ওয়াসিম তো সবাইকেই পেটান, বাংলাদেশের বোলারদের কী দোষ
Published: 20th, May 2025 GMT
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক বছরে ১০০ ছক্কা মারা একমাত্র ক্রিকেটার কে? ক্রিস গেইল, রোহিত শর্মাদের নাম মাথায় আসছে? ঝেড়ে ফেলুন এবং জোরে বলুন উত্তরটা—মুহাম্মদ ওয়াসিম। এই রেকর্ড ওয়াসিম গড়েন ২০২৩ সালে।
ওয়াসিম নামটা এখন দেশের ক্রিকেটে বড্ড প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই বোলারদের ভালোই পিটুনি দিয়েছেন সংযুক্ত আরব-আমিরাত অধিনায়ক।
প্রথম ম্যাচে ৩৯ বলে করেছেন ৫৪। আর কাল রাতে আমিরাতের ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে ৪২ বলে ৮২। ওয়াসিমের কাছে মার খেয়ে মন খারাপ হলে বাংলাদেশের বোলারদের সান্ত্বনা খুঁজতে পারেন তাঁর ছক্কার রেকর্ড দেখে। পরীক্ষায় ফেল করার পর বন্ধুরও ফেল করা দেখে যেমন সান্ত্বনা মেলে, অমন কিছু আর কী!
আরেকটি পরিসংখ্যান দিলে বাংলাদেশের বোলারদের মুখে হাসিও ফুটতে পারে। জোর গলায় বলতে পারেন, আমাদের কী দোষ! ওয়াসিম তো সবাইকেই পেটান!
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যানের নাম ওয়াসিম। ৬৭ ইনিংসে ওয়াসিমের রান প্রায় ৪০ গড়ে ২৫০৪। তাঁর চেয়ে ৩ ইনিংস বেশি খেলা সূর্যকুমার যাদবের রান ১৫০ কম (২৩৫৪)।
তালিকায় আছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান লিটন দাসের। ১২২৭ রান করা লিটনের অবস্থান এই তালিকায় ২৮তম। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ১৫৯ ছক্কাও ওয়াসিমের। রানের মতো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কাও সূর্যর, ১৩৪টি।
ওয়াসিম কাদের বিপক্ষে খেলেছেন, এটিও মাথায় রাখতে হবে। ওয়াসিম এই সময়ে ওমান, নেপাল, হংকংয়ের মতো দলের সঙ্গে খেলেছেন। সেই তুলনায় সূর্য বা লিটন নিঃসন্দেহে বড় বড় দলের বিপক্ষে খেলেছেন। চ্যালেঞ্জটা তাই বেশিই ছিল। তবে ওয়াসিমের দুটি সেঞ্চুরির একটি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, অন্যটি ওমানের বিপক্ষে।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দুটি সেঞ্চুরি তো তুলনামূলকভাবে আরও দুর্বল দলের বিপক্ষে। তামিম ইকবাল ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেছিলেন ওমানের বিপক্ষে। আর পারভেজ হোসেন এই সিরিজে করলেন আমিরাতের বিপক্ষে। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ওয়াসিমের করা দুই ফিফটিও তো তাঁকে বিশেষভাবে চেনায়।
প্রতিপক্ষ যে–ই হোক, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৪০ গড় আর ১৫৬.
এখন জাতীয় দলে আছেন, এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩৪.১৮ স্ট্রাইক রেট রিশাদ হোসেনের। যে দুজনের নাম বলা হলো, তাঁদের প্রধান কাজ কিন্তু ব্যাটিং নয়!
ক্লাস, টেকনিক নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে ওয়াসিমদের তুলনা চলে না। তবে টি-টোয়েন্টিতে তো ছক্কা মারার সামর্থ্য আর সাহসটাই পার্থক্য গড়ে দেয়! প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটিং লক্ষ করুণ। কাল ১৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ১৬০। উইকেট হাতে ছিল ৮টি। সেখান থেকে শেষ ৪ ওভারে বাংলাদেশ তুলতে পেরেছে ৪৫ রান। এই ৪ ওভারে ব্যাটসম্যানরা ছক্কা মারতে পেরেছেন মাত্র দুটি। বাউন্ডারি এসেছে চারটি। ৬০ থেকে ৬৫ রান আসবে কী করে!
প্রথম ম্যাচে প্রথম ১০ ওভারে ১০৩ রান তোলার পরও বাংলাদেশ ২২০-২৩০ নয়, করেছিল ১৯১। দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ মোটামুটি ভালো সংগ্রহই তুলেছে। কিন্তু বাংলাদেশ যে পজিশনে ছিল, সেখান থেকে দুটি ম্যাচেই অন্তত ২০ রান বেশি হতে পারত। আর আরব আমিরাতের ধারহীন বোলিংয়ের বিপক্ষেই যদি ২০ রান বেশি না তোলা যায়, কাদের বিপক্ষে তুলবেন!
এই অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ রান তুলতে চাই চার-ছক্কা মারার সামর্থ্য। আমিরাত অধিনায়ক ওয়াসিমের এই সামর্থ্য কিছুটা সহজাত আর কিছুটা এসেছে পাকিস্তানে টেপ টেনিস খেলে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এই গুণ কীভাবে অর্জন করবেন, কে জানে!
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন আম র ত প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত