ডাকসুর নির্বাচন কমিশনের ৩ সদস্য চূড়ান্ত
Published: 2nd, June 2025 GMT
শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যাসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সংক্রান্ত বৈঠক আয়োজনে সাময়িক স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঘোষিত সময় অনুযায়ী সপ্তম ধাপের কাজ তথা নির্বাচন কমিশন গঠনের কাজ এগিয়ে চলেছে।
ইতোমধ্যেই ৭ জন শিক্ষকের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনজনের নাম প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.
সোমবার (২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি: টাইমলাইন অনুযায়ী অগ্রগতি অব্যাহত’ শীর্ষক এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করে, ডাকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও আগ্রহকে সম্মান জানিয়ে প্রশাসন একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
এই প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গত ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের একটি টাইমলাইন প্রকাশ করে। এই টাইমলাইন অনুসারেই নির্বাচন আয়োজনের কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। ঘোষিত টাইমলাইন অনুসারে চতুর্থ ধাপের কাজ পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম ধাপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত কার্যক্রমের ফলাফল নিয়ে পঞ্চম ধাপে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্বের বৈঠক গত ১৩ মে সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঈদের ছুটির পর ক্যাম্পাস খোলা হলে সেটি সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া ষষ্ঠ ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি ও সম্ভাব্য শিক্ষকদের কেউ কেউ ছুটিতে থাকায় নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, শিগগিরই প্রস্তাবিত নামগুলো তাদের আনুষ্ঠানিক সম্মতির ভিত্তিতে ঈদের ছুটি শেষে অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেটে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সিন্ডিকেটে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন হবে। কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের পরবর্তী ধাপগুলো শুরু হবে এবং সময়মতো সবাইকে সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবার সহযোগিতা কামনা করছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এই আলোচনা পর্বে ছয়টি সভা শেষে একটি সংশোধিত গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করা হয়, যা ইতোমধ্যে ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে এবং তা সর্বশেষ সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে ‘ডাকসু ইলেকশন কোড অব কনডাক্ট রিভিউ কমিটি’ গঠন করা হয়, যারা এ পর্যন্ত সাতটি সভা সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন আচরণবিধির খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং সেটিও সর্বশেষ সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি ছাত্রসংগঠন, হল প্রশাসন, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে নয়টি মতবিনিময় সভা করেছে। কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল অংশীজনের সহযোগিতায় এবং সকল পক্ষকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
গত ১৩ মে দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গভীরভাবে শোকাহত। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে প্রশাসন একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে এবং হালনাগাদ তথ্য দেয়া হচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা, মামলার অগ্রগতি তদারকি এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত সভা আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাম্য হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে বলেও জানানো হয়েছে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেটের আকার কমলেও গুণগত পরিবর্তন নাই: ন্যাপ
বাজেটের আকার কমলেও গুণগত খুব বেশি পরিবর্তন নাই। উচ্চ আকাঙ্খা বা লুটপাটের উন্নয়নে বরাদ্দ হ্রাস করায় জনগণের ওপর চাপ কিছুটা হলেও হালকা হবে।
সোমবার (২ জুন) বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন।
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অন্ত অর্ন্তবর্তী কালিন সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে জন-আকাঙ্খা সমন্বয় করার প্রচেষ্টা আখ্যায়িত করে তারা বলেন, “বরাবরের মতো এবারের বাজেটও বিগত সরকারগুলোর ধারাবাহিকতাকে পাশ কাটাতে পারে নাই। বাজেটের আকার আরো ছোট হলে বাস্তবায়ন করা সহজ হতো। প্রকৃতপক্ষে বাজটের আকার কমলেও পুরোনো কাঠামো অক্ষুণ্ন রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বিএনপির বাজেট প্রতিক্রিয়া বুধবার
বাজেটের টাকা আসবে কোথা থেকে, যাবে কোথায়
নেতারা বলেন, “গত ১৬ বছরে প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেলেও দেশের অর্থনীতি কয়েক বছর ধরেই মন্দা সময় পার করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা সাধারণ জনগণ। ডলার সংকট, রিজার্ভের বড় ক্ষয়সহ বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও কঠিন সংকটে ছিল বাংলাদেশ। ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সব বাজেটই ছিল কল্পনার ফানুষ মাত্র।”
তারা বাজেটে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি না করা, চিনি-সয়াবিন তেলের দাম কমানোর প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এর ফলে মধ্যবিত্ত ও সাধারণ জনগনের ওপর চাপ অনেকটা হ্রাস পাবে। তবে, ফ্রিজ, এসির ওপর ভ্যাট বৃদ্ধি করায় অনেকটাই সমস্যা সৃষ্টি করবে। বাজেটে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের পুনর্বাসন ও কল্যাণে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব ও বয়স্ক, বিধবা ভাতা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য। তবে, দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত সুতার ভ্যাট বৃদ্ধি হলে মধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষের গামছা, লুঙ্গিসহ পোশাকের দাম বৃদ্ধি পাবে যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।”
‘ঋণনির্ভর এ বিশাল ঘাটতি বাজেটে জনগণের অর্থনৈতিক বৈষম্য খুব বেশি কমছে না। প্রায় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেটে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল অংকের ঘাটতি রয়েছে যা জিডিপির ৩.৬০ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণে দেশি-বিদেশি ঋণ ও সুদের বোঝা আরো বৃদ্ধি পাবে। পরিচালনা ব্যয় ও সুদ পরিশোধের মত অনুন্নয়ন খাতেই ব্যয় হবে বাজেটের অধিকাংশ অর্থ। তবে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫.৫০ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির গড় হার ৬.৫০ শতাংশ রাখতে পারলে তা হবে বাজেটের বড় চমক যোগ করেন নেতারা।’
তারা বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতি কয়েক বছর ধরে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত ফ্যাসীবাদী শাসনামলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব, মুদ্রার বিনিময় ও সুদের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি, সর্বক্ষেত্রে সুশাসন ও ন্যায়নীতির নির্বাসন এবং সর্বগ্রাসী লুটপাটের কারণে দেশের আর্থিক খাত ধ্বংস হয়ে গেছে। বাজেটে এ বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তোলার আরো ব্যবস্থা থাকার দরকার ছিল। বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করতে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ, দুর্নীতির সব পথ বন্ধ করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ