ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেছেন, “জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় ও শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। এর জন্য ডিএনসিসির প্রতি অর্থবছরের বরাদ্দকৃত বাজেট বার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যথাযথ ব্যয় নিশ্চিত করা হবে।”

বুধবার (২৮ মে) ডিএনসিসির সভা কক্ষে ঢাকা আহছানিয়া মিশনে ও ডিএনসিসির যৌথ আয়োজনে ‘তামাক ও ধূমপানমুক্ত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন গঠনে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতি বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

ইমরুল কায়েস চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, ডিএনসিসির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.

ইমদাদুল হক, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহমুদা পলি, ডা. ফিরোজ আলম, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি ডা. মোহাম্মদ খলিলউল্লাহ, মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদসহ ডিএনসিসি’র উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। ।

আরো পড়ুন:

অন্তর্বর্তীকালীন সংসদ সচিবালয় কমিশনের ৩৬তম বৈঠক অনুষ্ঠিত

বাজেটে ‘কৃষি-শিল্প-পাট-সুন্দরবন’ রক্ষায় পর্যাপ্ত বরাদ্দের দাবি

সভায় মূল প্রবন্ধে ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলাম বলেন, “গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ এর তথ্যমতে দেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে, ১ কোটি ৯২ লাখ মানুষ ধূমপান করে এবং প্রায় ৪ কোটি মানুষ ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। পরোক্ষ ধূমপানের এ হার ৪২.৭ শতাংশ।  এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আইন সম্পর্কে সচেতনতা কম, তামাকজাত প্যণ্যের ব্যাপক প্রচারণা, সহজলভ্যতা, আইনের সঠিক ও যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া এবং তামাক কোম্পানির কূটকৌশল ইত্যাদি।”

অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, কর্মক্ষেত্রে যত্রতত্র ধূমপানের চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। ফলে ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে সবাইকে রক্ষা করতে কর্মক্ষেত্রকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ডিএনসিসির আওতাধীন বাসস্টান্ড, রেস্টুরেন্টসহ পাবলিক প্লেসগুলোতে ধূমপান বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কর্মক্ষেত্র ও আশেপাশের এলাকা ধূমপানমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও ধূমপানমুক্ত সাইনেজ লাগানো এবং ডিএনসিসির সব কার্যালয়কে শতভাগ ধূমপান ও স্মোকিং জোনমুক্ত রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান বক্তারা।

পাশাপাশি, তামাকের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হলেও কোম্পানিগুলো সুকৌশলে বিক্রয়কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করছে বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজে, যা বন্ধ হওয়া উচিৎ। ডিএনসিসির আওতাধীন মার্কেট, পাবলিক প্লেস ও বিপণন কেন্দ্রগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের লংঘন বন্ধ করতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন বক্তারা।

এছাড়াও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ রাখা এবং সেই বরাদ্দকৃত বাজেট ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে ধূমপানমুক্ত নিশ্চিত করতে হবে। এবং সামাজিক মাধ্যমে তামাকের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে তরুণদের এ কাজে এগিয়ে আশার আহ্বান জানানো হয়।

ঢাকা/হাসান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এনস স ন শ চ ত কর ড এনস স র কর মকর ত বর দ দ

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ