অন্তর্বর্তী সরকার নানা ইস্যু সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর ক্ষেত্র হয়তো তৈরি করতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

শুক্রবার রাজধানীর ফার্মগেট খামারবাড়িতে বার্ক অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের উদ্যোগে ইস্টার পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, অভিযোগ উঠেছে- সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করে অন্তর্বর্তী সরকার একদিকে পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছে। অন্যদিকে অত্যন্ত সুকৌশলে নানা ইস্যু সৃষ্টি করে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের ফাটল ধরানোর একটা ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে। পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীদেরও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রও হয়তো তৈরি করতে চাইছে। এই বিষয়গুলো ঘুরেফিরে মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন র‌্যাব সদস্যরা ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনকে গুম করে। আজ পর্যন্ত আমাদের এই সহকর্মীর হদিস আমরা পাইনি। স্বৈরাচারের শাসনকালে শুধু একজন সুমন নয়, ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে এ রকম অসংখ্য সুমনদের গুম, খুন ও অপহরণ করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে পলাতক স্বৈরাচারের সময় গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গুম হওয়া সুমনের বোনের নেতৃত্বে ২০১৪ সালে গঠিত হয়েছিল সামাজিক একটি সংগঠন ‘মায়ের ডাক'। অত্যন্ত আশ্চর্য এবং উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গুম হওয়া সুমনকে ধরার জন্য গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় সুমনের বোনের বাসায় অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। 

তিনি বলেন, এখন প্রশাসন বলছে, তারা নাকি সুমন সম্পর্কে জানতো না। তর্কের খাতিরে আমরা ধরে নিলাম যে, প্রশাসন সুমন সম্পর্কে জানতো না। কিন্তু এই যে পলাতক স্বৈরাচারের সময়ের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি (আবদুল হামিদ) বিমানবন্দর দিয়ে চলে গেছেন দেশ ছেড়ে। এর আগে ৫ আগস্ট একইভাবে আরেকজন দেশ ছেড়ে পালিছেন। এবার সাবেক ওই রাষ্ট্রপতিও অনেকটা একই কায়দায় পালিয়ে গেছেন। কিন্তু বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার তার এই দেশত্যাগের ব্যাপারে কিছুই জানে না! প্রত্যেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানেটা কী?

তারেক রহমান বলেন, একটি রাষ্ট্রে সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সদস্য হওয়া না হওয়ার ওপর দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা কিন্তু নির্ভর করে না। দেশে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন না থাকলে কথিত সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু, অর্থাৎ আপনি কিংবা আমি-আমরা কেউ নিরাপদ নই। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বও নিরাপদ নয়। রাষ্ট্রে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনই নিশ্চয়তা দিতে পারে নাগরিকদের নিরাপত্তা। দেশে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার অন্যতম পূর্ব শর্ত হচ্ছে, জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। এই দেশ জনগণের। 

এ সময় তিনি ষড়যন্ত্র রুখে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গঠনের আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন, ফ্যাসিস্টরা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ হয়েছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ ষড়যন্ত্র করতে না পারে। আমাদের যে যার জায়গা থেকে ভূমিকা রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, জনগণের ভোটে তাদের কাছে দায়বদ্ধ একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি প্রতিটি ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি এখনও তাদের সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। তবে বিভিন্ন কারণে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারছে কি-না, এ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। 

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জন গমেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ব এনপ ত র ক রহম ন গণতন ত র জনগণ র ন বল ন সরক র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

ইসলামী আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ‘নৈতিক অবক্ষয়ের চক্রান্ত সফল হবে না’  

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা নুরুল করিম আকরাম বলেন, সম্প্রতি কিছু সংগঠন যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি তুলেছে, যা ইসলাম, সংবিধান ও বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

ইসলামী শরীয়তে যৌনপেশা সম্পূর্ণ হারাম এবং সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে ধ্বংস করে দেয়। এই চক্রান্ত কোনোভাবেই সফল হতে দেয়া হবে না। আমরা চাই দেশ চজ (অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন করুক। প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হতে পারে না।

ফতুল্লায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুতুবপুর সাংগঠনিক ইউনিয়নের সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তবে তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার (৯ মে) বিকেল ৩টায় ফতুল্লার রামারবাগে পুতুল ঘর কনভেনশন হলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 

এ সময় জেলা সভাপতি মাওলানা দ্বীন ইসলাম বলেন, যেভাবে ২৪শে গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী সরকার হটানো হয়েছে, নতুন কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি এলেও জনগণ আন্দোলনে নামবে।

বিশেষ অতিথি ফতুল্লা থানা সভাপতি মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত, যাতে জনগণের আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা থানা শাখার সহ-সভাপতি আলহাজ মুহাম্মাদ আমান উল্লাহ, সেক্রেটারি মুহাম্মাদ জুবায়ের হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মুহাম্মাদ রুবেল হোসাইনসহ সহযোগী সংগঠন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

সম্মেলনের শেষে প্রধান অতিথি মাওলানা গাজী আতাউর রহমান পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন এবং শপথ বাক্য পাঠ করান।

নতুন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন মুহাম্মাদ মাসুদুর রহমান। সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ মোশারফ হোসেন ও মুহাম্মাদ ইউনুছ গাজী। সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পান মুহাম্মাদ আবুল বাশার আল আজাদ। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া আইনের শাসন, গণতন্ত্র কিছুই থাকে না
  • সরকার হয়তো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছে: তারেক
  • বিনিয়োগ নিয়ে দেশে অনেক সার্কাস দেখতে পাচ্ছি: আমীর খসরু
  • ইসলামী আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ‘নৈতিক অবক্ষয়ের চক্রান্ত সফল হবে না’  
  • এই প্রজন্মই দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ: তথ্য উপদেষ্টা
  • খালেদা জিয়ার ফিরে আসা যে কারণে তাৎপর্যপূর্ণ
  • এক কোটির অধিক নতুন সদস্য সংগ্রহে কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
  • খালেদা জিয়ার উপস্থিতি দলের জন্য আশীর্বাদ
  • এসএসসি পরীক্ষা-২০২৫, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ে বেশি নম্বর পাওয়ার টিপস