Samakal:
2025-05-30@12:11:26 GMT

ইভা নাফি নিহান বাঁচবে কীভাবে

Published: 29th, May 2025 GMT

ইভা নাফি নিহান বাঁচবে কীভাবে

প্রতিদিনই সন্তানদের জন্য কাজ শেষে কোনো না কোনো খাবার নিয়ে ফিরতেন সবুজ মিয়া। বুধবার রাতেও তার তিন সন্তান অপেক্ষায় ছিলেন বাবার। গরম ভাত-তরকারি নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলেন তাদের মা আকলিমা আক্তারও। কিন্তু তাদের অপেক্ষার প্রহর আর ফুরাবে না কোনোদিন। 

বুধবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার দত্তপাড়ায় বাসচাপায় প্রাণ হারান সবুজ মিয়া (৩৬)। একই সঙ্গে মারা যান তার বাবা আব্দুস ছোবানও (৬৭)। এ দুর্ঘটনায় কহিনূর সুলতানা (৩৫) নামের আরেক নারীরও মৃত্যু হয়। 

আজ বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাইকুরা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন হয় বাবা-ছেলের। স্বজনেরা জানায়, পরিবারটিতে কর্মক্ষম মানুষ বলে দুইজনই ছিলেন। ছোবানের একমাত্র ছেলে সবুজ। তাঁর ছোট পাঁচ বোনের বিয়ে হয়েছে। একমাত্র অবিবাহিত ছোট বোন সীমা আক্তার (১৬) থাকেন মা নাছিমা আক্তারকে নিয়ে। স্বামী ও একমাত্র ছেলে হারিয়ে নাছিমা পাগলপ্রায়। সবুজের মেয়ে সানজিদা হুম ইভা (১২) একটি মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলে নাফিউল ইসলাম (৯) মাদ্রাসার নূরানী বিভাগের ছাত্র। ছোট ছেলে ইফতিয়ার হাসান নিহানের বয়স সবে চার। ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না সে। 

এদিন দুপুরে স্বজনেরা গ্রামের বাড়িতে দু’জনের মরদেহের অপেক্ষায় ছিলেন। সেখানে কথা হয় আকলিমার সঙ্গে। বিলাপের সুরে তিনি বলেন, গরম ভাত-তরকারি রান্না করে স্বামীর অপেক্ষায় ছিলেন। সন্তানেরাও বাবার অপেক্ষায় ছিল। বাসায় আসার সময় ওদের বাবা হাতে করে খাবার নিয়ে আসেন। এমন সময় তারা সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী ও শ্বশুরের মৃত্যুর সংবাদ পান। আকলিমা বলেন, ‘খবরটা হুনার পরে আকাশটা মাথাত ভাইঙ্গা পড়ে। আমার ঝি-পুতগুলা তো এতিম অইয়া গেলো। আইজ তাইক্যা (থেকে) এরারে দেখনের কেউ রইলো না।’

সবুজ পেশায় স্যানিটারি মিস্ত্রি। তাঁর বাবা আব্দুস ছোবানও একই কাজ করেন। স্বজনেরা জানায়, ছোবান পাইকুরা গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। সবুজ স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকেন ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার জয়বাংলা মোড় এলাকায়। ছোবান বুধবার সকাল ৮টার দিকে সেখানে আসেন। ছেলেকে নিয়ে ময়মনসিংহে যান। কাজ সেরে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক ধরে অটোরিকশায় (মাহেন্দ্রা) করে ফেরার পথে বাসচাপায় দু’জনই নিহত হন। 

সবুজের ভগ্নিপতি মো.

আব্দুল মোতালেব বলেন, দুটি পরিবারকে দেখভালের জন্য কোনো পুরুষই আর নেই। তাদের বাড়ির ভিটাটুকো ছাড়া চলার মতো সহায়সম্পদও নেই। বাবা-ছেলে গায়ে-গতরে খেটে সংসার চালাতেন। সবুজের ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ পুরো অন্ধকার হয়ে গেলো।

ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও সানজিদা রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলের এমন মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক। বেশ কয়েকবার তাদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। 

তিন জেলায় আরও পাঁচজন নিহত

এদিকে সড়কে বুধবার ও বৃহস্পতিবার আরও পাঁচজনের প্রাণ গেছে। ঝিনাইদহের মহেশপুরের সরিষাঘাটায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন কলেজছাত্র সাইদুর রহমান (১৯)। তিনি উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যান তিনি। বুধবার রাতে সাতক্ষীরায় আমভর্তি ট্রাক উল্টে নিহত হয়েছেন ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম। 

রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার বাইপাস সড়কের চিংড়িখালী এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। শহিদুলের বাড়ি যশোরের শার্শা উপজেলার কায়বা গ্রামে। সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে আম নিয়ে কালীগঞ্জের মৌতলা যাওয়ার পথে ওই ট্রাকটি দুর্ঘটনার শিকার হয়।

এদিকে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের আরোহী তিন তরুণ নিহত হয়েছেন। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিরাজগঞ্জ-নলকা আঞ্চলিক সড়কের কুটিরচরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তরুণেরা হলেন– উল্লাপাড়ার সলঙ্গা থানার নলকা সেনগাতীর জয়নাল আবেদীনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (২২), আব্দুল হাইয়ের ছেলে আব্দুল গাফফার (২২) ও তাড়াশ উপজেলার তেঘরি গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে শোয়েব আলী (২০)। 

উপজেলার ভদ্রঘাট এলাকায় এসিআই-গোদরেজ কারখানায় কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তারা দুর্ঘটনার শিকার হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। কামারখন্দ থানার ওসি আব্দুর রউফ বলেন, ওই তিনজনের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ বৃহস্পতিবার সকালে বুঝিয়ে দিয়েছেন। 

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি এবং ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা]

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন দ র ঘটন য় উপজ ল র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে ১১ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি ট্রেন লাইনচ্যুত

ময়মনসিংহ নগরের শম্ভুগঞ্জে চট্টগ্রামগামী ময়মনসিংহ এক্সপ্রেসের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টার দিকে লাইন থেকে বগিটি সরানোর পর ওই পথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নগরের বেগুনবাড়ি রেলস্টেশনের কাছে জামালপুরের তারাকান্দিগামী আন্তনগর যমুনা ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়। এতে জামালপুরের সঙ্গে ময়মনসিংহের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে আজ সকাল ছয়টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বৈরী আবহাওয়ায় বেগুনবাড়ি এলাকায় রেললাইনের ওপর একটি গাছ উপড়ে পড়লে ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় কারণে গতকাল রাত ১২টার দিকে শম্ভুগঞ্জে রেললাইনে গাছ পড়ে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস আটকা পড়ে। পরে গাছ সরিয়ে নিলে ট্রেনটি পুনরায় চালু হয়।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট নাজমুল হক খান বলেন, ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে বগিটি সরানোর পর ওই পথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল রাতে লাইনচ্যুত হওয়া ট্রেন যমুনা উদ্ধার শেষে ভোর ছয়টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আর কতদিন থাকবে বৃষ্টি?
  • ঢাকায় আজ মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত
  • ময়মনসিংহে ১১ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি ট্রেন লাইনচ্যুত
  • ইভা নাফি নিহান বাঁচবে কীভাবে, বাবা-দাদার প্রাণ গেল সড়কে
  • বাসচাপায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩, আহত ৬
  • ঈশ্বরগঞ্জে বিআরটিসি বাসের চাপায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩, আহত ৩
  • ঈশ্বরগঞ্জে বাসচাপায় প্রাণ গেল বাবা-ছেলেসহ তিনজনের
  • ময়মনসিংহে বিআরটিসির বাসের ধাক্কায় নিহত ৩
  • ঈশ্বরগঞ্জে বাসচাপায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩