রাজশাহী ও চট্টগ্রামে ছাত্র জোটের মিছিলে হামলার প্রতিবাদে এবং এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়ায় পৃথকভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসব সমাবেশ হয়। ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীরা ওই দুই হামলা চালিয়েছেন অভিযোগ করে তাঁদের গ্রেপ্তার দাবি করা হয় এসব সমাবেশ থেকে।

ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আয়োজিত সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, ‘আমরা এখানে দুটি কারণে দাঁড়িয়েছি। একটি হচ্ছে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে আমাদের বন্ধুদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলা চালিয়েছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ছাত্রশিবির। দ্বিতীয়টি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুলকে তাঁর যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে, তা পরিষ্কার না করে সরকারের যাঁরা কর্তাব্যক্তি আছেন, তাঁরা এটিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হিসেবে বিবেচনা করছেন।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক সুহাইল আহমেদ অভিযোগ করেন, গত পরশু (বুধবার) ছাত্র ফ্রন্টের স্কুলবিষয়ক সম্পাদক বিশ্বজিৎ নন্দী রাতে বাসায় ফেরার সময় শিবিরের সন্ত্রাসীরা ‘মব’ সৃষ্টি করে তাকে আটকে রাখে। পরে তাঁকে থানায় নিয়ে গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে পুলিশ। এর নিন্দা জানিয়ে ছাত্র ফ্রন্টের এই নেতা বলেন, ‘সেই পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আমরা ধিক্কার জানাই। আমাকে আটকে রাখা হয় শুধুমাত্র আজহারকে রাজাকার সাব্যস্ত করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার কারণে।’

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন শুভ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধকারী আলবদর বাহিনীর নেতাকে মুক্ত করা হয়েছে। তার প্রতিবাদে দেশব্যাপী একাত্তরের পক্ষের শক্তি আন্দোলন–সংগ্রাম করছে। এই আন্দোলনে একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত-শিবির মব সৃষ্টি করছে, উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে।

ছাত্র ইউনিয়নের এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসগুলোতে মবের ইন্ধন দিচ্ছে জামায়াত-শিবির। বিভিন্ন হলে তারা ছাত্রলীগের মতো একক আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। যারা একাত্তরের বিপক্ষে কাজ করেছে, পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে, তাদের রাজনীতি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলতে দেওয়া যায় না।’

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করেন দুই সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। মিছিলটি শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে এসে শেষ হয়। মিছিল থেকে ‘জামায়াত-শিবির যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’, ‘লীগ গেছে যেই পথে, শিবির যাবে সেই পথে’, ‘হাসিনা-আজহার এই বাংলার গাদ্দার’সহ নানা স্লোগান দেওয়া হয়।

পরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক তাহমিদ হোসেনের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠক সাজেদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামে হামলায় যুক্ত ‘ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসীদের’ চিহ্নিত করে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান মোজাম্মেল হক। সমাবেশে তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পরে আওয়াজ উঠেছিল সন্ত্রাসের রাজনীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু ছাত্রশিবির এই আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান নিচ্ছে। সন্ত্রাসের রাজনীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী-জনতার ঐক্যবদ্ধ অবস্থান জারি রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গনের জন্য ডাকসুসহ সকল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়াজ তুলতে হবে।’

ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্দেশে নূজিয়া হাসিন রাশা বলেন, ‘আপনাদের রাজনীতি যদি আওয়ামী লীগের রাজনীতির মতো হয়, তাহলে সেই রাজনীতি বাংলাদেশের জনগণ ছুড়ে ফেলে দেবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত র ফ রন ট র গণত ন ত র ক র র জন ত ইসল ম আজহ র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ছেলে-মেয়ে ৫ম শ্রেণি পাস করলেই ছাত্রশিবিরে ভর্তি করানোর আহ্বান’

ছেলে-মেয়েরা ৫ম শ্রেণি পাস করলেই তাদেরকে ছাত্রশিবিরে ভর্তি করানোর আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।

শনিবার গোপালগঞ্জ শহরের বিসিক এলাকায় অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেছেন, ‘জনগণ সন্ত্রাস, নৈরাজ্যমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ যদি আগামীতে জামায়াতকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয় তাহলে জামায়াত রাজা হবে না, জনগণকে প্রজা বানাবে না। আমরা হব- দেশের মানুষের সেবক।’

গোপালগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা জমায়াতের আমির মাওলানা বদরুদ্দিন, গোপালগঞ্জ জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আজমল হোসেন সরদার প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ