জুলাইয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জাতীয় সনদ’ ঘোষণা করা হতে পারে: বদিউল আলম মজুমদার
Published: 31st, May 2025 GMT
আগামী জুলাই মাসে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তবে এটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার মতবিনিময় শুরু হবে। আশা করছি, দ্বিতীয়বারের আলোচনায় আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। তার ভিত্তিতে একটি জাতীয় সনদ হবে। এই সনদে সবাই স্বাক্ষর করবে। আমরা আশা করছি, এটা জুলাইয়ে হতে পারে। এটা আমার আকাঙ্ক্ষা। এটা কোনো সিদ্ধান্ত না।’
সুজন সম্পাদক বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা, যেদিন আবু সাঈদ প্রাণ দিয়েছিল, যাঁর মাধ্যমে সারা বাংলাদেশ জেগে উঠেছিল, সেদিন যদি আমরা এটা করতে পারি, এটা আবু সাঈদ, মুগ্ধ যাঁরা শহীদ তাঁদের রক্তের ঋণ আমরা শোধ করতে পারব। জাতি হিসেবে আমরা ঋণমুক্ত হতে পারব।’
আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা শীর্ষক নাগরিক সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার এ কথাগুলো বলেন। ‘সচেতন, সংগঠিত ও সোচ্চার জনগোষ্ঠীই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ’ স্লোগানে রংপুর আরডিআরএস মিলনায়তনে এ সংলাপের আয়োজন করে সুজনের রংপুর মহানগর কমিটি। সভাপতিত্ব করেন মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার খায়রুল আনাম।
একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হলে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে সেমিনারে উল্লেখ করেন বদিউল আলম মজুমদার। কেন বিপজ্জনক সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে বদিউল আলম বলেন, ‘ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ার কতগুলো পন্থা আছে। একটা পন্থা হলো এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী–শাসিত সরকার। অর্থাৎ মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেন না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সব সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রীর অগাধ ক্ষমতা।’
একই ব্যক্তি আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকলে তাঁর পক্ষে স্বৈরাচারী হওয়া স্বাভাবিক বলে মত দেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘অতীতে যেটা ঘটেছে, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, সংসদ নেতা হয়েছেন। একই সঙ্গে দলীয় প্রধান হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হলো নির্বাহী বিভাগের প্রধান। সংসদ নেতা হলো আইনসভার প্রধান। একই ব্যক্তি যদি দুটো আসন অলংকৃত করেন, তাহলে ক্ষমতার বিভাজন নীতির বরখেলাপ।’
জুলাই প্রক্লেমেশন (জুলাই ঘোষণাপত্র) ও জুলাই সনদ এক কি না জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জুলাই প্রক্লেমেশন হলো একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা। গত জুলাইয়ের আন্দোলন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তারা তুলে ধরবে। জাতীয় সনদ হবে একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব। রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে ও স্বাক্ষর করবে। তারা নির্ধারণ করবে কীভাবে এটা বাস্তবায়িত হবে। আমার মতে দুটো ভিন্ন জিনিস।’
বদিউল আলম মজুমদার মত দেন যেসব সংস্কারের ক্ষেত্রে ঐকমত্যের প্রয়োজন নেই, সেগুলো শুরু করতে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর যেসব সংস্কার দরকার, প্রার্থী নির্বাচনের জন্য যেসব প্রস্তুতি দরকার এখন থেকে শুরু করতে পারে। সরকারের সেসব সংস্কারের জন্য সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে না, সেসব সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের প্রয়োজন হবে না। সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করলে দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম হবে। তিনি আশা করেন, সবাই যার যার করণীয় তাই করবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সব স স ক র জ ত য় সনদ ঐকমত য র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিপির নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখায় কী আছে
নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি রূপরেখা প্রস্তাব করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা আইনসভার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করার কথা বলেছে।
এনসিপির এই প্রস্তাব ২৫ মে ই-মেইলের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হলে প্রস্তাবটি সরাসরি হস্তান্তর করা হবে বলে এনসিপি সূত্র জানিয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’–এর বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। এই সরকারের একটি রূপরেখাও তারা প্রস্তাব করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় প্রায় সব দলই নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছে। তবে এই সরকারের রূপরেখা কেমন হবে, তা নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৯০ দিন। প্রধান উপদেষ্টাসহ সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্য নিয়ে কাজ করবে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবে নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভা—এই তিন অঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত হবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি)।
এই কাউন্সিলের ৯ সদস্যের মধ্যে ন্যূনতম ৭ জনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে। এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া না গেলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পর্যায়ক্রমে আরও ছয়টি পদ্ধতির কথা বলা আছে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে। উপদেষ্টা পরিষদের অন্য উপদেষ্টাদের মনোনয়ন দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
এনসিপির মতে, নির্বাচনকালীন এই সরকারের নাম হতে পারে ‘নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার’ বা ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাব হলো, আইনসভার নিম্নকক্ষ তথা সংসদ ভেঙে দেওয়ার অন্তত তিন সপ্তাহ আগে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হবে। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সর্বদলীয় কমিটিতে সংসদীয় দলগুলোর সদস্যসংখ্যা নির্ধারিত হবে। সংসদীয় কমিটিতে সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে যেকোনো দলকে ন্যূনতম ৫ শতাংশ ভোটের অধিকারী হতে হবে।
আইনসভার যেকোনো কক্ষের (উচ্চকক্ষ, নিম্নকক্ষ) সদস্য এই কমিটির সদস্য হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল এবং অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী/তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনজন করে মোট ৯ জন নির্দলীয় প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে পারবে। কোন দল কোন কোন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছে, জনগণের কাছে তা খোলাসা করতে হবে।
প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে একটি নাম চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে। কমিটি ৮-৩ ভোটে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে একজন ব্যক্তির নাম চূড়ান্ত করবে।
এই প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করা না গেলে উচ্চকক্ষ ‘র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং’পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে।
এনসিপি তাদের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু অযোগ্যতার কথাও বলেছে। সেগুলো হলো, কোনো ব্যক্তি দুর্নীতি বা কোনো ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হলে, নৈতিক স্খলনের বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ থাকলে; কোনো রাজনৈতিক দল বা অঙ্গসংগঠন, এর সমর্থক সংগঠন বা ছায়া সংগঠনের সদস্যপদ থাকলে এবং দলীয় বক্তব্যের নজির থাকলে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার অযোগ্য হবেন।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার প্রথম আলোকে বলেন, এবারের সংস্কারের এজেন্ডায় নিরবচ্ছিন্ন ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের রূপরেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অতীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসে অনির্বাচিত কায়দায় ক্ষমতায় থাকার অভিলাষ দেখা গেছে। এই দুরভিসন্ধি বন্ধ করতে হলে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে পেতে হবে। সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে নির্বাচনকালীন প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের সুপারিশ করেছে এনসিপি। এর ফলে সরকারি দলের প্রতি অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পথ বন্ধ হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম হবে।