যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
Published: 17th, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ নিয়ে আমরা যতটা ভয় পাচ্ছি, তত ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েই কথাটা বললাম। শুল্ক আরোপের প্রভাব আমাদের প্রতিযোগীদের (দেশ) ওপরেও পড়ছে। ফলে তুলনামূলক প্রতিযোগিতায় আমরা খুব বেশি হারছি না।’
আজ শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই কার্যালয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নীতি ও বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথাগুলো বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপকে ‘বিষাক্ত শুল্ক চিকিৎসা’ হিসেবে আখ্যা দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে আসার পর যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার পেছনে অর্থনীতির চেয়েও বেশি আছে রাজনীতি। কিন্তু পাল্টা শুল্ক আরোপের যে নীতি ট্রাম্প নিয়েছেন, তা সফল হবে কি না, সে বিষয়ে দৃঢ় সংশয় আছে তাঁর। অর্থাৎ এই নীতি দিয়ে তিনি যে লক্ষ্য থেকে অর্জন করতে চাচ্ছেন, তা কার্যকর হবে বলে মনে করেন না তিনি। বাজার এই নীতি সেভাবে গ্রহণ করবে না।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, যে নীতিতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা তেমন একটা সঠিক নয়। শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে যে সূচক (পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি) ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও কার্যকর কিছু নয়। তারা বলছে, পণ্যের ক্ষেত্রে যার সঙ্গে যত বাণিজ্য ঘাটতি, তার ওপর তত বেশি শুল্ক আরোপ করা হবে। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীতে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য তারা বিবেচনায় নেয়নি। আবার চলতি বছর যে বাণিজ্য ঘাটতি আছে, পরবর্তী বছর তা একই থাকবে না, পরিবর্তিত হবে।’ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, তাহলে কী বছর বছর তারা শুল্কহার বদলাবে; বছর বছর শুল্ক বদলালে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্থিতিশীলতা দরকার, তা থাকবে না।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নীতি যৌক্তিক না হলে তাকে স্থায়িত্ব দেওয়া খুবই কষ্টকর। বাজারে তা গ্রহণ করে না। তবে দুর্যোগকে সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। অনেক দিনের জমে থাকা যেসব সংস্কারের কথা আমরা বলে থাকি, এই দুর্যোগের সময়টা সেগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ।
প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে বহুপক্ষীয় আলোচনার পরিবর্তে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যাওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ ঠিক পথেই এগোচ্ছে। সে জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যতালিকা (এজেন্ডা) দেওয়া হয়নি।
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০০টি পণ্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি তৃতীয় যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি করা হয়, সেগুলো হিসাবের মধ্যে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আমরা তাদের পণ্য কিনব, কিন্তু তা মোট বাণিজ্যের হিসেবে যোগ হবে, কিন্তু বাণিজ্যের হিসেবে যোগ হবে না—আমরা তা বরদাশত করব না। যুক্তরাষ্ট্র এতে রাজি না হলে আমরা আমদানি নীতি সংশোধন করে তৃতীয় দেশ থেকে তাদের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে দেব। ইতিমধ্যে গাড়ির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি আছে।’ এ ছাড়া বাণিজ্য বাধা দূর করতে তেজস্ক্রিয় পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে নেওয়াসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প
এছাড়াও পড়ুন:
কোটিপতি হলেও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করেন তিনি
পর্যাপ্ত অর্থ সঞ্চয় করতে পারলেই আমাদের অনেকে কায়িক পরিশ্রম ছেড়ে দেন। আরাম-আয়েশে জীবন কাটান। কিন্তু সবাই তা করেন না। এমন একজন জাপানের কোইচি মাতসুবারা। ৫৬ বছর বয়সী এই জাপানি নাগরিকের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ কোটি ইয়েন (প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) হওয়া সত্ত্বেও তিনি এখনো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন।
মাতসুবারা সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কাজ করেন। তিনি সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ কাজের অংশ হিসেবে তাঁকে ছোটখাটো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এ কাজ থেকে মাতসুবারা মাসে ১ লাখ ইয়েন (প্রায় ৮২ হাজার ৬৪ টাকা) আয় করেন, যা টোকিওর গড় বেতনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও তিনি এ কাজ করেন। কারণ, তিনি এটাকে শারীরিক সক্রিয়তা ও মানসিক প্রশান্তির উপায় হিসেবে দেখেন।
মাতসুবারা ছোটবেলা থেকেই সঞ্চয়ী ছিলেন। মাধ্যমিকের পর তিনি একটি কারখানায় মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা) বেতনে কাজ শুরু করেন। খরচ বাঁচিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ৩০ লাখ ইয়েন (২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা) সঞ্চয় করে তিনি প্রথম স্টুডিও ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
পরে বাড়ি কেনার ঋণ আগেভাগে পরিশোধ করে ধীরে ধীরে আরও ফ্ল্যাট কেনেন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন মাতসুবারা। এখন টোকিও ও এর শহরতলিতে তাঁর সাতটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার সবই ভাড়া দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন।
ধনবান হলেও মাতসুবারা সাদাসিধে জীবন যাপন করেন। এখনো তিনি সস্তা ফ্ল্যাটে থাকেন, নিজের খাবার নিজে বানান, নতুন জামাকাপড় কেনেন না, সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং প্রধানত সাইকেলে চলাচল করেন। তাঁর জীবনদর্শন—‘প্রতিদিন কিছু না কিছু করার আশা করি, সুস্থ থাকতে চাই এবং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে চাই।’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে মাতসুবারাকে ‘অদৃশ্য কোটিপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানে ধনীদের এমন সাধারণ জীবনধারা অস্বাভাবিক নয়। দেশটিতে সাদাসিধে জীবনযাপন অনেকের মধ্যে দেখা যায়।