যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ নিয়ে আমরা যতটা ভয় পাচ্ছি, তত ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েই কথাটা বললাম। শুল্ক আরোপের প্রভাব আমাদের প্রতিযোগীদের (দেশ) ওপরেও পড়ছে। ফলে তুলনামূলক প্রতিযোগিতায় আমরা খুব বেশি হারছি না।’

আজ শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই কার্যালয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নীতি ও বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথাগুলো বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপকে ‘বিষাক্ত শুল্ক চিকিৎসা’ হিসেবে আখ্যা দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে আসার পর যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার পেছনে অর্থনীতির চেয়েও বেশি আছে রাজনীতি। কিন্তু পাল্টা শুল্ক আরোপের যে নীতি ট্রাম্প নিয়েছেন, তা সফল হবে কি না, সে বিষয়ে দৃঢ় সংশয় আছে তাঁর। অর্থাৎ এই নীতি দিয়ে তিনি যে লক্ষ্য থেকে অর্জন করতে চাচ্ছেন, তা কার্যকর হবে বলে মনে করেন না তিনি। বাজার এই নীতি সেভাবে গ্রহণ করবে না।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, যে নীতিতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা তেমন একটা সঠিক নয়। শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে যে সূচক (পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি) ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও কার্যকর কিছু নয়। তারা বলছে, পণ্যের ক্ষেত্রে যার সঙ্গে যত বাণিজ্য ঘাটতি, তার ওপর তত বেশি শুল্ক আরোপ করা হবে। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীতে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য তারা বিবেচনায় নেয়নি। আবার চলতি বছর যে বাণিজ্য ঘাটতি আছে, পরবর্তী বছর তা একই থাকবে না, পরিবর্তিত হবে।’ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, তাহলে কী বছর বছর তারা শুল্কহার বদলাবে; বছর বছর শুল্ক বদলালে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্থিতিশীলতা দরকার, তা থাকবে না।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নীতি যৌক্তিক না হলে তাকে স্থায়িত্ব দেওয়া খুবই কষ্টকর। বাজারে তা গ্রহণ করে না। তবে দুর্যোগকে সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। অনেক দিনের জমে থাকা যেসব সংস্কারের কথা আমরা বলে থাকি, এই দুর্যোগের সময়টা সেগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ।

প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিপ্রেক্ষিতে বহুপক্ষীয় আলোচনার পরিবর্তে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় যাওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ ঠিক পথেই এগোচ্ছে। সে জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যতালিকা (এজেন্ডা) দেওয়া হয়নি।

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১০০টি পণ্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি তৃতীয় যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি করা হয়, সেগুলো হিসাবের মধ্যে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। আমরা তাদের পণ্য কিনব, কিন্তু তা মোট বাণিজ্যের হিসেবে যোগ হবে, কিন্তু বাণিজ্যের হিসেবে যোগ হবে না—আমরা তা বরদাশত করব না। যুক্তরাষ্ট্র এতে রাজি না হলে আমরা আমদানি নীতি সংশোধন করে তৃতীয় দেশ থেকে তাদের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে দেব। ইতিমধ্যে গাড়ির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি আছে।’ এ ছাড়া বাণিজ্য বাধা দূর করতে তেজস্ক্রিয় পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে নেওয়াসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো.

মেজবাউল হক। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ ও বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প

এছাড়াও পড়ুন:

সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনে পিআরের বিকল্প নেই: আব্দুল্লাহ তাহের

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ভোটের সংখ্যানুপাতে (পিআর) সংসদের আসন বণ্টন পদ্ধতির বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। 

মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণে কার্যালয়ে জুলাই-আগস্টের শহীদ, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের স্মরণে দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে ডা. তাহের বলেন, যারা ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার পথ বন্ধ করতে সহযোগিতা করছে না, তারাও ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়। ভোট ডাকাতির কোনো সুযোগ থাকবে না বলেই কেউ কেউ পিআর পদ্ধতিকে ভয় পায়। যারা নির্বাচনের আগেই সংসদে ২৮০ আসন পাবে বলে দাবি করে, তারাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা। তারা মূলত হাসিনা মার্কা যেনতেন নির্বাচন চায়। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে, বাংলাদেশ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে। মানুষ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারাবে। রাষ্ট্র কর্তৃক জুলুমের শিকার হবে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছি। কিন্তু  মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় জুলুম ও বৈষম্য ছিল। ২০২৪ সালে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জুলুম থেকে জাতি স্বাধীনতা লাভ করেছে। ২৪ এর স্বাধীনতা আর কাউকে ছিনিয়ে নিতে দেওয়া হবে না। ছাত্র-জনতার অর্জিত নতুন বাংলাদেশ মৌলিক পরিবর্তন চায়। বিএনপিসহ তিনটি দল ছাড়া সবাই শর্তহীনভাবে প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ ১০ বছরের সীমাবদ্ধ চায়। কারও উদ্দেশ্য যদি খারাপ হয়, তাহলে মহৎ উদ্দেশ্যে তিনি সমর্থন জানান না, জানাতে পারেন না। 

দক্ষিণ জামায়াতের  নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন মহানগরের নেতা এবং আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ