Samakal:
2025-08-01@00:17:49 GMT

ইভা নাফি নিহান বাঁচবে কীভাবে

Published: 29th, May 2025 GMT

ইভা নাফি নিহান বাঁচবে কীভাবে

প্রতিদিনই সন্তানদের জন্য কাজ শেষে কোনো না কোনো খাবার নিয়ে ফিরতেন সবুজ মিয়া। বুধবার রাতেও তার তিন সন্তান অপেক্ষায় ছিলেন বাবার। গরম ভাত-তরকারি নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলেন তাদের মা আকলিমা আক্তারও। কিন্তু তাদের অপেক্ষার প্রহর আর ফুরাবে না কোনোদিন। 

বুধবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার দত্তপাড়ায় বাসচাপায় প্রাণ হারান সবুজ মিয়া (৩৬)। একই সঙ্গে মারা যান তার বাবা আব্দুস ছোবানও (৬৭)। এ দুর্ঘটনায় কহিনূর সুলতানা (৩৫) নামের আরেক নারীরও মৃত্যু হয়। 

আজ বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাইকুরা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন হয় বাবা-ছেলের। স্বজনেরা জানায়, পরিবারটিতে কর্মক্ষম মানুষ বলে দুইজনই ছিলেন। ছোবানের একমাত্র ছেলে সবুজ। তাঁর ছোট পাঁচ বোনের বিয়ে হয়েছে। একমাত্র অবিবাহিত ছোট বোন সীমা আক্তার (১৬) থাকেন মা নাছিমা আক্তারকে নিয়ে। স্বামী ও একমাত্র ছেলে হারিয়ে নাছিমা পাগলপ্রায়। সবুজের মেয়ে সানজিদা হুম ইভা (১২) একটি মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলে নাফিউল ইসলাম (৯) মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের ছাত্র। ছোট ছেলে ইফতিয়ার হাসান নিহানের বয়স সবে চার। ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না সে। 

এদিন দুপুরে স্বজনেরা গ্রামের বাড়িতে দু’জনের মরদেহের অপেক্ষায় ছিলেন। সেখানে কথা হয় আকলিমার সঙ্গে। বিলাপের সুরে তিনি বলেন, গরম ভাত-তরকারি রান্না করে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলেন। সন্তানেরাও বাবার অপেক্ষায় ছিল। বাসায় আসার সময় ওদের বাবা হাতে করে খাবার নিয়ে আসেন। এমন সময় তারা সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী ও শ্বশুরের মৃত্যুর সংবাদ পান। আকলিমা বলেন, ‘খবরটা হুনার পরে আকাশটা মাথাত ভাইঙ্গা পড়ে। আমার ঝি-পুতগুলা তো এতিম অইয়া গেলো। আইজ তাইক্যা (থেকে) এরারে দেখনের কেউ রইলো না।’

সবুজ পেশায় স্যানিটারি মিস্ত্রি। তাঁর বাবা আব্দুস ছোবানও একই কাজ করেন। স্বজনেরা জানায়, ছোবান পাইকুরা গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। সবুজ স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকেন ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার জয়বাংলা মোড় এলাকায়। ছোবান বুধবার সকাল ৮টার দিকে সেখানে আসেন। ছেলেকে নিয়ে ময়মনসিংহে যান। কাজ সেরে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক ধরে অটোরিকশায় (মাহেন্দ্রা) করে ফেরার পথে বাসচাপায় দু’জনই নিহত হন। 

সবুজের ভগ্নিপতি মো.

আব্দুল মোতালেব বলেন, দুটি পরিবারকে দেখভালের জন্য কোনো পুরুষই আর নেই। তাদের বাড়ির ভিটাটুকো ছাড়া চলার মতো সহায়সম্পদও নেই। বাবা-ছেলে গায়ে-গতরে খেটে সংসার চালাতেন। সবুজের ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ পুরো অন্ধকার হয়ে গেলো।

ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও সানজিদা রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলের এমন মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক। বেশ কয়েকবার তাদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। 

তিন জেলায় আরও পাঁচজন নিহত

এদিকে সড়কে বুধবার ও বৃহস্পতিবার আরও পাঁচজনের প্রাণ গেছে। ঝিনাইদহের মহেশপুরের সরিষাঘাটায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন কলেজছাত্র সাইদুর রহমান (১৯)। তিনি উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যান তিনি। বুধবার রাতে সাতক্ষীরায় আমভর্তি ট্রাক উল্টে নিহত হয়েছেন ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম। 

রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার বাইপাস সড়কের চিংড়িখালী এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। শহিদুলের বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার কায়বা গ্রামে। সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে আম নিয়ে কালীগঞ্জের মৌতলা যাওয়ার পথে ওই ট্রাকটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।

এদিকে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের আরোহী তিন তরুণ নিহত হয়েছেন। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিরাজগঞ্জ-নলকা আঞ্চলিক সড়কের কুটিরচরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তরুণেরা হলেন– উল্লাপাড়ার সলঙ্গা থানার নলকা সেনগাতীর জয়নাল আবেদীনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (২২), আব্দুল হাইয়ের ছেলে আব্দুল গাফফার (২২) ও তাড়াশ উপজেলার তেঘরি গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে শোয়েব আলী (২০)। 

উপজেলার ভদ্রঘাট এলাকায় এসিআই-গোদরেজ কারখানায় কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তারা দুর্ঘটনার শিকার হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। কামারখন্দ থানার ওসি আব্দুর রউফ বলেন, ওই তিনজনের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ বৃহস্পতিবার সকালে বুঝিয়ে দিয়েছেন। 

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি এবং ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা]

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন দ র ঘটন য় উপজ ল র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক

জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সালিসে আসা এক যুবককে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবকের মা আনারা বেগম এ কথা জানান।

গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম আল-আমিন (৩২)। তাঁর বাড়ি নগরের বলাশপুর এলাকায়। মায়ের দাবি, আল-আমিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। সালিসে জমিজমার কাগজ ঠিক থাকায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে রাজি না হলে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ওই যুবক যুবলীগের সমর্থক। তাঁকে গ্রেপ্তারে কয়েকবার বাড়িতে অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ। থানায় তাঁকে পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁকে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল-আমিনের মা আনারা বেগম বলেন, ২০২১ সালে বলাশপুর এলাকায় স্বামীর পেনশনের ১৭ লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ জমি কেনেন তাঁরা। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেন এক ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর সরকার পরিবর্তন হলে নিজের কেনা জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ওই ব্যক্তি ও তাঁর পক্ষের লোকজন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। গত শনিবার রাত আটটায় থানায় সালিস শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সালিসে শেষ পর্যায়ে যখন জমির কাগজপত্র তাঁদের ঠিক পান সালিসকারীরা, তখন ওসি আল-আমিনকে তাঁর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পেছনে পেছনে তিনি গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর আল-আমিনকে গারদে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আনারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করে না। আমার ছেলে ব্যবসা করে। তাকে রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ কারাগারে পাঠিয়েছে।’

২৭ জুলাই আল-আমিনকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫ মিনিটে পুলিশের টহল দল নগরের আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড় সেলফি নামের স্থানে পাকা রাস্তার ওপর একদল সন্ত্রাসী জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরা, ২৫টি কাচের টুকরা জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ২৬ জুলাই রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নগরের কেওয়াটখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রতিবেদনে পুলিশ আল-আমিনকে যুবলীগের সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে।

থানার ওই সালিসে থাকা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. বাবু বলেন, থানা চত্বরের একটি ঘরে এসআই সজীব কোচের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের কাগজপত্র বোঝেন, এমন লোকজন নিয়ে সালিস শুরু হয়। একপর্যায়ে আল-আমিনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে তাঁকে থানা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।

জানতে চাইলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘১০ দিন আগে থেকে দারোগারা তাঁকে (আল-আমিন) ধরার জন্য খুঁজতেছে। ডেভিল হান্টের আসামি সে। আমাদের দুই দারোগা ছয় থেকে সাতবার তাঁর বাড়িতে রেড দিছে। সে যুবলীগের ফ্যাসিস্ট। মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্তে প্রাপ্ত আসামি।’ ওসি বলেন, কোনো কাগজপত্র দিয়ে নোটিশ করে তাঁকে থানায় ডাকা হয়নি। বিচারক যদি মনে করে আমরা তাঁকে ইলিগ্যাল অ্যারেস্ট করেছি, তাহলে আদালত ফাইন্ডিংস দেবেন। আসামিকে থানা থেকে গ্রেপ্তার করা কী নিষেধ আছে?’ আদালতের প্রতিবেদনে ভিন্ন স্থান দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জজ এটার বিচার করবে। যদি এমন কইরা থাকে, সমস্যা কী?’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে ১০ শ্রমিক আহত
  • ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদিন উদ্যানে উচ্ছেদ হচ্ছে মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক
  • অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
  • ময়মনসিংহে ময়লা ছিটিয়ে টাকা ছিনতাই, দুই বছর পর ঢাকা থেকে আসামি গ্রেপ্তার
  • সাগরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত, ঢাকাসহ ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
  • ময়মনসিংহের সেই মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের চুক্তি বাতিল, অপসারণের উদ্যোগ
  • ময়মনসিংহে বন্ধুর বাড়িতে যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ
  • টাঙ্গাইলে কুকুরের কামড়ে ২৫ জন আহত
  • জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
  • ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি, আজও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস