শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যাসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সংক্রান্ত বৈঠক আয়োজনে সাময়িক স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঘোষিত সময় অনুযায়ী সপ্তম ধাপের কাজ তথা নির্বাচন কমিশন গঠনের কাজ এগিয়ে চলেছে।

ইতোমধ্যেই ৭ জন শিক্ষকের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনজনের নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম শামীম রেজা ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম।

সোমবার (২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি: টাইমলাইন অনুযায়ী অগ্রগতি অব্যাহত’ শীর্ষক এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করে, ডাকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও আগ্রহকে সম্মান জানিয়ে প্রশাসন একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

এই প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গত ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের একটি টাইমলাইন প্রকাশ করে। এই টাইমলাইন অনুসারেই নির্বাচন আয়োজনের কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। ঘোষিত টাইমলাইন অনুসারে চতুর্থ ধাপের কাজ পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম ধাপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত কার্যক্রমের ফলাফল নিয়ে পঞ্চম ধাপে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্বের বৈঠক গত ১৩ মে সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঈদের ছুটির পর ক্যাম্পাস খোলা হলে সেটি সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া ষষ্ঠ ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি ও সম্ভাব্য শিক্ষকদের কেউ কেউ ছুটিতে থাকায় নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, শিগগিরই প্রস্তাবিত নামগুলো তাদের আনুষ্ঠানিক সম্মতির ভিত্তিতে ঈদের ছুটি শেষে অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেটে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সিন্ডিকেটে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন হবে। কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের পরবর্তী ধাপগুলো শুরু হবে এবং সময়মতো সবাইকে সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবার সহযোগিতা কামনা করছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এই আলোচনা পর্বে ছয়টি সভা শেষে একটি সংশোধিত গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করা হয়, যা ইতোমধ্যে ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে এবং তা সর্বশেষ সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে।

২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ‘ডাকসু ইলেকশন কোড অব কনডাক্ট রিভিউ কমিটি’ গঠন করা হয়, যারা এ পর্যন্ত সাতটি সভা সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন আচরণবিধির খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং সেটিও সর্বশেষ সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি ছাত্রসংগঠন, হল প্রশাসন, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে নয়টি মতবিনিময় সভা করেছে। কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল অংশীজনের সহযোগিতায় এবং সকল পক্ষকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

গত ১৩ মে দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গভীরভাবে শোকাহত। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে প্রশাসন একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে এবং হালনাগাদ তথ্য দেয়া হচ্ছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, মামলার অগ্রগতি তদারকি এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত সভা আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাম্য হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে বলেও জানানো হয়েছে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বাম সংগঠনগুলোর একটা বড় অংশ এক ছাতার নিচে এসেছে। তারা যে প্যানেল দিয়েছে, তাতে জায়গা পেয়েছেন মূলত জোটে থাকা সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাই। নারী আছেন মাত্র একজন। তবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিতি তৈরি হওয়াকে এই প্যানেলের ‘বড় শক্তি’ বলে মনে করা হচ্ছে।

রাকসুর ২৩ পদের বিপরীতে ১৬টিতে প্রার্থী দিয়েছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তাদের প্যানেলের নাম ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’। এই প্যানেলে আছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র গণমঞ্চ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক–সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন শিক্ষার্থী আছেন দুজন। তবে প্যানেলে থাকা দুজন সদস্য সরে দাঁড়িয়েছেন।

এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ কাউছার আহম্মেদ এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী করা হয়েছে ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে।

বাম জোটের নেতারা বলছেন, ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছেন তাঁরা। এর মাধ্যমেই তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের ‘প্রধান কণ্ঠস্বর’ হিসেবে কাজ করেছেন, করছেন। তাঁদের দাবি, এটাই তাঁদের বড় শক্তি।

প্রার্থীদের প্রায় সবাই জোটের নেতা

বামদের এই প্যানেলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লড়বেন বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ। মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের শ্রেয়সী রায়, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর হাসান শাহরিয়ার খন্দকার আলিফ এবং তথ্য ও গবেষণা সহসম্পাদক পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব আলী।

এ ছাড়া সহবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রিসার্চ চাকমা এবং সহপরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীন ত্রিপুরাকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য মুনতাসির তাসিন, পরিবেশ ও সমাজসেবা–বিষয়ক সম্পাদক পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আজমাইন আতিক ও নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ।

এই প্যানেল থেকে জোটের বাইরে দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী ফাহিম মুনতাসির এবং নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন আসাদ সাদিক।

দাবি আদায়ের মাঠে থাকা ‘বড় শক্তি’

শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার আন্দোলনে বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সব সময় মাঠে দেখা গেছে। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও তাঁরা তৎপর থেকেছেন। সংখ্যায় কম থাকলেও আন্দোলনের জায়গায় পিছিয়ে ছিলেন না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্ম ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও বাম নেতারা ছিলেন সোচ্চার।

শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্য, পরিবহনসংকট, ফি কমানো, নারীদের নিরাপত্তাসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে আসছে বাম সংগঠনগুলো। জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয় ছিল তারা। এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একজন।

বাম নেতারা বলছেন, নব্বই–পরবর্তী বাম রাজনীতির ক্রান্তিকাল চলছে। এর পর থেকে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়ে গেছে। সেই ছায়া পড়েছে প্রগতিশীল রাজনীতিতে। অন্য সংগঠনগুলোতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাম রাজনীতি করলে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বাম সংগঠনগুলো যে সব সময় সক্রিয় থেকেছে, এটাকেই রাকসু নির্বাচনে একটা বড় শক্তি মনে করছেন তাঁরা।

বামদের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলন করায় আমরা ক্যাম্পাসে পরিচিত। সে হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষিত। বিগত দিনে আমরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রধান কণ্ঠ ছিলাম। আমাদের তারা মূল্যায়ন করবে। আমাদের এই লড়াই–ই বড় শক্তি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংগীতশিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বাতিলের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়: আসক
  • শাকসু নির্বাচন সামনে রেখে একাধিক শর্তে ছাত্ররাজনীতি চালুর সুপারিশ
  • রাকসু নির্বাচন: ৬ দফা দাবিতে ছাত্রদলের স্মারকলিপি
  • ভিন্ন পরিবেশে নির্বাচন, সবারই প্রথম অভিজ্ঞতা
  • রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’
  • অন্তর্বর্তী সরকার না চাইলে ‘মব সন্ত্রাসের’ ঘটনাগুলো ঘটতে পারত না: বাম গণতান্ত্রিক জোট
  • শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কেমন ছাত্ররাজনীতি দেখতে চান