ঈদযাত্রায় সড়কে ৩ সদস্যকে হারিয়ে পরিবারটির সামনে এখন ‘শুধুই অন্ধকার’
Published: 3rd, June 2025 GMT
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের একটি শয্যায় শুয়ে আছেন মাকসুদা বেগম। তাঁর হাতে স্যালাইন চলছে। পাশের শয্যায় বসে আছেন ছেলের স্ত্রী মরিয়ম। কোলে রয়েছে তাঁর দুই শিশুসন্তান। তখনো মাকসুদা ও মরিয়ম জানেন না যে দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সেই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তাঁদের পরিবারের তিনজন।
আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের করটিয়া বাইপাস এলাকায় মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় মাকসুদার স্বামী আমজাদ মণ্ডল এবং দুই ছেলে রাহাত ও অতুল মণ্ডল ঘটনাস্থলেই মারা যান। আমজাদ মণ্ডলের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার কামারচর গ্রামে। তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় থাকতেন। কনস্ট্রাকশন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
দুর্ঘটনার পর বেলা দুইটার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন। অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মাকসুদার মাথায় ব্যান্ডেজ রয়েছে, তাঁকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। পাশের শয্যায় বসা মরিয়মের আঘাত ততটা গুরুতর নয়। তাঁর পাশে রয়েছে তিন বছরের ছেলে মাহফুজ ও দেড় বছরের মেয়ে রজমনি। সন্তানদের জড়িয়ে ধরে তিনি ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। স্বজনদের কাছে স্বামীর খোঁজ জানতে চাইছিলেন। তাঁরা জানান, তাঁর স্বামী, শ্বশুর ও দেবর নিচতলায় ভর্তি আছেন এবং সুস্থ আছেন।
দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে দুমড়ে–মুচড়ে যায় মাইক্রোবাসট। আজ মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের করটিয়া বাইপাস এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
৩৫ মণের ‘কালো মানিক’ নিয়ে খালেদা জিয়ার বাড়ির পথে কৃষক সোহাগ
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে ৩৫ মণ ওজনের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় নিয়ে ঢাকার গুলশানের পথে রওনা হয়েছেন কৃষক সোহাগ মৃধা। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে তিনটি মিনি ট্রাকে ৫০ জন বিএনপির কর্মী নিয়ে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রাম থেকে রওনা হন তিনি।
সোহাগ মৃধার সঙ্গে যাওয়া ৫০ জনের সবার গায়ে রয়েছে সাদা রঙের জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির লোগো সম্বলিত গেঞ্জি। সঙ্গে রয়েছে অভিজ্ঞ ব্যান্ড দল। তাদের ঢাকের বাদ্য, বাঁশির সুর এবং কাঁশার ঝনঝনিতে মুখরিত হয়েছে পুরো এলাকা। যে ট্রাকগুলোতে তারা গেছেন তার প্রত্যেকটি সাজানো হয়েছে তাজা ধানের শীষ দিয়ে। ট্রাকগুলোর সামনে রয়েছে জাতীয় ও দলীয় পতাকাসহ ঈদ উপহার সম্বলিত বিএনপির ব্যানার।
আরো পড়ুন:
আমিরাতে শহীদ জিয়ার শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত
রাজনীতিকদের উদ্দেশে অ্যাটর্নি জেনারেল
আ.লীগের পথে হাঁটলে ইতিহাস আপনাদেরও ক্ষমা করবে না
ছয় বছর আগে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে একটি গাভী কিনেছিলেন সোহাগ মৃধা। কয়েক দিনের মধ্যেই গাভীটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটি একটু বড় হলেই তিনি গাভীটি বিক্রি করে দেন। এরপর থেকেই বাছুরটিকে লালন পালন শুরু করেন সোহাগ মৃধা। ছয় বছর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো অতিযত্নে লালন করায় ষাঁড়টির ওজন হয়েছে ১ হাজার ৪০০ কেজি বা ৩৫ মণ।
কালো হওয়ায় ভালোবেসে দৃষ্টিনন্দন ষাঁড়টির নাম সোহাগ মৃধা রাখেন ‘কালো মানিক’। ষাঁড়টি বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দেওয়ার আশা করেন তিনি। তবে, ষাঁড়টি বেগম খালেদা জিয়া গ্রহণ করবেন কিনা সেটা নিয়ে অনিশ্চিত সোহাগ।
ইচ্ছা অনুযায়ী আজ সকালে বেগম খালেদা জিয়ার ঢাকার গুলশানের বাসভবন ফিরোজার উদ্দেশ্যে রওনা দেন সোহাগ ও তার দলবল।
বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে ষাঁড় নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে সোহাগের বাড়িদে আসেন পার্শ্ববর্তী গ্রাম শ্রীনগরের রবিউল হোসেন। তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার জন্য গরু উপহার হিসেবে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে এখানে এসেছি। সোহাগ মৃধার জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন দেখে মনটা ভরে গেছে।”
সুবিদখালী গ্রামের আতিক মিয়া বলেন, “সোহাগ মৃধা অনেক দরিদ্র কৃষক। আসলে বড় মন না থাকলে এভাবে বড় ত্যাগ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ঢাক ঢোল এবং নাচ গানে মেতে ষাঁড়টি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমা আশা করছি, বেগম খালেদা জিয়া ষাঁড়টি গ্রহণ করবেন।”
কৃষক সোহাগ মৃধা বলেন, “২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ নেত্রীকে এক কৃষক একটি গরু উপহার দিয়েছিলেন। তখনই পন করি আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও আমি আমার ষাঁড়টি উপহার দেব। এই ষাঁড়টি নিজের সন্তানের মতো যত্ন করে লালন পালন করেছি। দেশীয় খাবার খাইয়ে ষাঁড়টি বড় করেছি। নেত্রীর জন্য ষাঁড়টি নিয়ে রওনা দিতে পেরে আমি শুকরিয়া আদায় করছি। তিনি এটি গ্রহণ করুক বা না করুক আমি ষাড়টি নিয়ে তার বাসভবন পর্যন্ত যাব।”
আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বলেন, “সোহাগ মৃধা গরিব মানুষ। তিনি ষাঁড়টি বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দেওয়ার জন্য পন করেছিলেন। আমরা ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছি।”
মির্জাগঞ্জ প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন মাসুদ বলেন, “সবুজ ঘাস ও খড়কুটো খাইয়ে ষাঁড়টিকে প্রস্তুত করেছেন সোহাগ মৃধা। ‘কালো মানিক’ জেলার সবচেয়ে বড় গরু। ষাঁড়টি লালন পালনে তাকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ