স্বাধীন ফিলিস্তিনের আকাঙ্ক্ষায় ছয় দশক আগে গড়ে ওঠা পিএলও হেঁটেছে আপসের পথে
Published: 28th, May 2025 GMT
গত শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে সবচেয়ে জটিল ও রক্তাক্ত অধ্যায়গুলোর একটি রচিত হয়েছে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে ঘিরে। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের বিভাজন প্রস্তাব থেকে শুরু করে লাখো ফিলিস্তিনির নির্বাসন, যুদ্ধ, সংঘাত ও প্রতিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে একটি চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা—নিজের ভূখণ্ডে মাথা তুলে স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার।
এই আকাঙ্ক্ষা থেকেই জন্ম নেয় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। অনেকেই মনে করেন, পিএলও ফিলিস্তিনিদের প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তির লক্ষ্যে যথাযথভাবে এগিয়ে যেতে পারেনি, বরং নিজেদের স্বার্থে আন্তর্জাতিক সমঝোতার পথে এমন সব আপস করেছে, যা জনগণের চাওয়া থেকে অনেক দূরে। সময়ের বাস্তবতায় পিএলও অনেকটাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, ক্ষমতাহীন ও প্রতীকী একটি কাঠামোতে পরিণত হয়েছে।
পিএলওর যাত্রা
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে এক ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনকে দুই টুকরা করে আলাদা ইহুদি ও আরব রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। আর জেরুজালেম হবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক নগরী। ইহুদি নেতারা এ প্রস্তাব মেনে নেন, তবে ফিলিস্তিনি আরবরা তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফিলিস্তিনি আরবদের আশঙ্কা ছিল, এতে ইহুদিরাই সুবিধা পাবে এবং বিভাজনের কারণে আরবদের যাঁরা ইহুদি অঞ্চলের অধীন থেকে যাবেন, তাঁদের প্রতি অবিচার করা হবে।
২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর ফাতাহ দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং পিএর প্রথম প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ আব্বাস পিএলওর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কয়েক মাস পর তাঁকেই পিএর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়।১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইহুদি নেতারা ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এতে ৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিজেদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ওই বছরই শুরু হয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। এ যুদ্ধ দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ও রক্তক্ষয়ের ভিত্তি গড়ে দেয়। ওই সময় ফিলিস্তিনিরা নানা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। তাদের কোনো সংগঠিত নেতৃত্ব ছিল না। রাজনৈতিকভাবে তারা ছিল দুর্বল ও প্রভাবহীন।
১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর আরব রাষ্ট্রগুলো, বিশেষ করে মিসর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামরিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। ফিলিস্তিনিরা নিজেদের একটি সংগঠিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব না থাকায় বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ফিলিস্তিনি ছোট ও বিচ্ছিন্ন প্রতিরোধ সংগঠন গড়ে তোলে। এগুলো প্রায়ই বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হতো। ফলে ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল সীমিত।
১৯৬৪ সালে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলন চলার সময় ফিলিস্তিনিরা একত্র হয়ে একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন গঠন করে। এর নাম দেওয়া হয় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক মর্যাদা পাওয়া এ সংগঠনের ছায়াতলে একাধিক দল ও সংগঠন কাজ করে। বর্তমানে রাজনৈতিক দল ফাতাহ হলো পিএলওর মূল চালিকা শক্তি।
পিএলওর গঠনকাঠামো
পিএলওর সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয় প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল কাউন্সিল বা পিএনসি। এ সংস্থার বিভিন্ন দায়িত্বের মধ্যে আছে নীতিনির্ধারণ করা, নির্বাহী কমিটি ও কাউন্সিল বোর্ড নির্বাচন করা এবং সদস্যপদ–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
আর পিএলওর নির্বাহী কমিটি দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড তদারকি করে। তারা বাজেটের বিষয়টি দেখভাল করে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পিএলওকে প্রতিনিধিত্ব করে। পিএনসি ও কেন্দ্রীয় পরিষদের গৃহীত নীতিমালা বাস্তবায়নের দায়িত্বও তাদের ওপর বর্তায়।
পিএনসি ও নির্বাহী কমিটির মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে কেন্দ্রীয় পরিষদ। এই পরিষদে ১২৪ জন সদস্য আছেন। আর প্যালেস্টাইন লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) হলো পিএলও আনুষ্ঠানিক সামরিক শাখা।
বর্তমানে পিএলও এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফাতাহ নেতা মাহমুদ আব্বাস.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প য ল স ট ইন র জন ত ক প এলও স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রয়োজন অনুসারে রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তনে সচেতনভাবে এগোচ্ছে বিএনপি: মির্জা ফখরুল
প্রয়োজন অনুসারে রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তনে বিএনপি সচেতনভাবে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘জনগণের যেটা প্রয়োজন, যুগের সঙ্গে সঙ্গে যে পরিবর্তনগুলো আনা দরকার, রাষ্ট্রকাঠামোর যে পরিবর্তন আনা দরকার, সে বিষয়ে আমরা অত্যন্ত সচেতন। সচেতনভাবেই সামনের দিকে এগোচ্ছি।’
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘পদ্মা ব্যারাজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। ‘পদ্মা ব্যারাজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি’ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
দ্বিতীয় পদ্মা সেতু এবং পদ্মা ব্যারাজ এখন সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। একই সঙ্গে তিনি সাতবার ফিজিবিলিটি স্টাডি (প্রস্তাবিত প্রকল্পের কার্যকারিতা এবং বাস্তবতার মূল্যায়ন) হলেও এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তের জায়গায় আসতে না পারাকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এ জন্য রাজনৈতিক কমিটমেন্ট প্রয়োজন। এটি তখনই তৈরি হবে, যখন জনগণের মধ্য থেকে এ দাবি উঠে আসবে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনেক আগেই দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর অঙ্গীকার করেছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের বহু অংশ ছেড়ে মানুষ চলে যাচ্ছে। বাসের উপযোগী আর থাকছে না। পরবর্তী সরকারগুলো শুধু নয়, জনগণেরও এ বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ থাকা উচিত।
পরবর্তী সরকারগুলোকে এ বিষয়ে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা একটা ট্রানজিশন পিরিয়ডে আছি। আজ একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। অভূতপূর্ব ছাত্র গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছিল। সেই ঐক্যকে সামনে নিয়ে আমরা সবাই যদি মূল বিষয়গুলোকে সামনে আনতে পারি, চিন্তার ঐক্য যদি থাকে, তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা সফল হব।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সবকিছুই নির্ভর করবে মানুষের ওপর। ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাংলাদেশের মানুষ পারে। সেটি একাত্তর সালে প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি চব্বিশেও তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের পালস আমি বুঝি। দেশের মানুষ উন্নতি চায়, ওপরে উঠতে চায়, সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায়। সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সব বিষয়ের সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।’
আয়োজক কমিটির সভাপতি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ামের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, শিক্ষক ও গবেষক অধ্যাপক আইনুন নিশাত, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।