পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ, যা হজরত ইবরাহিম (আ.)–এর ত্যাগের স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে। কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, যদি কেউ আর্থিক সংকটের কারণে কোরবানি দিতে না পারেন, তাহলে কী করবেন? এতে কি কোনো গুনাহ হবে?
কোরবানি সুন্নাহ না ওয়াজিব
সাধারণত কোরবানি ইসলামে একটি উত্তম সুন্নাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.
এমন না হলে আর্থিক সামর্থ্য থাকলেও কোরবানি বাধ্যতামূলক নয়।
যদি সম্ভব হয়, আরাফার দিন (জিলহজের নবম দিন) রোজা রাখুন। এটি বিগত ও আগামী এক বছরের গুনাহর কাফফারা হিসেবে কাজ করে (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,৯৮৮)আরও পড়ুনকাবা শরিফ মার্বেল পাথরের অপূর্ব কাহিনি১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪আর্থিক অসামর্থ্য
ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের ওপর তার সাধ্যের বাইরে কোনো বোঝা চাপায় না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)। যদি কেউ আর্থিক সংকটের কারণে কোরবানি দিতে না পারেন, তাহলে তাঁর ওপর কোনো গুনাহ বা দায় নেই। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি যা নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাকো; আর আমি যা আদেশ করেছি, তা তোমাদের সাধ্যমতো পালন করো’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৩৩৭)। এই হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয় যে ইসলামে সাধ্যের মধ্যে আমল করাই যথেষ্ট।
কোনো কারণে কোরবানি দিতে না পারলে
কেউ যদি কোরবানির দিনগুলোয় ওয়াজিব কোরবানি দিতে না পারেন, তাহলে কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তাঁর ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিলেন, কিন্তু কোনো কারণে কোরবানি দেওয়া হয়নি, তাহলে ওই পশু জীবিত সদকা করে দেবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪, ফাতাওয়া কাজিখান ৩/৩৪৫)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমি যা নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাকো; আর আমি যা আদেশ করেছি, তা তোমাদের সাধ্যমতো পালন করো।’(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৩৩৭)আরও পড়ুন মসজিদে নববি ভ্রমণ করা যাবে ঘরে বসেই৩০ জানুয়ারি ২০২৩তাহলে কী করবেন?
যদি আপনি এ বছর কোরবানি দিতে না পারেন, তাহলেও পবিত্র ঈদুল আজহার এই পবিত্র সময়ে আপনি অন্যান্য উপায়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে পারেন।
যেমন ঈদের নামাজে অংশ নিয়ে খুতবা শুনুন এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্ম হোন। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ বেশি বেশি পড়ুন। এটি আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি সহজ উপায়। যদি সম্ভব হয়, আরাফার দিন (জিলহজের নবম দিন) রোজা রাখুন। এটি বিগত ও আগামী এক বছরের গুনাহর কাফফারা হিসেবে কাজ করে (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,৯৮৮)
আর্থিক সামর্থ্য না থাকলেও ছোট পরিমাণে দান করা যায়। এমনকি একটি হাসি বা সদাচরণও সদকার অংশ। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখা করুন, শুভেচ্ছা বিনিময় করুন। এটি ঈদের আনন্দকে আরও গভীর করে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং নিজের আমলের উন্নতির জন্য দোয়া করুন। তওবা হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করে।
যেমন ঈদের নামাজে অংশ নিয়ে খুতবা শুনুন এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্ম হোন। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ বেশি বেশি পড়ুন। এটি আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি সহজ উপায়।আরও পড়ুনকী কী আমলের মাধ্যমে রিজিক বাড়ে০৪ অক্টোবর ২০২৪কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া বা আল্লাহভীতি। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তাদের মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তোমাদের তাকওয়া তাঁর কাছে পৌঁছে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৩৭)
তাই আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে কোরবানি দিতে না পারলেও আপনি অন্যান্য সৎকর্মের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রব ন র আর থ ক স আল ল হ জ লহজ
এছাড়াও পড়ুন:
এবি ব্যাংকের ১,৯০৬ কোটি টাকা লোকসান
শেয়াবাজারে তালিকাভুক্ত এবি ব্যাংক লোকসানে আছে। গত বছর ব্যাংকটির ১ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এ কারণে গত হিসাববছরের জন্য লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটি। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এবি ব্যাংকের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে সমন্বিতভাবে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২১ টাকা ২৮ পয়সা। ফলে গত বছর ব্যাংকটির লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা। আগের বছর তাদের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছিল এক টাকা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছিল ৯০ কোটি টাকা।
সর্বশেষ বছরে সমন্বিতভাবে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ ছিল মাইনাস ৪২ টাকা ২৩ পয়সা, যেখানে আগের বছর তা ছিল ১০ টাকা ৯৮ পয়সা। গত ৩১ ডিসেম্বর সমন্বিতভাবে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৭ টাকা ১৯ পয়সা।
আগামী ৫ আগস্ট সকাল ১০টায় হাইব্রিড পদ্ধতিতে ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। সে জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ জুন।
সেবায় উৎকর্ষ ঘটিয়ে একসময় গ্রাহক আকর্ষণে অন্যতম সেরা হয়ে উঠেছিল প্রথম প্রজন্মের এবি ব্যাংক। এর নেপথ্যে ছিলেন কর্মকর্তারা। ফলে ব্যাংকটি বিভিন্ন সূচকে বেশ এগিয়ে যায়। কিন্তু পরে শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি এবং উদ্যোক্তাদের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার কারণে ব্যাংকটির আর্থিক সূচক ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ বেড়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে চাহিদামতো নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখলে ব্যাংকটিকে আরও কয়েক গুণ লোকসান গুনতে হতো। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক থাকলেও উন্নতি হয়নি।
এবি ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা সাবেক বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘ সময় তাঁর পক্ষে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন ওয়াহিদুল হক, যিনি মোরশেদ খানের চা-বাগানের পরিচালক ছিলেন। এরপর সাবেক ডেপুটি গভর্নর মোহাম্মদ এ (রুমী) আলীও তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন। তাতেও উন্নতি হয়নি। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খায়রুল আলম চৌধুরীও চেয়ারম্যান ছিলেন; তিনিও ব্যাংকের উন্নতি করতে পারেননি। তাঁরা সবাই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন। এখন এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবি ব্যাংকের সাবেক এমডি কাইজার এ চৌধুরী।
জানা গেছে, এবি ব্যাংকের শীর্ষ গ্রাহকদের বেশির ভাগই নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছে না। এর মধ্যে অন্যতম হলো সিকদার গ্রুপ, আশিয়ান সিটি, বিল্ডট্রেড, মাহিন গ্রুপ, আমান গ্রুপ, এরশাদ ব্রাদার্স ও স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম ওরফে মিঠুর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণও আদায় করতে পারছে না ব্যাংকটি। এ ছাড়া মোরশেদ খানের মালিকানাধীন বন্ধ হয়ে যাওয়া মোবাইল অপারেটর সিটিসেলের ঋণও খেলাপি হয়ে রয়েছে। ফলে ব্যাংকটির ঋণ থেকে যে সুদ আয় হচ্ছে, তা দিয়ে আমানতকারীদের সুদ পরিশোধ করতে পারছে না।