার্বেল ও স্লেট এমন ধরনের শিলা।
সিলেটের ভোলাগঞ্জে চুনাপাথর জমা হয়। এই পাললিক শিলা প্রধানত ক্যালসিয়াম কার্বনেট। পাহাড়ের ওপরে থাকা বিশাল শিলা আবহাওয়ার পরিবর্তন, তাপমাত্রা, বাতাস ও বৃষ্টির কারণে ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। এই ক্ষয়প্রাপ্ত অংশগুলো ছোট ছোট টুকরা হয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে নিচে আসে। বরফ গলে কিংবা বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে এসব পাথর নদীর স্রোতের সঙ্গে যুক্ত হয়। নদীর স্রোত পাথরের আকার ও ওজনের ওপর নির্ভর করে সেগুলোকে টেনে নিচে নামাতে থাকে। বড় ও ভারী পাথরগুলো স্রোতের অভাবে খুব বেশি দূর যেতে পারে না। তারা সাধারণত নদীর উপরিভাগে বা তীরে জমা হয়।
নদীর দীর্ঘ যাত্রায় পাথরগুলো ক্রমাগত একে অপরের সঙ্গে ও নদীর তলদেশের সঙ্গে ঘষা খেতে থাকে। এই ঘষা খাওয়ার ফলে পাথরের কোণগুলো মসৃণ হয়ে যায় এবং তাদের আকার ছোট হতে থাকে। এ কারণেই পাহাড়ি নদীর পাথরের আকৃতি প্রায়শই মসৃণ ও গোলাকার হয়। নদীর স্রোত যখন দুর্বল হয়ে যায়, তখন তা আর পাথর বা পলি বহন করতে পারে না। নদীর সমতল এলাকায় দুর্বল স্রোতের কারণে তলদেশে পাথর বেশি জমা হয়।
ভূতত্ত্ববিদেরা নদীর পাথর নিয়ে গবেষণা করে অনেক তথ্য জানার চেষ্টা করেন। পাথরের গঠন, আকার ও ধরন থেকে বোঝা যায় নদীর উৎপত্তিস্থল কোথায়, স্রোতের গতি কেমন এবং নদীটি কত পুরোনো। পাথরের মধ্যে থাকা জীবাশ্ম থেকে নদীর গতিপথের পরিবর্তন এবং লাখ লাখ বছর আগের ভূপ্রকৃতির ইতিহাসও জানা যায়।
সূত্র: দ্য লিভিং রিভার
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নদ র স র ত তলদ শ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিদিন বাড়ছে যমুনার পানি
বৃষ্টি ও উজানের ঢলে প্রতিদিনই যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। দুই সপ্তাহ ধরে ধীরগতিতে বাড়লেও গত ৪৮ ঘণ্টায় দ্রুতগতিতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে যমুনার পানি বিপৎসীমার কাছে চলে এসেছে।
যমুনায় পানি বাড়ার কারণে সিরাজগঞ্জের ফুলজোড়, করতোয়া, হুড়া সাগরসহ অন্যান্য নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। চরাঞ্চলের ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। তবে, এবার সিরাজগঞ্জে বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ (হার্ড পয়েন্টে) যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪৭ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৩ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১২.৯০ মিটার)। এ পয়েন্টে শুক্রবার ২২ ও বৃহস্পতিবার ২৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ছে।
অপরদিকে, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ০৪ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪.৮০ মিটার)। এ পয়েন্টে আগের দুই দিন পানি বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ২৪ ও ২২ সেন্টিমিটার।
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের কাটাঙ্গা গ্রামের কৃষক সামছুল শেখ বলেছেন, কয়েকদিন ধরে পানি বাড়তে থাকায় চরাঞ্চলের আবাদি জমি তলিয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। নিচু এলাকার জনবসতি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। রোপা আমন ধান, সবজি, মরিচসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হচ্ছে। এতে কৃষকদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমুল হোসাইন বলেছেন, কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে যমুনায় প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। ফলে, চরাঞ্চলের নিচু জমিগুলো তলিয়ে গেছে। কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে, পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি গেলেও অতিক্রম করার আশঙ্কা নেই।
ঢাকা/অদিত্য/রফিক