যৌন হয়রানির অভিযোগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আরেক শিক্ষককে ২ বছরের জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ওই শিক্ষক হলেন, নোবিপ্রবির বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (বিজিই) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।

মঙ্গলবার (২৭ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নিষিদ্ধ সংগঠনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাকৃবি প্রেসক্লাবের অনুমোদন স্থগিত

সিএসই বিভাগে নকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইবি শিক্ষকের অনুরোধ

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন কমিটি অভিযুক্ত বিজিই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। কিন্তু তিনি সন্তোষজনক জবাব না দেওয়ায় রিজেন্ট বোর্ডের ৬৫তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষককে ২ বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এই সাময়িক বরখাস্তের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত ড.

আনোয়ার হোসেন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের পূর্বের কোনো ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। 

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার তামজীদ হোসাইন চৌধুরী বলেন, “সহযোগী অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। তারা বিষয়টি প্রথমে উপাচার্য বরাবর এবং পরে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির কাছে উপস্থাপন করেন।”

তিনি বলেন, “অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের দাখিল করা প্রমাণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন এবং সুপারিশের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে  চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

তবে এ বিষয়ে জানতে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক ড. মো. আনোয়ার হোসেনকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আরো পড়ুন: ছাত্রীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক: নোবিপ্রবির সেই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত

একই রিজেন্ট বোর্ডের সভায় নিজ বিভাগের ছাত্রীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর দায়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচএম মোস্তাফিজুর রহমানকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বরখ স ত ব শ বব দ য য ন হয়র ন ন ব প রব বরখ স ত

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণ কী

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এবং নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার মুখে পড়েছে।

গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রাণক্ষয়ী বিক্ষোভের মুখে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানো সত্ত্বেও প্রতিশ্রুত সংস্কারে বিলম্ব, ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক বিভাজনের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বাংলাদেশে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কারণ এখানে তুলে ধরা হলো:

নির্বাচন বিতর্ক

ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। তবে এখনো নির্বাচন আয়োজনে সুনির্দিষ্ট তারিখ জানায়নি অন্তর্বর্তী সরকার।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। গত সপ্তাহে দলটি বলেছে, একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী পরিকল্পনা ছাড়া অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখা ‘কঠিন’ হবে।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত সপ্তাহে এক বক্তব্যে ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এতে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ে।

গত বছরের অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের উদ্যেোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জোর দিয়ে বলছে, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সংস্কার নিয়ে অচলাবস্থা

হাসিনার বিদায়ের পর অধ্যাপক ইউনূস যে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই সংস্কারের অগ্রগতি ধীরগতিতে চলছে। তাঁর সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য গঠনের জন্য সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে।

ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের প্রথম দফার সংলাপে কিছু পরিবর্তনের বিষয়ে ব্যাপক সমর্থন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।

তবে সাংবিধানিক সংস্কার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ–সংক্রান্ত আরও জটিল কিছু প্রস্তাব নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপ জুনের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে বলে ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অস্থিতিশীল অবস্থা জনগণের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক ও রাজনৈতিক কর্মীদের রাজপথে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ রাজধানী ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে।

এই অস্থিরতা নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, যদি শিগগিরই রাজনৈতিক ঐকমত্য না হয়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

আরও পড়ুনইউনূস সরকারের ওপর চাপ বাড়ার মধ্যেই বাংলাদেশে বিক্ষোভ২৬ মে ২০২৫হাসিনার দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা

চলতি মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সামনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে দলটিকে কার্যত বাইরে রাখা হচ্ছে। কিন্তু এতে পরবর্তী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পদক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর সরকারকে অস্থিতিশীল করতে যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে, তাতে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুননির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি২৩ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ