কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় বজ্রপাতে নিরোধ দাস (৫৫) নামে কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের দৈলং নয়াহাটি এলাকায় মারা যান তিনি। ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর ফলে গত ২৬ দিনে এই জেলায় বজ্রপাতে ১৪ জনের মৃত্যু হলো।

মারা যাওয়া নিরোধ দাস একই গ্রামের মৃত বিষ্ণু দয়াল দাসের ছেলে।

নিহতের স্বজনরা জানান, আজ বিকেলে বাড়ির সামনে নিজেদের ধানের খলায় ধান সেদ্ধ করছিলেন নিরোধ দাস। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

আরো পড়ুন:

পাবনায় গাছ থেকে পড়ে প্রাণ গেল দিনমজুরের

কু‌ড়িগ্রা‌মে বজ্রপা‌তে গৃহবধূর মৃত্যু

গত ১১ মে কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন, ভৈরবের সাদেকপুর ইউনিয়নের ফারুক মিয়া (৬৫), ফয়সাল মিয়া (২৮) এবং কুলিয়ারচরের হাজারীনগরের কবির হোসেন (২৫)। 

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা.

উম্মে হাবিবা জুঁই তাদের মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।

এর আগে, ৬ মে পাকুন্দিয়া ও মিঠামইন উপজেলায় বজ্রপাতে তিন স্কুল শিক্ষার্থী ও এক কৃষক মারা যান। পাকুন্দিয়ায় মারা যাওয়ারা হলেন- উপজেলার চরটেকী গ্রামের জালাল উদ্দিনের মেয়ে ইরিনা (১৫), বাদল মিয়ার মেয়ে প্রিয়া (১৫) এবং একই গ্রামের বোরহান উদ্দিনের মেয়ে বর্ষা (১৫)। তারা সবাই চরটেকী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চমকপুর গ্রামে মারা যাওয়া কৃষকের নাম মোহাম্মদ কটু মিয়া (৪০)। তিনি আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে।

পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. সাখাওয়াৎ হোসেন এবং মিঠামইন থানার ওসি শফিউল আলম মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিলেন।

গত মাসের ৩০ এপ্রিল ইটনায় মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। তার নাম নাম মোহাম্মদ অনোহল (৪৫)। তিনি উপজেলার এলংজুরী ইউনিয়নের কাকটেংগুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

ইটনা থানার ওসি মো. জাফর ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।

গত ২৮ এপ্রিল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলার অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও কটিয়াদী উপজেলায় বিভিন্ন হাওরে বজ্রপাতে নারীসহ চারজন মারা যান।

অষ্টগ্রামে নিহত ইন্দ্রজীত দাস (৩৬) উপজেলার হালালপুর গ্রামের মৃত যতীন্দ্র দাসের ছেলে এবং স্বাধীন মিয়া (১৪) খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে। মিঠামইনে নিহত কৃষাণী ফুলেছা বেগম (৬৫) উপজেলার রাণীগঞ্জ কেওয়ারজোড় এলাকার মৃত আস্রব আলীর স্ত্রী। কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের ধনকিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবু মিয়ার ছেলে শাহজাহান মিয়া (৪৫)। 

অষ্টগ্রাম থানার ওসি রুহুল আমিন, মিঠামইন থানার এসআই অর্পণ বিশ্বাস এবং কটিয়াদী থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বজ্রপাতে মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন।

গত ২১ এপ্রিল পাকুন্দিয়ায় বজ্রপাতে আবু তাহের মিয়া (৪৮) নামের এক কৃষক মারা যান। উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চরকাওনা মইষাকান্দা এলাকায় তার মৃত্যু হয়। তিনি একই গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে।

পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. সাখাওয়াত হোসেন বজ্রপাতে তাহের মিয়ার তথ্য জানান।

ঢাকা/রুমন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত কর ছ উপজ ল য় উপজ ল র ম ঠ মইন

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার শুধু সাংবিধানিক জায়গায় আটকে আছে: হোসেন জিল্লুর রহমান

ত্বত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সংস্কার টপ প্রায়োরিটি হওয়া দরকার। সংস্কার আলোচনা শুধু সাংবিধানিক জায়গায় আটকে আছে। জনগণের প্রাত্যহিক জীবন নির্বিঘ্ন করার বিষয়গুলো বিশেষত পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট এক পাশে ফেলে দেওয়া আছে, জনপ্রশাসন রিপোর্টটাও একই।

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে 'গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সিভিল মিলিটারি সম্পর্ক' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

‘ইউনিটি ফর বাংলাদেশ' সংগঠনের আয়োজনে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবির, লেখক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চৌধুরী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দর্শন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ নিজার আলম।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সংস্কার টপ প্রায়োরিটি হওয়া দরকার। এটার পলিটিক্যাল ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই। কক্সবাজার একজন কাউন্সিলরকে মেরে ফেলছে, অন ক্যামেরায় পাওয়া যাচ্ছে। ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির রিপোর্ট হবে ইন্টেলিজেন্ট কিন্তু অনেক রিপোর্ট শুধুমাত্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ইন্টেলিজেন্ট নয়। কাজে এটা সংস্কার হতে হবে। আমার মনে হয়, সংস্কার আর্মির নেতৃত্বেও এটি হতে পারে। এটা অবশ্যই হতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। এটা রাষ্ট্রের জন্য জরুরি। সক্ষম রাষ্ট্রের জন্য চারটি বিষয় জরুরি। সার্বভৌমত্ব বলতে আমরা বুঝি জিওগ্রাফিক, এটার অন্যতম হলো নীতি সার্বভৌমত্ব। স্বৈরাচারের সময় দেখেছি নীতি নেওয়া হচ্ছে, তবে সার্বভৌমভাবে নেওয়া হচ্ছে না। পলিটিক্যাল সার্বভৌমত্ব আছে তবে ভেতরে অন্তঃসারশূন্য।

তিনি আরও বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে হবে। সিভিল মিলিটারি সম্পর্ক তার একটি অংশ। রিফর্ম নিয়ে একধরনের সাংবিধানিক বিষয়গুলোর আলোচনাই প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু জনগণের প্রাত্যহিক জীবনের বিশেষ করে পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট পাশে ফেলে দেওয়া আছে। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনায় রিপোর্টটাই নাই। প্রশাসন সংস্কারের রিপোর্টটাই একইভাবে পড়ে আছে।

সাংবিধানিক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতার ভারসাম্য জরুরি মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নতি, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের প্রয়োজন যদি মেটানো না যায়, আইনশৃংখলা/নিরাপত্তার বিষয়গুলো যদি মেটানো না যায়, তাহলে আজাদী মিথ্যা হয়ে উঠতে পারে এমন মনে হবে। এদিকে নজর দেওয়া দরকার।

নূরুল কবির বলেন, ‘সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করা ঠিক না' এটা হচ্ছে সবচেয়ে বেঠিক কথা। সেনাবাহিনী যদি রাজনীতি না বুঝে তাহলে তারা দেশের ক্রান্তিলগ্নে সিভিলিয়ানদের সাথে একযোগে কাজ করতে পারবে না। আপনারা রাজনীতিকরণ ও দলীয়করণকে এক করে মিলাবেন না।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য একটি ভালো সেনাবাহিনী দরকার কিন্তু সেনাশাসন দরকার নেই। সিভিল এবং মিলিটারি সম্পর্ক একটি বাইনারি অপজিশন। সেনাপ্রধান যখন এরশাদকে বলে মিলিটারি আর আপনার সঙ্গে নেই, তখনই এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। আবার গত ৩ আগস্ট যখন বর্তমান সেনাপ্রধান জুনিয়র অফিসারদের দাবির মুখে হাসিনাকে সেনাবাহিনীর অপারগতার কথা জানিয়ে দেন, তখনই হাসিনার পতন তরান্বিত হয়। ২০১৪ সাল নির্বাচন পরবর্তী সময়েই যদি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী অসন্তোষ প্রকাশ করতো, তাহলে জুলাইয়ে দেড় হাজার মানুষের প্রাণ দেওয়া লাগতো না।

সৈয়দ নিজার আলম বলেন, মিলিটারি সম্পর্কে একটি বাইনারি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ এ সম্পর্ক দ্বান্দ্বিক হওয়ার কথা না। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক থেকে শুরু করে মিলিটারি সবাই আমরা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রজন। তাই সবাইকে এক কাতারে থেকে দেশের সেবা প্রদান করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ