হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনসমাগমে বাড়তি চাপে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। ভৌগোলিক, জলবায়ু ও আবহাওয়াগত পরিবর্তনে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হজযাত্রীদের বেশ কিছু অসুবিধা দেখা যায়।
হজযাত্রীরা বিমানভ্রমণে অনভ্যস্ততার কারণে বমি, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগের সমস্যায় ভুগে থাকেন। জেদ্দা বিমানবন্দরে নামার পরপরই আবহাওয়াগত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় জলীয় বাষ্পের আর্দ্রতায় একটা ভারসাম্য রয়েছে। অন্যদিকে সৌদি আরবের তাপমাত্রা সাধারণত ৪০-৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে, সেই সঙ্গে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আর্দ্রতাও কম থাকে।
অতিরিক্ত গরমে ডায়রিয়া, বমি ও মাত্রাতিরিক্ত ঘামে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। সরাসরি সূর্যের আলো গায়ে লাগায় এর ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মুখমণ্ডল, বাহু ও বুকের চামড়ায় সানবার্ন হতে পারে।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের জন্য পাকস্থলী ও অন্ত্রের নানা রকম সমস্যা হয়ে থাকে। বয়স্ক হজযাত্রীরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। প্রয়োজনীয় পরিমাণে ফল ও শাকসবজি না খেয়ে কেবল প্যাকেটজাত খাবার গ্রহণ করায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি অতি সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা যায়।
হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। জ্বর ও সাধারণ ব্যথাজনিত সমস্যায় প্যারাসিটামল ওষুধ সঙ্গে রাখা ভালো। পাতলা পায়খানা ও আমাশয় হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওরাল রিহাইড্রেশন স্যালাইন বা খাওয়ার স্যালাইন সঙ্গে রাখা যেতে পারে।
হজের দিনগুলোতে সবচেয়ে কঠিন কাজগুলো করতে হয়। নিম্নবর্ণিত সতর্কতামূলক বিষয়গুলো সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে—সরাসরি সূর্যের আলো গায়ে না লাগানো, একটানা দীর্ঘক্ষণ না হেঁটে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে হাঁটা, অত্যধিক জনবহুল পরিবেশ এড়িয়ে চলা, প্রয়োজন অনুপাতে বিশ্রাম ও ঘুমানো। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে সতর্কতামূলক অতিরিক্ত আরও একটি সঙ্গে নেওয়া ভালো।
আরও পড়ুনহজযাত্রীদের জন্য বিনা মূল্যে প্রথম আলোর হজ গাইড১০ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সংসদে ১০০ নারী আসন ও সরাসরি নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন
জাতীয় সংসদে নারীদের সংরক্ষিত আসন ১০০–তে উন্নীত করা এবং আসনগুলোতে সরাসরি নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে নারী সংহতি।
আজ শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আইন প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণে অর্ধেকের বেশি জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ‘সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচন চাই’ শিরোনামে মানববন্ধন করে নারী সংহতি। এতে বিভিন্ন নারী সংগঠন, অধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক দলের নারী প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী নারী হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে রাজনীতির সব ক্ষেত্রেই তাদের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত নগণ্য। তাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এটি না হলে নারী নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক সংস্কার কার্যকর হবে না। নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের আয়োজন করলে নারী নেতৃত্বে উৎসাহ সৃষ্টি হবে এবং দেশের রাজনীতিতে নারীর প্রভাব এবং অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
মানববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নারী সংহতির সভাপ্রধান শ্যামলী শীল বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছে। আমাদের দাবি, যে নারীরা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের অন্তত একজনকে সরকারের প্রতিনিধিত্বে থাকতে হবে; কিন্তু তা হয়নি। এখনো রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের নীতি প্রণয়ন বা নেতৃত্বে দেখতে চায় না। আমরা চাই সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন হোক এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১০০ করা হোক। নারীরা এ দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী, তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
শ্যামলী শীল আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি শুধু সংখ্যা নয়, আমরা চাই প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন, যেখানে নারীরা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, ‘সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সরাসরি নির্বাচনের দাবি বাংলাদেশের সমস্ত নারী আন্দোলন কর্মী এবং সচেতন নারীদের যৌথ দাবি। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব পুরোনো ৫০ আসনে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা প্রত্যাখ্যান করি। ২০২৬ সালের নির্বাচনে ১০০ সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে নারীরা উৎসাহিত হবে এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি অংশগ্রহণ করবে।’
নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা দেব বলেন, সব লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সংসদে আলাদা আসন বরাদ্দ থাকতে হবে। ইতিমধ্যে সংরক্ষিত নারী আসন ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা এখনো নেই। আরপিওতে উল্লেখ নেই যে নির্বাচনে কত শতাংশ নারী প্রতিনিধি থাকবেন। এ ধরনের কার্যক্রমকে ‘লোক দেখানো তামাশা’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করছে নারী সংহতি। এ ছাড়া আদিবাসীদের যথাযথ স্বীকৃতি এবং প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুস্মিতা রায় বলেন, ঐকমত্য কমিশন যখন দেশের ভবিষ্যৎ সংস্কার নিয়ে আলোচনা করছে, সেখানে নারীর কণ্ঠস্বর এবং নারী প্রতিনিধির উপস্থিতি নেই। নারী সংস্কার কমিশন ৪৩৩টি সুপারিশ রাষ্ট্রের কাছে উপস্থাপন করলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে নারীর ভূমিকা অসামান্য; তাই সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ১০০ করার সঙ্গে সরাসরি নির্বাচন প্রবর্তন করা উচিত। এটি নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে এবং গণতান্ত্রিক পথকে শক্তিশালী করবে।
মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ মিছিল করা হয়। এতে ‘৭১–এর রক্তে কেনা, দেশটা শুধু পুরুষের না’, ‘২৪–এর রক্তে কেনা, দেশটা শুধু পুরুষের না’, ‘আর নয় সিলেকশন, এবার চাই ইলেকশন’সহ নানান স্লোগান দেওয়া হয়।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিলে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক ও সাংস্কৃতিককর্মী বীথি ঘোষ, নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক সায়েমা খাতুন, ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাকটিভিস্ট মাহ্রুখ মহিউদ্দীন, আমজনতার দল-এর সহসভাপতি সাধনা মহল, শিল্পী-অধিকারকর্মী ওয়ারদা আশরাফ, নারী সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নাসরিন আকতারসহ রাজনৈতিক নেতা এবং বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির ব্যক্তিরা।