ময়মনসিংহে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও রেলওয়ে থানা পুলিশের সহায়তায় এ অভিযান শুরু হয়েছে। আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযানে সবকিছু হারিয়ে হতবাক হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের মালিকানাধীন জমিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে একটি মহল সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। পূর্বনির্ধারিত এ উচ্ছেদ অভিযান বুধবার বেলা ১১টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া বাজার এলাকায় শুরু হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) নাসির উদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।

তবে উচ্ছেদ অভিযানে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেই ব্যবসায়ীরা, যারা ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন থেকে ইজারা নিয়ে এখানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন। অভিযানের আগে উচ্ছেদের কথা শোনা গেলেও, এর ব্যাপকতা আঁচ করতে না পারায় অনেকেই তাদের দোকান ও মালপত্র সরাতে পারেননি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ভাঙারি ব্যবসায়ী মামুন মিয়া বলেন, ‘২০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করে সংসার চালাই। নিয়মিত খাজনাও দিয়ে আসছি। আজ (বুধবার) হঠাৎ শুনলাম, এটা রেলের জায়গা।’ 

ভুক্তভোগী ডিম ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কতবার শুনছি উচ্ছেদ হবে, কিন্তু হয়নি। আজ (বুধবার) যে এত বড় অভিযান হবে তা ভাবতেও পারিনি। ব্যবসা করে কোনোরকমে সংসার চলত, এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’

স্থানীয় বাসিন্দা তৌফিকুল ইসলাম জানান, এই এলাকায় রেলের দুই পাশে ভূমিদস্যু ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা রেলের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে দোকানপাট বসিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অথচ সাধারণ জনগণ রেল ক্রসিং এলাকায় সারাদিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করে। এই উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে যানজট অনেকটা নিরসন হবে বলে মনে করছেন তারা।

সানকিপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিক জানান, এ রকম একটা উচ্ছেদ অভিযান অনেকদিন ধরে প্রত্যাশা করছিলেন তারা। ভূমিদস্যুরা রেলের জমিকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিল। অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে লাখ লাখ টাকা ভাড়া তুলেছেন তারা।

রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদের ভাষ্য, রেলের জমি একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখে সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে টাকা হাতিয়েছে। সাধারণ মানুষও অসচেতনভাবে সিটি করপোরেশন থেকে ইজারা নিয়েছে, এ ক্ষেত্রে তাদেরও দায় রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই এই অভিযান চালানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের কাছে পুনরায় ইজারা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।

তিনি বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যেসব জায়গা ইজারা দিয়েছে সেসব জায়গায় অভিযান চালানো হয়নি। অনেকে আছেন ইজারা নেওয়ার পরে ১০ বছর ধরে খাজনা পরিশোধ করেন না। তাদের জমিতেও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ ব যবস য় র লওয়

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে গারো স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, একজন গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে গারো স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রাত ১০টার দিকে জুগলি ইউনিয়নের নয়াপাগা গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মিলন মিয়া (২১)। তিনি একই এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় অটোরিকশাচালক। এর আগে গতকাল রাতেই মূল অভিযুক্ত আবুল বাশার (২৫) ও তাঁর সহযোগী মিলন মিয়াকে আসামি করে হালুয়াঘাট থানায় মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। তবে মামলার প্রধান আসামিকে আজ সকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি।

আরও পড়ুনহালুয়াঘাটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ১৫ ঘণ্টা আগে

পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ওই কিশোরীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরী (১৫) নবম শ্রেণিতে পড়ে। গত সোমবার দুপুরে মিলন মিয়ার (২১) সঙ্গে সে একটি পার্কে বেড়াতে যায়। বিকেলের দিকে সেখান থেকে বাড়ি পৌঁছে দিতে কিশোরীটিকে বাশারের অটোরিকশায় তুলে দেন মিলন। এ সময় বাশার হালুয়াঘাট উপজেলা শহরে পূজামণ্ডপ দেখানোর কথা বলে মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরতে থাকেন। একপর্যায়ে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে স্কুলছাত্রীটিকে ধর্ষণ করেন। এরপর রাত ১১টার দিকে গামারীতলা এলাকায় তাকে নামিয়ে দিয়ে অটোরিকশাচালক চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান।

খবর পেয়ে পুলিশ গতকাল রাতেই আবুল বাশারের (২৫) বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ওই সময় অটোরিকশাটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

হালুয়াঘাট থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা চলছে। তাঁর সহযোগী মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিলন জানিয়াছেন, মেয়েটি তাঁর বন্ধু।’

এদিকে হালুয়াঘাটে গারো ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো। আজ বেলা তিনটায় ঢাকা শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেক যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) অলিক মৃ।

আজ বুধবার সকালে নিজের ফেসবুকে পেজে পোস্ট দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ওই ঘটনার নিন্দা ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মেয়েটি জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন। মেয়েটির মা বিএনপি পরিবারের সদস্য ও গত ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলেও অন্য গারো নারীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন। অবশ্যই এই ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে তিন দশকের পঞ্চদুর্গাপূজা
  • ময়মনসিংহে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার ২
  • এ বছর ডেঙ্গুতে ২০০ জনের মৃত্যু
  • ময়মনসিংহে গারো স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, একজন গ্রেপ্তার
  • ‘আল্লাহ তুই দেহিস’: জোর করে চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় এক আসামি গ্রেপ্তার