ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ থেকে হামলাকারী ‘শিবির সদস্যদের’ গ্রেপ্তার দাবি
Published: 30th, May 2025 GMT
রাজশাহী ও চট্টগ্রামে ছাত্র জোটের মিছিলে হামলার প্রতিবাদে এবং এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়ায় পৃথকভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসব সমাবেশ হয়। ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা–কর্মীরা ওই দুই হামলা চালিয়েছেন অভিযোগ করে তাঁদের গ্রেপ্তার দাবি করা হয় এসব সমাবেশ থেকে।
ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আয়োজিত সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, ‘আমরা এখানে দুটি কারণে দাঁড়িয়েছি। একটি হচ্ছে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে আমাদের বন্ধুদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলা চালিয়েছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ছাত্রশিবির। দ্বিতীয়টি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুলকে তাঁর যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে, তা পরিষ্কার না করে সরকারের যাঁরা কর্তাব্যক্তি আছেন, তাঁরা এটিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হিসেবে বিবেচনা করছেন।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক সুহাইল আহমেদ অভিযোগ করেন, গত পরশু (বুধবার) ছাত্র ফ্রন্টের স্কুলবিষয়ক সম্পাদক বিশ্বজিৎ নন্দী রাতে বাসায় ফেরার সময় শিবিরের সন্ত্রাসীরা ‘মব’ সৃষ্টি করে তাকে আটকে রাখে। পরে তাঁকে থানায় নিয়ে গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে পুলিশ। এর নিন্দা জানিয়ে ছাত্র ফ্রন্টের এই নেতা বলেন, ‘সেই পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আমরা ধিক্কার জানাই। আমাকে আটকে রাখা হয় শুধুমাত্র আজহারকে রাজাকার সাব্যস্ত করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার কারণে।’
সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন শুভ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধকারী আলবদর বাহিনীর নেতাকে মুক্ত করা হয়েছে। তার প্রতিবাদে দেশব্যাপী একাত্তরের পক্ষের শক্তি আন্দোলন–সংগ্রাম করছে। এই আন্দোলনে একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত-শিবির মব সৃষ্টি করছে, উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে।
ছাত্র ইউনিয়নের এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসগুলোতে মবের ইন্ধন দিচ্ছে জামায়াত-শিবির। বিভিন্ন হলে তারা ছাত্রলীগের মতো একক আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। যারা একাত্তরের বিপক্ষে কাজ করেছে, পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে, তাদের রাজনীতি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলতে দেওয়া যায় না।’
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করেন দুই সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। মিছিলটি শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে এসে শেষ হয়। মিছিল থেকে ‘জামায়াত-শিবির যেখানে, লড়াই হবে সেখানে’, ‘লীগ গেছে যেই পথে, শিবির যাবে সেই পথে’, ‘হাসিনা-আজহার এই বাংলার গাদ্দার’সহ নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
পরে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক তাহমিদ হোসেনের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সংগঠক সাজেদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামে হামলায় যুক্ত ‘ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসীদের’ চিহ্নিত করে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান মোজাম্মেল হক। সমাবেশে তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পরে আওয়াজ উঠেছিল সন্ত্রাসের রাজনীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু ছাত্রশিবির এই আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান নিচ্ছে। সন্ত্রাসের রাজনীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী-জনতার ঐক্যবদ্ধ অবস্থান জারি রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গনের জন্য ডাকসুসহ সকল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়াজ তুলতে হবে।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্দেশে নূজিয়া হাসিন রাশা বলেন, ‘আপনাদের রাজনীতি যদি আওয়ামী লীগের রাজনীতির মতো হয়, তাহলে সেই রাজনীতি বাংলাদেশের জনগণ ছুড়ে ফেলে দেবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত র ফ রন ট র গণত ন ত র ক র র জন ত ইসল ম আজহ র
এছাড়াও পড়ুন:
২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হচ্ছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে
জালিয়াতির মাধ্যমে এলসির বিপরীতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পাঁচটি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন, তাতে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানও আসামি হতে যাচ্ছেন।
আজ সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় মামলাগুলোর অনুমোদন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি, শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান রহমানের পাশাপাশি তাঁর ছেলে, ভাই, ভাতিজা, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাগুলো হবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অনুমোদিত পাঁচ মামলায় ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে মোট ২১ কোটি ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৮০১ মার্কিন ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছেলে শায়ান এফ রহমান, ভাই বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সোহেল এফ রহমান, সোহেল রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমান, বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক ইকবাল আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী, পরিচালক এ বি সিদ্দিকুর রহমান, মাসুদ ইকরামুল্লাহ খান, শাহ মঞ্জুরুল হক ও রীম এইচ শামসুদ্দোহা।
এ ছাড়া স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল বাশার ও পরিচালক নাসরিন আহমেদ, ক্রিসেন্ট অ্যাকসেসরিজের এমডি আবু নাঈম মাহমুদ সালেহিন ও পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তানভীর, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলিফ ইবনে জুলফিকার ও পরিচালক নুসরাত হায়দার, পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের এমডি ওয়াসীউর রহমান ও পরিচালক রিজিয়া আক্তার, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এমডি সালাউদ্দিন খান মজলিস ও পরিচালক আবদুর রউফ, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের এমডি মাহফুজুর রহমান খান ও পরিচালক সৈয়দ তানবির এলাহী আফেন্দী সম্ভাব্য আসামির তালিকায় রয়েছেন।
জনতা ব্যাংকের মধ্য থেকে আসামি করা হচ্ছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ ও আবদুল জব্বার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক আবদুর রহিম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক শহিদুল হক, অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম (রপ্তানি বিভাগ) মমতাজুল ইসলাম, সিনিয়র অফিসার রফিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক সালেহ আহম্মেদ, অবসরপ্রাপ্ত এজিএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) মোহাম্মদ শাজাহান, সাবেক এজিএম (রপ্তানি) হুমায়ুন কবির ঢালী ও প্রিন্সিপাল অফিসার শ ম মাহাতাব হোসাইন বাদশাকে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের যোগসাজশে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা হয়। এর মধ্যে পিয়ারলেস গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ৫ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৭২ দশমিক ২৫ ডলার, প্লাটিনাম গার্মেন্টস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৩ হাজার ৬৫৮ দশমিক ৯১ ডলার, কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ৮ কোটি ৪০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৭ দশমিক ৪৫ ডলার, স্কাইনেট অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৪০ ডলার এবং ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪৬ ডলার আত্মসাৎ হয়।
সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
সাবেক সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয়।