আগামীকাল ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ফিফা প্রীতি ম্যাচ। সবার আগ্রহের কেন্দ্রে এখন দুজন—হামজা চৌধুরী ও ফাহামিদুল ইসলাম। দুই প্রবাসী ফুটবলারকে ঘিরেই যেন জমে উঠেছে ম্যাচ-পূর্ব আলোচনা।

আজ বাফুফে ভবনে স্প্যানিশ কোচের সংবাদ সম্মেলনে হামজা-ফাহামিদুলকে ঘিরে ছিল স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি কৌতূহল। হামজা-ফাহামিদুল খেলবেন কি না, সরাসরি কিছু বলেননি কোচ, তবে আশার আলোটাও নিভিয়ে দেননি।

আরও পড়ুনকোহলিদের সর্বনাশ করতেই বেঙ্গালুরুর সমর্থক শেবাগ৩৩ মিনিট আগে

হামজা প্রসঙ্গে কোচ সংক্ষেপে বলেন, ‘সে অ্যাভেইলেবল।’ অর্থাৎ দলে রাখার মতো অবস্থায় আছেন তিনি। আর ফাহামিদুলের ব্যাপারে কাবরেরা কিছুটা খোলামেলা হয়ে বলেন, ‘কিছু ম্যাচ টাইম আমি তাকে দিতে চাই। আপনারা কাল সেটা দেখতে পারবেন।’

অনুশীলনে ভুটানের ফুটবলাররা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘প্লাস্টিক দূষণ রোধ করার এখনই সময়’

‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়’-এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে বাংলাদেশ সরকারের এই স্লোগান যেন প্লাস্টিক দূষণের বাস্তবতা। প্রতিদিন হাজার হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্যে সয়লাব হয়ে পড়ছে শহর-বন্দর, নদী-নালা ও সমুদ্র উপকূল। পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাড়ছে মানুষের দৈনন্দিন দুর্ভোগ।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ৮ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য। বাকি প্রায় ৫ লাখ টন বর্জ্য থেকে যাচ্ছে প্রকৃতিতে, যা শত বছরেও নষ্ট হয় না। এই দীর্ঘস্থায়ী দূষণ মাটি, পানি ও বায়ুর সঙ্গে মিশে ইকোসিস্টেম ধ্বংস করছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

প্লাস্টিক বর্জ্যের বড় অংশজুড়ে রয়েছে একবার ব্যবহারযোগ্য পানির বোতল, পলিথিন, প্রসাধনী ও ঘরোয়া সামগ্রী।এগুলো নর্দমা ও ল্যান্ডফিলে গিয়ে বর্ষার পানিতে বাধা সৃষ্টি করে শহরে জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।বর্ষা মৌসুমে ঢাকা শহরে বৃষ্টি হলেই যে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় সেটা এসব প্লাস্টিকের কারণেই হয় বলে মনে করেন অনেকে।

আরো পড়ুন:

কারখানায় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে দাম দিতে হবে : উপদেষ্টা  

কিশোরগঞ্জে পানি উঠছে না নলকূপে, খাবার পানির তীব্র সংকট

দেশের প্রধান তিন নদী-পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় প্রতিদিন পড়ছে প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক ও পলিথিন। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) জানায়, দেশের নদীগুলোর পানিতে প্রতিদিন ১৫ হাজার ৩৪৫ টন প্লাস্টিক গিয়ে পড়ে, যা সরাসরি বঙ্গোপসাগরে জমা হচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রের তলদেশে প্লাস্টিকের স্তর তৈরি হচ্ছে, মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী, ধ্বংস হচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণিবৈচিত্র্য।

ঢাকায় প্লাস্টিক দূষণ সবচেয়ে ভয়াবহ। দেশের মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের ৩০ শতাংশের বেশি উৎপন্ন হয় রাজধানীতে। প্রতিদিন গড়ে ৬৮১ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার ৮০ শতাংশই একবার ব্যবহারযোগ্য পণ্য। মাথাপিছু বছরে যেখানে গড়ে ৯ কেজি বর্জ্য উৎপন্ন হয়, ঢাকায় তা দ্বিগুণ-১৮ কেজি। নগর ব্যবস্থাপনার জন্য একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্লাস্টিক ব্যবহারকারী শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশের প্লাস্টিক ব্যবহার বেড়েছে তিনগুণের বেশি। ২০১৫ সালের গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের শহরগুলোতে প্রতিদিনের বর্জ্য ৫০ হাজার টনে পৌঁছাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিনের প্যাকেটসহ সিঙ্গেল ইউজ প্রোডাক্টের কারণে শহর ব্যবস্থাপনায় ধস নেমেছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য নর্দমা ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে। অপরিকল্পিত নগরায়নে কংক্রিটের নিচে মাটি হারিয়ে ফেলায় পানির প্রাকৃতিক শোষণও হচ্ছে না। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যে আটকে থাকা ড্রেন ও খালে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দরিদ্র ও বস্তিবাসী মানুষ।

রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “পরিবেশ দূষণের জন্য প্লাস্টিক ও পলিথিন অন্যতম দায়ী।বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, প্যাকেট ও পলিথিন সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ। গত তিন মাসে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১০৮ কিলোমিটর খাল পরিষ্কার করা হয়েছে যার অধিকাংশই প্লাস্টিকে ভরপুর ছিল। সোর্স থেকে প্লাস্টিক না কমালে শুধু পরিষ্কার করে কোন লাভ হচ্ছে না।”

এই বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ দূষণ রোধ করতে সব সরকারি অফিসে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন।কিন্তু সার্বিকভাবে প্লাস্টিক দূষণের ফলে পরিবেশকে বিপর্যয় থেকে মুক্ত করতে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি টেকসই, বাস্তবসম্মত এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। পাশাপাশি জনসচেতনতা ও সরকারি নজরদারি বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ