গণতন্ত্র ফিরতে দেরি হলে দেশে সংকট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আগামী দিনে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের জন্য। আমরা একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনতে চাই। এটা যত বিলম্বিত হবে, তত বেশি সংকট বাড়তে থাকবে।

সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই আশঙ্কার কথা বলেন। সেগুনবাগিচায় পেশাদার সাংবাদিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নিজ কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠান হয়। ১৯৯৫ সালের এই দিনে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু হয়েছিলো। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শ্লোগান : ঐক্য-সমৃদ্ধি।

আমীর খসরু বলেন, দেশে যতক্ষণ গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন না হবে মিডিয়া তার ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করতে পারবে না। গণতন্ত্র ও মিডিয়া হাতে হাত মিলিয়ে চলবে। গণতন্ত্রের যতদিন অনুপস্থিতি থাকবে, গণতান্ত্রিক অর্ডারের যত বেশি অনুপস্থিতি থাকবে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতি যত বাড়তে থাকবে মিডিয়ার ওপর চাপ বাড়তে থাকবে। অগণতান্ত্রিকভাবে যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, তারা থাকার জন্যে, ক্ষমতা অব্যাহত রাখার জন্য বিভিন্ন চাপের মধ্যে মিডিয়াকেও তারা চাপের ওপর রাখতে চায়। আমাদের ঐক্যটা হবে গণতান্ত্রিক, সংবিধান, রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাবার জন্য। যার মধ্যে মিডিয়ার স্বাধীনতা অর্ন্তনিহিত আছে।

মানুষের কাছে দায়বদ্ধ সরকার হতে হবে, জবাবদিহি সরকার হবে, বার বার জনগণের দিকে তাকাতে হবে, জনগণের কাছে যেতে হবে।

ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আখনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামসহ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির বর্তমান ও সাবেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক গণতন ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সংসদীয় গণতন্ত্রই চায় ইসলামপন্থি ছয় দল

ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো সংসদীয় গণতন্ত্রই চায়। সংস্কার কার্যক্রমে অংশ নেওয়া এমন ছয়টি দলের কেউই শরিয়াহভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা, খেলাফত রাষ্ট্র চায়নি। ঐচ্ছিক শরিয়াহ আদালত স্থাপনের প্রস্তাব করেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন। বাকি দলগুলো বিদ্যমান ব্যবস্থা অব্যাহত রেখে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের প্রস্তাব করেছে।
এর বাইরে ঐচ্ছিক শরিয়াহ আদালত চেয়েছে আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)।

সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্তের সুপারিশে একমত হয়নি ইসলামপন্থি দলগুলো। ধর্মভিত্তিক সব দল সংবিধানের মূলনীতিতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা’ পুনর্বহালের প্রস্তাব করেছে। কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী আইন প্রণয়ন না করার প্রস্তাব করেছে দলগুলো। কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছে।

সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশনে লিখিত মতামত জানায় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিস। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে এই তিন দল ছাড়াও মতামত জানিয়ে সংলাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি।

ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সমকালকে বলেছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমর্থন করেছে সব ধর্মভিত্তিক দল।
হেফাজতে ইসলাম-সংশ্লিষ্ট এবং কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোর নেতারা সমকালকে বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থান হিসেবে দেখাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। ৫ আগস্টের পর পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা বারবার জানতে চেয়েছেন, ইসলামী দলগুলোর শরিয়াহভিত্তিক শাসন, খেলাফতভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা।

সংবিধান সংস্কার কমিশনে জামায়াত প্রস্তাব করেছিল, জরুরি অবস্থা জারি হলেও মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার স্থগিত করা যাবে না। ঐকমত্য কমিশনের মতামতে এবং সংলাপে তারাও উন্নত গণতন্ত্রের দেশগুলোর আদলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো, জবাবদিহির প্রস্তাব করেছে।

দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সমকালকে বলেছেন, জামায়াত কখনও জোরজবরদস্তির মাধ্যমে ইসলাম কায়েম করার কথা বলেনি। জামায়াত সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক প্রচারণা রয়েছে, সেগুলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ছড়ানো। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে জামায়াতের লক্ষ্য নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া; সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থনে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।
সংবিধান সংস্কার কমিশনে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন ১২ পৃষ্ঠার প্রস্তাবে ধর্মবিষয়ক একটি লাইন লিখেছে। এতে বলা হয়েছে, শরিয়াহবিরোধী আইন করা যাবে না। ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬ সুপারিশেও দলটি ধর্ম-সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব দেয়নি। দলের মহাসচিব ইউনূস আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক দলই শরিয়াহবিরোধী আইনের পক্ষে নয়।
৭ মে দ্বিতীয় দিনের সংলাপে শরিয়াহ আদালত স্থাপনের প্রস্তাব করে ইসলামী আন্দোলন। এর ব্যাখ্যায় দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকারের মতো বিষয়ে শরিয়াহ আইনে বিচার হয়। ইসলামী আন্দোলন প্রস্তাব করেছে, নিম্ন থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত পৃথক শরিয়াহ বেঞ্চ থাকবে। বাদী ও বিবাদী একমত হলে বিচারের জন্য শরিয়াহ আদালতে যেতে পারবেন। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যেমন সাধারণ ও শরিয়াহ পদ্ধতি রয়েছে। গ্রাহক যে পদ্ধতি পছন্দ করেন, তা গ্রহণ করেন। শরিয়াহ আদালতও তেমন ঐচ্ছিক হবে।
নেজামে ইসলাম পার্টি সংলাপে গুরুত্ব দিয়েছে স্থানীয় সরকারের স্বায়ত্তশাসনে। খেলাফত মজলিস সংবিধানের প্রতিটি অনুচ্ছেদ সংস্কারে প্রস্তাব দেয় কমিশনে। জমিয়ত ১৬৬ সুপারিশের ১০৯টিতে একমত পোষণ করেছে। দলটি দেশের সাংবিধানিক নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে। দেশের নাম ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ’ করার প্রস্তাব করেছে।
মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস ১৬৬ সুপারিশের ১৪৭টিতে একমত। এই দলটিও আনুপাতিক পদ্ধতির উচ্চকক্ষ, সাংবিধানিক কাউন্সিলসহ সরকার, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে। 

দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনী সমকালকে বলেছেন, ইসলামপন্থি দল হিসেবে খেলাফত মজলিসের চূড়ান্ত লক্ষ্য খেলাফতের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তবে তা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অর্জন করা হবে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে পারলে জনগণের মতামত এবং সমর্থনে খেলাফত কায়েম করবে খেলাফত মজলিস।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কার ও বিচারের নামে নির্বাচন নিয়ে হেলাফেলা চলবে না: আমীর খসরু
  • ভোট-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার: খন্দকার মোশাররফ
  • সরকার পদত্যাগ নিয়ে নাটক করেছে: সালাহউদ্দিন আহমেদ
  • সংসদীয় গণতন্ত্রই চায় ইসলামপন্থি ছয় দল
  • জামায়াত নেতা আজহারের খালাস জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ভেঙে দিয়েছে: গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট
  • জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল খালাস পাওয়ায় বাম জোটের উদ্বেগ
  • পরিবর্তনশীল মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের রাজনীতি করতে হবে: আমীর খসরু